Saturday, July 26
Shadow

প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গঠন করবেন কিভাবে?

একটি কোম্পানি গঠন করার পূর্বে সর্বাগ্রে জেনে নিন কোম্পানি কয় প্রকার ও কি কি?

বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের আলোকে বিভিন্ন ধরনের কোম্পানি হতে পারে। কিন্তু প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ছাড়া পুঁজিবাজারের সাথে অন্য ধরনের কোম্পানির তেমন একটা সম্পর্ক নেই। যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মস পরিদপ্তর (আরজেএসসি) প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি ও পাবলিক লিমিটেড নিবন্ধন দিয়ে থাকে। তাই প্রকারভেদ বলতে সাধারণ অর্থে ২ প্রকারই বুঝায়।

(১) প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি এবং

(২) পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি।

পার্থক্য:

প্রাইভেট লিমিটেড এবং পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। কোম্পানির গঠন, পরিচালনা, শেয়ার বণ্টন ইত্যাদির দিক থেকে উভয় প্রকারের লিমিটেড কোম্পানির মধ্যে বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান। যেমন;

(ক). শেয়ারহোল্ডার সংখ্যা: আইনের বিধান অনুযায়ী প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে নূন্যতম শেয়ারহোল্ডারের সংখ্যা ২জন, এবং সর্বোচ্চ শেয়ারহোল্ডার হতে পারবে ৫০ জন। অর্থাৎ ২ থেকে ৫০ জনের মধ্যে যেকোনো সংখ্যক ব্যক্তি একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গঠন করতে পারেন।                                              রূপান্তরিত করা যায়। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে নূন্যতম শেয়ারহোল্ডারের সংখ্যা হতে হয় ৭ জন এবং সর্বোচ্চ সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। অর্থাৎ ৭ থেকে অগণিত ব্যক্তি একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি গঠন করতে পারে। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে বিশেষ আইনগত প্রক্রিয়া সম্পাদন করে এবং বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (BSEC) অনুমোদন সাপেক্ষে কোম্পানি অনুমোদিত সংখ্যক শেয়ার ইস্যু করতে পারে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারী হিসেবে আপনিও স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে উক্ত কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হতে পারেন, একইভাবে যে কোন সময় উক্ত শেয়ার বিক্রয় করতে পারেন।

(খ) শেয়ার হস্তান্তর : প্রাইভেট লিমিটেড ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তর এবং ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পার্থক্যটা ব্যাপক। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে আইনের বিধি নিষেধ সাপেক্ষে এবং কোম্পানির সংঘ স্মারক অনুযায়ী শেয়ার বা উদ্যোক্তার অংশ হস্তান্তর করা যায়। সাধারণত একজন শেয়ারহোল্ডার তার শেয়ার হস্তান্তর বা বিক্রি করেত চাইলে বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের মাঝেই করতে পারেন, তবে বোর্ড অব ডিরেক্টরের (পরিচালনা পর্ষদ)অনুমোদন সাপেক্ষে অন্যত্র বিক্রয় বা হস্তান্তর করা যায়। অন্যদিকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে এসব বাধা-নিষেধ প্রায় পুরোপুরি শিথিল। একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী যেকোনো সময় শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারেন। স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির পরিচালকগণের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি নিতে হয়।

(গ) বন্ড ও ডিবেঞ্চার বিক্রি: বন্ড হচ্ছে একধরনের ঋণ, যা ইস্যু করে কোম্পানি অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। কিন্তু প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির এই ধরণের ঋণপত্র বা ডিবেঞ্চার ইস্যু করে অর্থ সংগ্রহের সুযোগ নেই। আইনের বিধি বিধান পরিপালন সাপেক্ষে শুধুমাত্র পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি জনসাধারণের কাছে শেয়ার ও বন্ড বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে।

প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গঠনের প্রক্রিয়া:

আগেই বলা হয়েছে নূন্যতম ২ জন এবং অনধিক ৫০ জন মিলে একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গঠন করতে পারেন। প্রশ্ন হচ্ছে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা? উত্তর হচ্ছে; কিছু আইনগত সুবিধা একচেটিয়া ভোগ করার জন্য প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গঠন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ব্যবসার আকার যখন বৃদ্ধি পায় তখন আইনগত নিরাপত্তাও প্রাধান্য পায়।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
(১) কোম্পানির নাম (নামের ক্লিয়ারেন্স প্রাপ্ত হওয়া আবশ্যক)
(২) সংঘ বিধি ও সংঘ স্মারক।
(৩) শেয়ারহোল্ডারদের বিবরণী (যদি শেয়ারহোল্ডার একজন বাংলাদেশী হয় তবে জাতীয় পরিচয়পত্র)
(৪) পরিচালক বিবরণী (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর সহ)
(৫) নিবন্ধিত ঠিকানা
(৬) স্বাক্ষরিত IX ফরম
(৭) বিদেশী শেয়ারহোল্ডার এবং পরিচালক পাসপোর্ট অনুলিপি।

ধাপ-১: নামের ছাড়পত্র:

বাংলাদেশ একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে, আপনার প্রথম পদক্ষেপ প্রস্তাবিত কোম্পানির নাম জন্য একটি নাম ক্লিয়ারেন্স প্রাপ্ত হওয়া। http://www.roc.gov.bd ভিজিট করে নিজের নামে একটি একাউন্ট করে নাম ক্লিয়ারেন্স জন্য আবেদন করতে পারেন। নাম ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করার পর, আপনি একটি ব্যাংক পেমেন্ট স্লিপ পাবেন এবং আপনাকে নির্ধারিত ব্যাংকে ৬০০ টাকা এবং ১৫% ভ্যাট তথা ৯০ টাকা জমা দিতে হবে। পেমেন্ট করার পরে, আপনাকে পুনরায় ওয়েবসাইটে আপনার অ্যাকাউন্টে লগ ইন করলে নামের একটি ক্লিয়ারেন্স সনদ পাবেন।

নেইম ক্লিয়ারেন্সের জন্য RJSC এর গাইড লাইন অনুসরণ করতে পারেন। 

অনুমোদিত নামটি ক্লিয়ারেন্সের তারিখ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে টাইম এক্সটেনশন অনুরোধ দাখিল করে নামটির মেয়াদকাল বর্ধিত করতে পারেন।

ধাপ ২: কোম্পানি নিবন্ধন

কোম্পানি নিবন্ধন করার জন্য RJSC এর ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দিতে হয়। এছাড়াও আপনাকে ফরম IX এবং কোম্পানির শেয়ার-হোল্ডিং পাতা (স্বাক্ষরসহ) আপলোড করতে হবে। আপনি সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করার পরে, স্ট্যাম্প ডিউটি সহ রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধ করার জন্য আপনাকে একটি ব্যাংক পেমেন্ট স্লিপ পাবেন।

ব্যাংকের পেমেন্ট করার পরে, আপাতত দৃষ্টিতে আপনার কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। RJSC এর কর্মকর্তারা আপনার প্রদত্ত নথি ও তথ্য পরীক্ষা করবে। তারা সন্তুষ্ট হলে, উক্ত নথি ডিজিটাল-ভাবে স্বাক্ষরিত হবে এবং নিম্নোক্ত ডকুমেন্ট আপনার ই-মেইলে পাঠানো হবে।
১) সার্টিফিকেট অফ ইন-কর্পোরেশন;
২) MOA এবং AOA; এবং
৩) ফরম XII

এসব ডকুমেন্ট প্রাপ্ত হওয়ার অর্থ হচ্ছে, কোম্পানিটি নিবন্ধিত হয়েছে। কোম্পানি নিবন্ধনের পর আরও কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়ে। এনবিআর এর নির্দেশনা অনুযায়ী ট্যাক্সের বিষয়টি যথাযথভাবে পরিপালন করতে হয়। একটি ট্রেড লাইসেন্সের প্রয়োজন রয়েছে, সর্ব ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন। আবার কোম্পানির নাম বা লগো ট্রেডমার্কও রেজিস্ট্রেশন করে নিতে পারেন সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য। তবে কোম্পানি কর্তৃক উৎপাদিত পণ্য বা প্রদত্ত সেবার নাম, লগো ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করে নেওয়া জরুরী অন্যথায় উহা নকল হবার সম্ভাবনা থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *