
সৈয়দ মুজিবুর রহমান দুলাল, লাকসামঃ অন্তবর্তীকালীন সরকারের নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ডক্টর বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, এ দেশটা আমাদের সবার। এদেশকে এগিয়ে নিতে হলে প্রত্যয়ী ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। বিগত দিনে আমাদের জাতীয় সংসদে নানা বিষয়ে বিতর্ক হতো। সেখানে যুক্তিসঙ্গত তর্ক-বিতর্কের বদলে চলতো উত্তপ্ত ও অশালীন বাক্য বিনিময়। যা ছিলো সভ্যতার পরিপন্থী। সহিংসতা, স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন ও আশালীন বাক্য বিনিময়ের যেনো নতুন এক পাঠশালা গড়ে ওঠেছিলো। আগামীদিনে রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে সংস্কারের মাধ্যমে এদেশকে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত ও অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধশালী দেশে রূপান্তরিত করতে হবে। সেজন্য আত্মপ্রত্যয়ী এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) কুমিল্লার লাকসামে নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী বিতর্ক উৎসব-২০২৫’র চূড়ান্ত পর্বে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এক বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ওইদিন বিকেল ৫টায় নবাব ফয়জুন্নেছা জমিদার বাড়ি জাদুঘর (জাতীয় জাদুঘরের শাখা) প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত লাকসাম উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাউছার হামিদ’র সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন, অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (আইসিটি) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আগামীদিনে দেশ পরিচালনা এবং দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তোমরা প্রস্তুত হও। তোমরা শিক্ষার্থীরাই এদেশকে আলোর পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, তোমরাই হবে এদেশের আগামীদিনের কর্ণধার। সুতরাং; একজন আত্মপ্রত্যয়ী, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, পরিশুদ্ধ ও আলোকিত মানুষ হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে হবে। সহিংসতা, স্বেচ্ছাচারিতা রোধে গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে তোমাদের যথাযথ ভূমিকা পালন ও আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (আইসিটি) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী বিতর্ক উৎসবে বিতার্কিকগণ বিষয়বস্তুর পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি-তর্ক, তথ্য-উপাত্ত, বচনভঙ্গীর মাধ্যমে পুরো অনুষ্ঠানকে অত্যন্ত প্রাণবন্ত করে তুলেছে। এক্ষেত্রে আমাদের জন্য শিক্ষণীয় অনেক বার্তা রয়েছে।
তিনি বলেন, একটি উন্নত জাতি গঠনে রাষ্ট্রের ভূমিকা অপরিসীম। সেজন্য রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কার চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আমাদের বেশী নজর দিতে হবে। গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা যেনো কোনোভাবেই বিপথগামী না হয়, সেজন্য অভিভাবকদের সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজনীন সুলতানা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজিয়া বিনতে আলম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আহমেদ উল্লাহ সবুজ, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. শওকত আলী, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা উপন্যাস চন্দ্র দাসসহ উপজেলা প্রশাসন ও পৌর প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মী, বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ।
গত ১৯ মে নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী বিতর্ক উৎসব-২০২৫’র প্রথমপর্ব এবং ২০মে কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৬টি দল অংশগ্রহণ করে। বিতর্কের বিষয়বস্তু ছিলো- ‘বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে নবাব ফয়জুন্নেছার চৌধুরাণীর অবদান যথাযথভাবে মূল্যায়ন হয়নি’।
বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্তপর্বে আল আমিন ইনস্টিটিউট (পক্ষদল) চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। রানার্সআপ হয়েছেন এ মালেক ইন্সটিটিউশান (বিপক্ষ দল) সেরা বিতার্কিক নির্বাচিত হয়েছেন পক্ষদলের বিতার্কিক ও দলনেতা নাফিসা নোমান নাবা।
অনুষ্ঠানের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাউছার হামিদ বলেন, এ বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্ম নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর জীবনাদর্শ ও তাঁর জনহিতকর কর্মের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানার সুযোগ তৈরি হয়েছে।