Sunday, July 27
Shadow

প্রতিদিন মাত্র ৭,০০০ পা হাঁটলেই কমবে নানা রোগের ঝুঁকি: গবেষণা বলছে

প্রতিদিন মাত্র ৭,০০০ পা হাঁটাই যথেষ্ট হতে পারে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা পেতে—এমনটাই বলছে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা।

অনেকেই দৈনিক ১০,০০০ পা হাঁটার লক্ষ্য নির্ধারণ করে থাকেন, কিন্তু এই নতুন গবেষণা বলছে, ৭,০০০ পা হাঁটাই বাস্তবসম্মত এবং কার্যকর হতে পারে।

ল্যানসেট পাবলিক হেলথ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাটি দেখিয়েছে, প্রতিদিন ৭,০০০ পা হাঁটা ক্যানসার, ডিমেনশিয়া ও হৃদরোগসহ নানা গুরুতর রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

গবেষকরা বলছেন, এই ফলাফল মানুষকে আরও বেশি হাঁটার প্রতি আগ্রহী করে তুলবে, কারণ এটি স্বাস্থ্য ভালো রাখার একটি সহজ ও মাপযোগ্য উপায়।

গবেষণার প্রধান লেখক ডা. মেলোডি ডিং বলেন, “আমরা অনেক সময় মনে করি, প্রতিদিন ১০,০০০ পা হাঁটা দরকার, কিন্তু এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।”

প্রসঙ্গত, ১০,০০০ পা হাঁটা মানে প্রায় ৫ মাইল বা ৮ কিলোমিটার পথ। ব্যক্তিভেদে এই দূরত্ব ভিন্ন হতে পারে, কারণ হাঁটার গতি, উচ্চতা ও পদক্ষেপের দৈর্ঘ্যের ওপর তা নির্ভর করে।

১০,০০০ পা হাঁটার ধারণার পেছনে ইতিহাস রয়েছে:
এই সংখ্যাটি প্রথম জনপ্রিয় হয় ১৯৬০-এর দশকে জাপানের একটি বিপণন প্রচারণা থেকে। ১৯৬৪ সালের টোকিও অলিম্পিকের আগে ‘মানপো-কেই’ নামে একটি পেডোমিটার বাজারে আসে, যার মানে “১০,০০০-পদক্ষেপ মিটার”।

ডা. ডিং বলেন, এই সংখ্যা ‘প্রেক্ষাপট থেকে বিচ্ছিন্ন’ভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং অনেক ফিটনেস অ্যাপ ও ট্র্যাকার এখনও এই লক্ষ্যমাত্রাই দেখায়।

এই গবেষণায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১.৬ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের স্বাস্থ্য ও দৈহিক গতিবিধি সম্পর্কিত পূর্ববর্তী তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়।

যারা দিনে মাত্র ২,০০০ পা হাঁটেন তাদের তুলনায়, দিনে ৭,০০০ পা হাঁটলে যেসব ঝুঁকি হ্রাস পায় তা হলো:

  • হৃদরোগ: ২৫% কম
  • ক্যানসার: ৬% কম
  • ডিমেনশিয়া: ৩৮% কম
  • ডিপ্রেশন বা হতাশা: ২২% কম

তবে গবেষকরা বলছেন, কিছু তথ্যের নমুনা সীমিত হওয়ায় কিছু সংখ্যার নির্ভুলতা কম হতে পারে।

তারা আরও বলেন, দিনে ৪,০০০ পা হাঁটলেও তা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, বিশেষ করে যারা খুব কম হাঁটেন বা একেবারে নিস্ক্রিয় থাকেন তাদের তুলনায়।

৭,০০০ পা–এর বেশি হাঁটার অতিরিক্ত উপকার:
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৭,০০০ পা হাঁটার পর উপকারিতা স্থিতিশীল হয়ে যায়, তবে বিশেষ করে হৃদযন্ত্রের জন্য অতিরিক্ত হাঁটার বাড়তি সুবিধা রয়েছে।

“বিষয়টা সংখ্যার নয়, অভ্যাসের”—জন স্ট্রাইডের অভিজ্ঞতা

৬৪ বছর বয়সী জন স্ট্রাইড বলেন, তিনি প্রায়ই দিনে ১৬,০০০ পা হাঁটেন, তবে তিনি মনে করেন শুধু সংখ্যার দিকে তাকালে চলবে না।

বিবিসিকে তিনি বলেন, “মূল বিষয় হলো বাইরে বের হওয়া, হাঁটাহাঁটি করা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যে উপকারিতা—তা সংখ্যায় মাপা যায় না, তবে খুবই বাস্তব।”

২০২২ সালে হার্ট অ্যাটাকের পর তিনি প্রতিদিন হাঁটা শুরু করেন, অনুপ্রেরণা পান তাঁর শ্বশুরের কাছ থেকে যিনি একই বয়সে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

“আমি ইংল্যান্ডের ডরসেটের একটি গ্রামীণ শহরে থাকি। সকালে সাধারণত এক ঘণ্টার মতো হাঁটি। আমি একমাত্র মানুষ যে কুকুর ছাড়াই হাঁটে।”

তিনি বলেন, মোবাইলে পদক্ষেপ গোনা তাঁকে চ্যালেঞ্জের মতো অনুপ্রাণিত করে—”একটা স্তরে পৌঁছে গেলে মনে হয়, আমি আরও হাঁটতে পারি।”

পদক্ষেপ গোনা: এখন এক জনপ্রিয় অভ্যাস

ফিটনেস ট্র্যাকার ব্যবহারের ফলে প্রতিদিনের হাঁটার হিসাব রাখা এখন অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

অবশ্য বেশিরভাগ স্বাস্থ্য নির্দেশিকা সময় নির্ভর। যেমন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার বা ৭৫ মিনিট তীব্র মাত্রার অ্যারোবিক ব্যায়াম করা উচিত।

ডা. ডিং বলেন, এই সময়ভিত্তিক নির্দেশনা অনেকের জন্য বোঝা কঠিন, তবে তা এখনো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনেকে সাঁতার কাটেন, সাইকেল চালান বা শারীরিকভাবে হাঁটতে অক্ষম।

তবে তিনি বলেন, এর সঙ্গে পদক্ষেপের একটি সুপারিশ যোগ করা যেতে পারে।

ব্রুনেল ইউনিভার্সিটি লন্ডনের ডা. ড্যানিয়েল বেইলি বলেন, এই গবেষণা “প্রতিদিন ১০,০০০ পা হাঁটার মিথ” চ্যালেঞ্জ করে।

তিনি বলেন, যারা তুলনামূলক কম সক্রিয়, তাদের জন্য ৫,০০০ থেকে ৭,০০০ পা হাঁটার লক্ষ্য “আরও বাস্তবসম্মত ও অর্জনযোগ্য”।

পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. অ্যান্ড্রু স্কট বলেন, নির্দিষ্ট সংখ্যায় বেশি গুরুত্ব না দিয়ে মানুষের উচিত যতটা সম্ভব হাঁটা—“কারণ যত বেশি, তত ভালো”। বিশেষ করে যেসব দিনে চলাফেরা কম হয়, সেদিন সংখ্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়াই ভালো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *