Tuesday, July 15
Shadow

মিটফোর্ডে চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে জবিতে প্রতিবাদ মিছিল

রোকুনুজ্জামান, জবি : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে এক ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

শুক্রবার (১১ জুলাই) রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন।

বিক্ষোভকারীরা শহীদ মিনার থেকে রায়সাহেব বাজার ও তাঁতিবাজার হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে যায়। পরে একই পথ ধরে ফিরে এসে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

এসময় শিক্ষার্থীরা ‘যুবদলের নতুন গুণ, পাথর মেরে করছে খুন’, জিয়ার সৈনিক, চাঁদা চায় দৈনিক’, আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘আমরা ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘সন্ত্রাসীদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও‘, ওয়ান টু থ্রি ফোর, চাঁদাবাজ নো-মোর’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, চাঁদার দাবিতে ব্যবসায়ী সোহাগকে যেভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তা শুধু বর্বরতাই নয়, সাম্প্রতিক সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতিরই প্রতিফলন। তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত সহিংস ঘটনার দ্রুত বিচার দাবি করেন।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, “৫ আগস্টের পর আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, সাম্যের বাংলাদেশ চেয়েছিলাম চাঁদাবাজিমুক্ত বাংলাদেশ। কিন্তু হাসিনার বিদায়ের পরপরই একটি গোষ্ঠী চাঁদাবাজি শুরু করেছে। আমরা ভুলে যাইনি আবু সাঈদের ভাইদের, শহীদ ওয়াসিম কিংবা শহীদ সাজিদের কথা। আবারও যদি প্রয়োজন হয়, আমরা রাজপথে নামব আবারও জুলাই ফিরে আসবে।”

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নূর নবী বলেন, “মনে হচ্ছে, এই পাথর আমার ভাইয়ের গায়ে নয় আমার বুকেই আঘাত করেছে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ বিশ্বজিৎকে হত্যা করেছিল, সেই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আজ আমরা মিটফোর্ডে দেখলাম। ৫ আগস্ট আমরা ফ্যাসিবাদ প্রতিহত করেছি, এবারও যারা সন্ত্রাসে মদদ দিচ্ছে, তাদেরও প্রতিহত করতে আমরা প্রস্তুত।”

ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল মুরাদ বলেন, “৫ আগস্টের পর আমরা চেয়েছিলাম একটি সহিংসতামুক্ত ক্যাম্পাস। কিন্তু আজ আমাদের সহযোদ্ধাদের উপর হামলা হচ্ছে। যারা দেশজুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে, তাদের রুখতে আমরা প্রয়োজনে আবারও রাজপথে নামব—আবারও জুলাই ফিরে আসবে।”

জবি শিবিরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম আরিফ বলেন,

“আজ ১১ জুলাই যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, সেটি মূলত দুই দিন আগের — ৯ জুলাইয়ের ঘটনা। আমরা দেখতে পাচ্ছি, কিছু গণমাধ্যম এই ঘটনার আসল তথ্য আড়াল করার চেষ্টা করছে। যুবদলের চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে এই বর্বরোচিত হামলার আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

আমরা ইন্টারিম গভর্নমেন্টের প্রতি আহ্বান জানাই, দ্রুত এই নির্মম হামলার বিচার করুন এবং যারা এই চাঁদার অর্থ গ্রহণ করেছে, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনুন।”

উল্লেখ্য, রাজধানীতে চাঁদা না দেওয়ায় মো. সোহাগ নামের এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে ও পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। গত বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটসংলগ্ন রজনী ঘোষ লেনে এ ঘটনা ঘটে। সেদিনই পুলিশ যুবদল নেতা মঈনসহ দুজনকে আটক করেছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত শতাধিক মানুষের সামনে ঘটে যাওয়া এই হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে সমালোচনা সৃষ্টি হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *