Friday, May 30
Shadow

আসাম মুখ্যমন্ত্রীর হুমকিঃ বাংলাদেশেরও আছে ‘দুটি চিকেন নেক’

ভারতের ‘চিকেন নেক’ করিডোর নিয়ে মন্তব্যের জবাবে এবার বাংলাদেশকে হুঁশিয়ারি দিলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্বশর্মা। তিনি দাবি করেছেন, বাংলাদেশেরও দুটি ভৌগোলিকভাবে সংকীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা রয়েছে, যেগুলো ভারতের মতোই স্পর্শকাতর।

রোববার নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে হিমন্ত বিশ্বশর্মা বাংলাদেশের একটি মানচিত্র শেয়ার করেন, যেখানে রংপুর বিভাগকে মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা করে দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম করিডোর নামক আরও একটি অঞ্চল আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়। এই মানচিত্র প্রকাশ করে তিনি বলেন, “ভারতের চিকেন নেক নিয়ে যারা স্বভাবসিদ্ধভাবে হুমকি দেয়, তাদের জানা উচিত—বাংলাদেশেরও দুটি ‘চিকেন নেক’ রয়েছে। যা আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।”

ভারতের জাতীয় প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর প্রকাশ করে। প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “Assam’s Himanta Sharma Shares Bangladesh’s Map With ‘Two Chicken Necks’.”

বিশ্বশর্মা বলেন, বাংলাদেশের প্রথম ‘চিকেন নেক’ হলো ‘নর্থ বাংলাদেশ করিডোর’, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ কিলোমিটার। এটি দক্ষিণ দিনাজপুর ও ভারতের মেঘালয়ের গারো পাহাড়ের মধ্যবর্তী এলাকা। তিনি দাবি করেন, “এই করিডোরে কোনো বিঘ্ন ঘটলে পুরো রংপুর বিভাগ বাংলাদেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।”

দ্বিতীয় করিডোর হিসেবে তিনি চিহ্নিত করেছেন ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘চট্টগ্রাম করিডোর’। এটি ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরা থেকে শুরু হয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এ সম্পর্কে বিশ্বশর্মা বলেন, “এই করিডোরটি আকারে ভারতের শিলিগুড়ি করিডোরের চেয়েও ছোট। এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রাজধানী চট্টগ্রাম এবং রাজনৈতিক রাজধানী ঢাকার মধ্যে একমাত্র সংযোগ সেতু।”

তিনি বলেন, “আমি কেবল ভৌগোলিক বাস্তবতা তুলে ধরছি, যা অনেকে ভুলে যেতে পারেন। ভারতের মতো বাংলাদেশও দুটি সংকীর্ণ করিডোর দ্বারা ঘেরা।”

হিমান্ত বিশ্বশর্মার এই মন্তব্যের পেছনে রয়েছে গত মার্চে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এক বক্তব্য। চীন সফরের সময় তিনি বলেছিলেন, “ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো স্থলবেষ্টিত। আর এ অঞ্চলের সমুদ্রপথে একমাত্র প্রবেশদ্বার হচ্ছে বাংলাদেশ। এতে বাংলাদেশের ভূকৌশলগত গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে।”

এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ১ এপ্রিল হিমন্ত বিশ্বশর্মা এক্সে লেখেন, “ভারতের চিকেন নেক করিডোরকে ঘিরে একটি প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবে ভারতের অভ্যন্তরেই কিছু বিপজ্জনক উপাদান এই করিডোর বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা করেছিল, যাতে উত্তর-পূর্বাঞ্চল মূল ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।”

তিনি আরও বলেন, “এই করিডোরের নিচে ও চারপাশে আরও শক্তিশালী রেল এবং সড়ক যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি বিকল্প পথ অনুসন্ধানেও অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি, যাতে প্রয়োজন হলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল অন্যভাবে সংযুক্ত থাকতে পারে।”

হিমান্ত বিশ্বশর্মার এই মন্তব্য দক্ষিণ এশিয়ায় ভূকৌশলগত উত্তেজনার নতুন ইঙ্গিত দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উভয় দেশের মধ্যে ভূরাজনৈতিক মন্তব্য ও পাল্টা মন্তব্য পারস্পরিক সন্দেহ আরও বাড়াতে পারে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *