Thursday, July 24
Shadow

একনজরে চীনের যত উন্নত যুদ্ধবিমান এবং জে-৭ যে কারণে এখন বাতিলের খাতায়

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন তার আকাশযুদ্ধ সক্ষমতাকে ব্যাপকভাবে উন্নত করেছে, এবং বৈশ্বিক সামরিক বিমান শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্স (PLAAF) পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী যুদ্ধবিমান থেকে সরে এসে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর, স্টেলথ সুবিধাসম্পন্ন ও উন্নত অস্ত্রবাহী নতুন প্রজন্মের বিমানবহর গড়ে তুলেছে। এই রূপান্তরের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চেংদু জে-২০। পাশাপাশি উন্নয়ন হয়েছে এফসি-৩১, জে-১৬ ও জে-১০সি-এর মতো উচ্চক্ষমতার বিমানগুলোরও। এই আধুনিকীকরণের অংশ হিসেবে পুরনো ও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়া মডেলগুলো অবসর দেওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো চেংদু জে-৭।

চীনের উন্নত যুদ্ধবিমানের উত্থান

গত দুই দশকে চীন তার বিমানবাহিনী আধুনিকীকরণের প্রতি ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে। এই পরিবর্তনের প্রতীকস্বরূপ যেসব বিমান রয়েছে, তার মধ্যে কিছু প্রধান হলো:

জে-২০ মাইটি ড্রাগন

চেংদু জে-২০ চীনের প্রথম স্টেলথ যুদ্ধবিমান এবং বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি চালু পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার জেটের একটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এফ-২২ র‍্যাপ্টর এবং এফ-৩৫-এর প্রতিযোগী হিসেবে তৈরি এই বিমানটিতে রয়েছে স্টেলথ প্রযুক্তি, উন্নত অ্যাভিয়নিক্স, দূরপাল্লার হামলা সক্ষমতা এবং সুপারক্রুজ সুবিধা। এই বিমানটির বিকাশ চীনের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলসহ বিশ্বজুড়ে আকাশ আধিপত্য কায়েমের উচ্চাকাঙ্ক্ষার ইঙ্গিত দেয়।

এফসি-৩১ গাইরফ্যালকন

এফসি-৩১, যা তার নৌবাহিনীর সংস্করণে জে-৩৫ নামেও পরিচিত, একটি স্টেলথ ফাইটার যা এখনও উন্নয়নাধীন। এটি রপ্তানি ও বিমানবাহী জাহাজে ব্যবহারের জন্য লক্ষ্যস্থির করে তৈরি হচ্ছে। দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট এই বিমানে রয়েছে ছাঁটা ও গতিশীল নকশা, এবং এটি মার্কিন এফ-৩৫-এর বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

জে-১৬ স্ট্রাইক ফাইটার

রুশ সু-৩০-এর ভিত্তিতে তৈরি জে-১৬ হলো একটি দ্বৈত ইঞ্জিনের মাল্টিরোল ফাইটার, যা উন্নত রাডার, ইলেকট্রনিক যুদ্ধব্যবস্থা এবং নির্ভুল হামলার সক্ষমতায় সজ্জিত। এটি চীনা বিমানবাহিনীর জন্য দীর্ঘপাল্লার মিশনে একটি নির্ভরযোগ্য অস্ত্রে পরিণত হয়েছে।

জে-১০সি মাল্টিরোল ফাইটার

জে-১০সি একটি তৃতীয় প্রজন্মের মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান, যাতে রয়েছে উন্নত অ্যাভিয়নিক্স, AESA রাডার এবং আধুনিক আকাশ থেকে আকাশ ও আকাশ থেকে ভূমি ক্ষেপণাস্ত্র বহনের ক্ষমতা। এটি চীনের কৌশলগত যুদ্ধবিমান বহরের অন্যতম মূল ভিত্তি।

জে-৭ অবসর নেওয়ার কারণ

চেংদু জে-৭, যা সোভিয়েত মিগ-২১ এর চীনা সংস্করণ, ১৯৬০-এর দশক থেকে PLAAF-এর সেবায় রয়েছে। বহুবার আধুনিকীকরণ করা সত্ত্বেও এটি বর্তমানের যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে অপ্রচলিত হয়ে উঠেছে।

অবসর নেওয়ার প্রধান কারণগুলো:

  1. পুরনো প্রযুক্তি
    জে-৭ নির্মিত হয়েছিল ১৯৬০-এর দশকের প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এতে সীমিত রাডার ক্ষমতা, কম পাল্লা ও পুরনো অ্যাভিয়নিক্স ছিল। আধুনিক যুদ্ধ পরিস্থিতি—বিশেষত স্টেলথ ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধ—এর ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
  2. সীমিত যুদ্ধক্ষমতা
    এই বিমানে স্টেলথ প্রযুক্তি নেই, অস্ত্র বহনের ক্ষমতা সীমিত এবং আধুনিক বিমানের মতো পরিস্থিতি বিশ্লেষণ বা ‘সিচুয়েশনাল অ্যাওয়ারনেস’ নেই। এটি দৃশ্যসীমার বাইরে যুদ্ধ বা ইন্টিগ্রেটেড নেটওয়ার্ক ওয়ারফেয়ারের জন্য অনুপযুক্ত।
  3. নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা
    পুরনো হওয়ায় জে-৭-এর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বেড়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই বিমানের সাথে যুক্ত বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনাও ঘটেছে।
  4. আধুনিক যুদ্ধনীতিতে রূপান্তর
    চীনা সেনাবাহিনী এখন তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর যুদ্ধ, স্টেলথ, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ এবং মাল্টিরোল ফ্লেক্সিবিলিটিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। জে-৭ এই নতুন কৌশলের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
  5. প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার পরিবর্তন
    আগে জে-৭ প্রশিক্ষণের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু এখন JL-10-এর মতো নতুন ট্রেইনার বিমানের আবির্ভাবে প্রশিক্ষণ পদ্ধতিও আধুনিক ফাইটারদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।

জে-৭-এর অবসর চীনা সামরিক উড্ডয়নের একটি যুগের অবসানকে নির্দেশ করে। একই সঙ্গে এটি ইঙ্গিত দেয় যে চীন এখন একটি বিশ্বমানের বিমানবাহিনী গঠনের পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেছে। চতুর্থ ও পঞ্চম প্রজন্মের বিমানসমূহ নিয়ে চীনের ক্রমবর্ধমান বহর দেশটিকে সামরিক বিমান প্রযুক্তিতে শীর্ষস্থানীয়দের কাতারে নিয়ে আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *