Wednesday, May 7
Shadow

খুলনায় বছরব্যাপী টিকার সংকটে হুমকিতে শিশু স্বাস্থ্য


এম এন আলী শিপলু, খুলনা :খুলনা নগরীর ৩১ টি ওয়ার্ডে বছর জুড়ে নিউমোনিয়া প্রতিরোধে পিসিভি ও ধনুস্টঙ্কর, হুপিং কাশি, ডিপথেরিয়া ও হেপাটাইটিস বি-ভাইরাসের প্রতিষেধক পিসিবি টিকার সঙ্কট রয়েছে। প্রতি মাসে চাহিদা ৪ হাজার ডোজ থাকলেও সরবরাহ হচ্ছে ৩শ’ ডোজ। নগরীর ১৭০ টি অস্থায়ী ও ৫টি স্থায়ী কেন্দ্রে টিকা না পেয়ে অভিভাবকরা দিনের পর দিন ফিরে যাচ্ছে। ফলে শিশুর মারাত্মক সংক্রমক রোগ সমূহের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

ইপিআই কর্মসূচির আওতায় শূন্য থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুর যক্ষা, ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, হেপাটাইটিস বি ভাইরাস, ধনুস্টঙ্কর, পোলিওমাইলাটিস, হাম, রুবেলা, হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা, রোগ প্রতিরোধ করার জন্য সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। এ কর্মসূচির আওতায় রয়েছে, ১৪ হাজার ২৩২ জন। অস্থায়ী কেন্দ্রগুলোতে প্রতি রোববার ও সোমবার এবং স্থায়ী কেন্দ্রগুলোতে মাসে দুবার টিকা দেওয়া হয়। গেল মার্চ মাসে ১ হাজার ১৮৬ শিশুর টিকা লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৯৩৭ জনকে দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী কেন্দ্র খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্বাস্থ্য ভবন, তালতলা হাসপাতাল, লাল হাসপাতাল ও কুলি বাগানে নির্ধারিত সময়ে মায়েরা শিশুকে নিয়ে আসলেও উল্লিখিত দুটি টিাকা দিতে পারে না।

কেসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শরীফ শাম্মীউল ইসলাম বলেন, সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে চাহিদা দিয়ে ভ্যাকসিন আনা হয়। পরিবহন সঙ্কটের কারণে ঢাকা থেকে এখানে আসতে বিলম্ব হয়। সেকারণে সামান্য সময়ের জন্য সঙ্কট পড়ে। নগরীর ভাসমান পরিবারের সংখ্যাই বেশি। যেসব পরিবারের শিশুরা টিকা পাইনি তাদেরকে খুঁজে-খুঁজে প্রতিষেধক দেওয়া হয়।

উল্লিখিত ১০টি রোগে নগরীর কোন শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।

তালতলা হাসাপাতালের সূর্য হাসি ক্লিনিকের কর্মকর্তা স্বাগোপ্তা মুন্নি বলেন, পিসিভি ও পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা দীর্ঘ বিরতীর পর আসে।

রোববার ও সোমবার টিকা দেওয়ার নির্ধারিত দিনে ২০-২৫ শিশু আসলে ১০ থেকে ১২ জনের বেশি দেওয়া সম্ভব হয় না। টিকার এ সঙ্কটের কারণে রোগের প্রাদূর্ভব বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) চালু হওয়ার পর দেশে শিশুদের জীবনরক্ষা কার্যক্রম এক অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকাদান কার্যক্রমের পূর্বে প্রতি বছর প্রায় ২৫ লাখ শিশু ছয়টি প্রধান সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করত। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, টিকার সংকট চলমান থাকলে এই অর্জন বিপন্ন হতে পারে। যদিও সরকারের পক্ষ হতে বলা হয়েছে যে, টিকার সংকট হওয়ার কারণ নেই, বরং সরবরাহে কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে।

ইপিআই কাভারেজ ইভালুয়েশন সার্ভের (২০১৯) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৯৮৪ সালে ইপিআইয়ের কভারেজ ছিল ২ শতাংশের নিচে। বর্তমানে তা ৮৪ শতাংশ। যদিও গ্রাম ও শহরাঞ্চলে টিকাদানের পরিস্থিতির ভিন্নতা পাওয়া গেছে। গত ১২ বছরে ইপিআই কভারেজ ৮৪ শতাংশের ওপরে না ওঠায় ১৬ শতাংশ শিশু টিকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *