Monday, July 14
Shadow

তীব্র আবাসন সংকটে জবির বেশীরভাগ শিক্ষার্থী

রোকুনুজ্জামান গোলাম রাব্বী, জবি : ঢাকার মতো একটি জনবহুল শহরের জীবন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খায় দেশের অধিকাংশ মানুষ। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনার পাশাপাশি এই ব্যয় মেটাতে হতাশা ও দুশ্চিন্তায় নিমজ্জিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী। কারণ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের জন্য কোনো হল নেই এবং মেয়েদের জন্য আছে মাত্র একটি হল যা শিক্ষার্থী সংখ্যার তুলনায় অতি নগণ্য। 

১৯৭৫ সালে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালু করে এবং ২০০৫ সালের ২০ই অক্টোবর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৫” পাশের মাধ্যমে জগন্নাথ কলেজ একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে অনুমোদিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবছর উচ্চশিক্ষা ও চাকরির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য সাধারণ ধারাবাহিক অর্জনের কৃতিত্ব রেখে যাচ্ছে দেশের অন্যতম সেরা এই প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বাংলাদেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় এখনও পর্যন্ত সেরকম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। এমনকি ছেলে শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো হলও নেই। যার ফলে পুরান ঢাকার মতো একটি জনবহুল ও ব্যয়বহুল শহরে অর্থ সংকটে নিম্ম মানের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংকটের বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর পুরান ঢাকায় বুড়িগঙ্গার তীরে পাটুয়াটুলীর ওয়াইজঘাট এলাকার ৮ ও ৯ নম্বর জিএল পার্থ লেনে ৮ দশমিক ৮৮৯ কাঠা জায়গায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ) তিব্বত হলটি বিগত স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের দখলে ছিলো। ২০০১ সালে হাজী সেলিম হলটির অবকাঠামো পরিবর্তন করে তার স্ত্রীর নামে ‘গুলশান আরা সিটি মার্কেট’ নামক বহুতল বিপণী বিতান তৈরি করেন। হলটি উদ্ধারে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময় আন্দোলনে সরকারের উচ্চমহলের আশ্বাসের পরেও বেদখলেই থেকে যায়। 

২০০৯ সালে ঢাকা জেলা প্রশাসনের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ হল উদ্ধারের দাবি জানায়। প্রায় ১৪ হাজার বর্গফুটের যে খালি জায়গাটি (তিব্বত হল) অবৈধ দখলদার কর্তৃক ব্যবহৃত হচ্ছে প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদেরকে উচ্ছেদ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা প্রতিষ্ঠা পূর্বক হল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের ডামাডোলে জগন্নাথের হলগুলো আজও বেদখলে।

এছাড়াও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য “নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী” এর নামে ১৬ তলাবিশিষ্ট ১৬৩টি কক্ষের একটি আবাসিক হল রয়েছে। যেখানে প্রায় ১ হাজার ২০০ ছাত্রীকে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়। যা জবির প্রায় ৮০০০ এর মতো নারী শিক্ষার্থীর বিপরীতে অতি নগণ্য। ছেলেদের জন্য আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একটি হলের ব্যবস্থা করা হলেও সেখানে খুবই অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। যার ফলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই এখনও আবাসন সংকটে ভুগছেন। 

আবাসন সংকটের বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা বলেন, “আমার বাসা সৈয়দপুরে। শিক্ষার উদ্দেশ্যে এখানে এসেছি। একজন নারী শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকার সুযোগ পেলে আমরা অনেকটা নিরাপদ বোধ করতাম। এছাড়াও অল্প খরচে পুরান ঢাকায় থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে গেলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জীবন যাপন করতে হয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনার চাপের পাশাপাশি আবাসনের বিষয়ে মানসিক দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। তাই সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা চাই স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অস্থায়ী হলের ব্যবস্থা করে হলেও আমাদের আবাসন নিশ্চিত করুক।”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায় বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনটি হল রয়েছে। সেগুলো হলো ওয়ারীতে অবস্থিত শহীদ নজরুল ইসলাম হল, বংশালে অবস্থিত ড. হাবিবুর রহমান হল এবং সূত্রাপুরে অবস্থিত বাণী ভবন। এসব হলের জায়গায় নির্মিত হয়নি নতুন কোনো স্থাপনা। বহু বছর আগে নির্মিত জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনই এখন পর্যন্ত সেখানে বিদ্যমান। হল নির্মাণের লক্ষ্যে হাবিবুর রহমান হল এবং বাণী ভবনে ইতোমধ্যে প্রাথমিক অ্যাসেসমেন্ট ও মূল্যায়ন সম্পন্ন করেছে সেনাবাহিনী। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (আরডিপিপি) সঙ্গে এ দুটি হলের নির্মাণ কাজ করবে সেনাবাহিনী। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ২৮ মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশোধিত দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দ্রুত শেষ হবে বলে আশাবাদী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *