Friday, June 6
Shadow

ঈদ সালামি জমা রাখার জন্য শিশুদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট: আধুনিক প্যারেন্টিংয়ের নতুন ধারা আমিরাতে

নিজস্ব প্রতিবেদক
ঈদের আনন্দে যখন পুরো সংযুক্ত আরব আমিরাতজুড়ে পরিবারগুলো একত্রিত হচ্ছে, তখন অনেক বাবা-মা ঐতিহ্যবাহী ঈদিয়া প্রথাকে আধুনিক রূপে গ্রহণ করছেন। সন্তানদের দেওয়া ঈদের উপহার—বিশেষ করে টাকার ঈদিয়া—এখন জমা রাখা হচ্ছে তাদের নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।

ঈদিয়া হলো একটি প্রিয় সাংস্কৃতিক রীতি, যেখানে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময় আত্মীয়স্বজনরা শিশুদের নগদ অর্থ উপহার হিসেবে দেন। এই প্রথা শিশুদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আনন্দের উৎস হলেও, বর্তমান যুগে অনেক বাবা-মা এটিকে অর্থনৈতিক শিক্ষা দেওয়ার একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন।

দুবাইয়ের বাসিন্দা আমনা আবদুলআজিজ আল নুয়াইমি, দুই বছর বয়সী কন্যাশিশু আইশা-র মা, খালিজ টাইমসকে বলেন, ঈদের উপহার পেয়ে তিনি দ্রুতই তা সন্তানের নামে ব্যাংকে জমা রাখেন।
“ঈদসহ অন্যান্য বিশেষ দিনে পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের কাছ থেকে আইশা বছরে প্রায় ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ দিরহাম পায়,” বলেন আমনা। “আমি পুরো টাকাটাই তার জন্য জমা রাখি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সে যতদিন না নিজে বুঝে খরচ করতে পারে, ততদিন এই টাকা শুধুই তার নামে সঞ্চয় করব।”

আমনা আরও বলেন, সন্তানের অর্থ নিজস্ব হিসাবেই রাখা জরুরি। “সন্তানদের টাকার সঙ্গে নিজের টাকা মিশিয়ে ফেললে কোনটা তার আর কোনটা খরচ হয়ে গেছে, সেটা মনে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে,” বলেন তিনি।

ফাতমা আল তেনাইজি, তিন সন্তানের মা, একই মত পোষণ করেন। তিনি তাঁর সন্তানদের—১০ বছর বয়সী মুহাম্মদ, ৬ বছরের মীরা, এবং ২ বছরের ঘানেম—জন্য আলাদা আলাদা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। প্রতিমাসে তিনি প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে সঞ্চয় ও ঈদিয়ার টাকা জমা দেন।

“প্রতি মাসে আমি প্রত্যেক সন্তানের অ্যাকাউন্টে ১০০ দিরহাম করে জমা দিই। ঈদের সময় তারা সাধারণত ৩০০ থেকে ৪০০ দিরহাম পায়। আমি তাদেরকে ওই টাকার ২৫ শতাংশ খরচ করতে দিই, আর বাকি টাকা সরাসরি সঞ্চয়ে চলে যায়,” জানান ফাতমা।

উম হাসের, যিনি তাঁর সন্তান হাসের (৭) এবং আলমাইথ (৫)-এর জন্য শুরু থেকেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে রেখেছেন, বলেন, “শিশুদের উপহার ও টাকা জমা রাখার জন্য একটি নিজস্ব জায়গা থাকা উচিত।”

তিনি বলেন, ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে আত্মীয়স্বজন যেমন—চাচা-চাচি, খালা-খালু, দাদা-দাদী এমনকি প্রতিবেশীরাও উপহার হিসেবে নগদ অর্থ দিয়ে থাকেন।
“একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আমাদেরকে সঠিকভাবে ট্র্যাক রাখতে সাহায্য করে, বাচ্চারা কত টাকা পেয়েছে। সব কিছু থাকে সুসংগঠিত ও স্বচ্ছভাবে। আমরা ঠিক বুঝতে পারি, কত টাকা এসেছে এবং তার কতটা খরচ, কতটা সঞ্চয় করা হচ্ছে,” বলেন উম হাসের।

ঈদের ঠিক পরেই তিনি পুরো বিষয়টি নথিভুক্ত করেন। “আমি সাধারণত সব টাকা একত্র করি, মোট টাকার হিসাব করি, তারপর সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করি কতটা ব্যাংকে জমা রাখব আর কতটা সে ছোটখাটো আনন্দের জন্য খরচ করতে পারবে,” জানান তিনি।
“আমি কখনোই চাই না ঈদের আনন্দ তাদের থেকে কেড়ে নিতে, তাই সবসময় ওদের একটু হলেও খরচ করার সুযোগ দিই—কোনো পছন্দের জিনিস কিনে নেওয়ার জন্য।”

এই অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অনেক বাবা-মা এখন শুধু সন্তানদের অর্থ সম্পদ সুরক্ষিত রাখছেন না, বরং আর্থিক সচেতনতা গড়ে তোলার পাঠও দিচ্ছেন।
তাদের বিশ্বাস, ছোট ছোট উদ্যোগ যেমন ঈদিয়ার টাকা সঞ্চয়—ভবিষ্যতের জন্য দায়িত্বশীল অর্থনৈতিক চিন্তার বীজ বপন করতে পারে।

সূত্র: খালিজ টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *