Friday, August 1
Shadow

তোমার জন্য বৃষ্টিদিন

এ. কে. এম. নাজমুল আলম

“সব প্রেম কি শেষ পর্যন্ত প্রেমই থাকে?”

এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছিল অরণীর মনে—বৃষ্টির ছাঁটে ভিজে যেতে যেতে, আবারও এক পুরনো রিকশার ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে…

বৃষ্টি শুরু হয়েছিল হঠাৎ করেই।

রাজধানীর ব্যস্ত বিকেল, অফিসফেরতা মানুষের জটলা, তাড়াহুড়ো। অরণীও ছুটছিল, তবে বাইরের জন্য না, ভেতরের অস্থিরতা থেকে মুক্তি পেতে।

হঠাৎ করেই সেই পুরোনো কণ্ঠস্বর—

“অরণী?”

কণ্ঠটা চেনা, এতটাই চেনা যে শরীরের প্রতিটি স্নায়ু জেগে উঠলো।

সে ছিল ইশান।

পাঁচ বছর আগে যে মানুষটা এক কাপ কফির টেবিলে বলে দিয়েছিল,

“তুমি অনেক ভালো, কিন্তু আমাদের পথ আলাদা।”

আজ তারা আবার এক ছাউনির নিচে।

ইশান ভিজে একাকার, অরণীর ছাতার নিচে ঢুকলো না, শুধু তাকিয়ে থাকলো।

চোখে অদ্ভুত অভিমান আর অনুশোচনা—হয়তো মেশানো কিছু অনুভব।

“তুমি কেমন আছো?”

—অরণী জিজ্ঞেস করলো, কিন্তু গলায় কম্পন ছিল।

“ভালো থাকার অভিনয় শিখে ফেলেছি।

তোমার মতো কেউ না থাকলে, তা শিখে যেতেই হয়।”

এক মুহূর্ত চুপ।

তারপর ইশান বললো—

“তুমি কি জানো, সেই দিনের পর আমার প্রতিটা বৃষ্টিতে তোমার কথা মনে পড়ে?”

অরণী কিছু বললো না। চোখ মেলে তাকালো। বৃষ্টি তখন শহরের সব কোলাহল মুছে দিচ্ছে।

হয়তো কিছু শব্দ মুছে দেওয়ার জন্যই প্রকৃতি মাঝে মাঝে এভাবে ভিজিয়ে দেয় আমাদের।

ইশান আবার বললো,

“এই পাঁচ বছরে অনেক কিছু বদলেছে, কিন্তু আমি… আমি এখনো সেই বিকেলের ইশান, যে তোমার হাত ধরে একটা অজানা রাস্তায় হাঁটতে চেয়েছিল। শুধু ভয় পেয়ে ফিরে গিয়েছিলাম।”

অরণী এবার চোখ নামিয়ে বললো,

“ভয় তো আমারও ছিল… তবে আমি অপেক্ষা করেছিলাম।”

বৃষ্টির ফোঁটায় কিছু অশ্রু মিশে গেল।

তারপর ইশান তার ভিজে হাত বাড়িয়ে দিলো—

“আবার কি একবার হাঁটা যাবে? পুরোনো কিছু ভুলে, নতুন কিছু গড়ে?”

অরণী কিছুক্ষণ চুপ থেকে তার হাত ধরলো।

বৃষ্টি তখনও থামেনি, কিন্তু ছাউনির নিচে একটা সম্পর্ক আবার শুরু হলো—

চুপিচুপি, হৃদয়ের ভিতর দিয়ে।

এই গল্প শুধু প্রেমের নয়, এটি দ্বিতীয় সুযোগ, অনুশোচনা আর নীরব অপেক্ষার গল্প। পাঠকের হৃদয়ে নাড়া দেবে সেই স্মৃতির, যে ভালোবাসা ফেলে আসা সময়ের বৃষ্টিতে আজও ভিজে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *