
ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্রঃ
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই তরুণ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। তারা হচ্ছেন সারাহ মিলগ্রিম ও ইয়ারন লিশিনস্কি। বুধবার সন্ধ্যায় ক্যাপিটাল জিউইশ মিউজিয়ামের সামনে তারা হামলার শিকার হন। তারা মিউজিয়ামে অনুষ্ঠিত এক কূটনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, হামলাকারী আটক হওয়ার সময় “ফ্রি প্যালেস্টাইন” বলে চিৎকার করছিল।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিহতরা ছিলেন দূতাবাসের তরুণ কর্মী এবং শিগগিরই বিয়ে করার পরিকল্পনা করেছিলেন। ইয়ারন লিশিনস্কি তার প্রেমিকা সারাহ মিলগ্রিমকে প্রস্তাব দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যেই আংটি কিনেছিলেন এবং তারা খুব শিগগিরই জেরুজালেমে ভ্রমণে যাওয়ার কথা ছিল।
ইয়ারন লিশিনস্কি
ইসরায়েলি দূতাবাসে গবেষণা সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন ইয়ারন লিশিনস্কি। তার দায়িত্বের মধ্যে ছিল মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং দূতাবাসের রাজনৈতিক বিভাগকে তথ্য সরবরাহ।
ইসরায়েলের অভিজ্ঞ কূটনীতিক রন প্রসোর জানান, লিশিনস্কি ছিলেন একজন খ্রিস্টান, যিনি ইসরায়েলকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতেন। তিনি ইসরায়েলের সেনাবাহিনীতে স্বেচ্ছায় যোগ দিয়েছিলেন এবং দেশটির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
জার্মান-ইসরায়েলি সোসাইটি লিশিনস্কির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে জানায়, তিনি ছিলেন ইসরায়েলি-জার্মান যুব ফোরামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ২০২২ সাল থেকে ওয়াশিংটনের ইসরায়েলি দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন।
ইন্টারফেইথ ডায়ালগ ও আরব বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় কর্মী। আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে আরব দেশের সম্পর্ক দৃঢ় করার পক্ষে তিনি জোরালো মত প্রকাশ করতেন।
সারাহ মিলগ্রিম
সারাহ মিলগ্রিম ছিলেন ইসরায়েলি দূতাবাসের পাবলিক ডিপ্লোমেসি বিভাগের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মী। তিনি দূতাবাসের বিভিন্ন প্রতিনিধি দল ও সফর আয়োজনের দায়িত্ব পালন করতেন। মার্কিন নাগরিক এই তরুণী ছিলেন শান্তি প্রতিষ্ঠা, ধর্মীয় সংলাপ এবং পরিবেশ রক্ষায় আগ্রহী।
লিঙ্কডইনে নিজের বায়োতে সারাহ লেখেন, “শান্তি গঠন, ধর্মীয় সম্পৃক্ততা এবং পরিবেশ বিষয়ক কাজের সংযোগস্থলে আমার আগ্রহ।”
তিনি টেক-টু-পিস নামের একটি সংস্থায় কাজ করেছিলেন, যারা ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি তরুণদের জন্য হাই-টেক প্রশিক্ষণ ও শান্তি সংলাপের আয়োজন করে।
সারাহের একটি বিশেষতা ছিল ধর্মীয় সম্প্রীতি ও আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের “ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিস”-এর অধীনে একটি সার্টিফিকেট প্রোগ্রাম সম্পন্ন করেছিলেন।
ইসরায়েলের ওয়াশিংটন দূতাবাস এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি, তবে তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ কার্যক্রমের আলামত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।