Tuesday, July 15
Shadow

চীনা পরিবহনখাতে চমক দেখাল এআই, ব্লকচেইন, উড়ন্ত গাড়ি

বেইজিংয়ে শুরু হয়েছে ১৭তম আন্তর্জাতিক পরিবহন প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি প্রদর্শনী। তিনদিনব্যাপী এই আয়োজনে পরিবহন খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডেটা ও ব্লকচেইন প্রযুক্তির নানা উদ্ভাবন তুলে ধরা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব এসব প্রযুক্তি যেমন খরচ কমায়, তেমনি কার্বন নির্গমনও হ্রাস করে। এ ছাড়া বিপর্যয় সতর্কবার্তা ব্যবস্থা, বেইতৌ স্যাটেলাইট-ভিত্তিক মহাসড়ক নজরদারি, এবং ড্রোন-সহ ছোট বিমানের জন্য নতুন থ্রিডি ন্যাভিগেশন প্রযুক্তিও নজর কেড়েছে প্রদর্শনীতে।

আন্তর্জাতিক শিপিং শিল্পের ৪৫ ভাগই এখন বড় কার্গো শিপের নিয়ন্ত্রণে। এ ধরনের জাহাজের ক্ষেত্রে দুই ধরনের কার্গোর মধ্যে যাতে কোনো দূষণ না ছড়ায়, তাই মালামাল লোড করার আগে বেশ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হয়। আর সুউচ্চ বাল্কহেডগুলোকে পরিষ্কার করাটা বেশ শ্রম ও সময়সাধ্য কাজ। প্রদর্শনীতে দেখানো হয়েছে এমন এক কেবিন ওয়াশিং রোবট যা পাঁচজন ক্রুর চারদিনের কাজ করে দেয় একদিনে।

কসকো শিপিং (ছিংতাও) এর মহাব্যবস্থাপক চিন সিন বলেন, ‘জাহাজের কেবিন পরিষ্কারের রোবটটি রাসায়নিক পরিষ্কারের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে। অন্যদিকে জাহাজের হাল পরিষ্কারের রোবটটি সামুদ্রিক নানা ধরনের তলানি জমার ফলে সৃষ্ট জ্বালানি খরচ কমায়। দুটো উদ্ভাবনই পরিবেশবান্ধব।’

এই প্রদর্শনীতে হাইওয়ে পর্যবেক্ষণের জন্য একটি দুর্যোগ সতর্কতা ব্যবস্থাও দেখানো হয়েছে। পরিবহন খাতের জন্য বিশেষভাবে তৈরি নেটওয়ার্ক দেখানো হয়েছে যা বেইতৌর নেভিগেশন সিস্টেমের সঙ্গেও যোগাযোগ চ্যানেলগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছে।

পরিবহন মন্ত্রণালয়ের হাইওয়ে গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর গবেষক লিউ হোংওয়েই, “রাস্তা ধস বা ভূমিধসের মতো দুর্যোগ ঘটলে, সিস্টেমটি রাস্তার পাশে স্থাপিত খুঁটিতে থাকা অ্যান্টেনার মাধ্যমে রিয়েল-টাইম ছবি এবং ভিডিও পাঠাতে পারবে। যদি একটি সেতু ভেঙে পড়ে, তাহলে চালকদের আগে থেকেই অবহিত করা যেতে পারে এবং সময়মত এড়িয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও নিতে পারবে।’

প্রদর্শনীতে স্বল্প-উচ্চতার অর্থনীতি খাতের সর্বশেষ নেভিগেশন প্রযুক্তি দেখানো হয়েছে। প্রচলিত স্থল নেভিগেশন যে এখন চীনের আকাশেও সমানতালে কাজ করছে সেটাও দেখানো হয়েছে এতে। সমন্বিত ভূমি-বায়ু ম্যাপিং প্ল্যাটফর্মগুলো গাড়ি এবং পথচারীদের গাইড করার পাশাপাশি ছোট ড্রোন এবং নিম্ন-উচ্চতার বিমানের জন্য রিয়েল-টাইম রুট নির্ধারণ করে দিচ্ছে।

প্রদর্শনীর আরেকটি আকর্ষণ ছিল উন্নত মাল্টিফাংশনাল রোড ইন্সপেকশন ভেহিকল। যার পেছনে রয়েছে গ্রাউন্ড-পেনিট্রেটিং রাডার—যা মাটির নিচে ৫ মিটার পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এতে রাস্তার নিচের ত্রুটিও ধরা পড়বে রাডারে।

যানটিতে রয়েছে ত্রি-মাত্রিক সিস্টেম, যেখানে তিনটি থ্রিডি ক্যামেরা ও দুটি টুডি ক্যামেরা যুক্ত। এটি চলমান অবস্থায় রাস্তায় যেকোনো সমস্যা রিয়েল-টাইমে শনাক্ত করতে পারে।

আরেকটি আলোচিত অংশ ছিল নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ব্যবহার করে উৎপাদিত সবুজ জ্বালানির মডেল। এতে হাইড্রোজেন, অ্যামোনিয়া, মিথানল ও টেকসই বিমান জ্বালানি তৈরির প্রক্রিয়া তুলে ধরা হয়েছে।

চায়না এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক নি চেন জানালেন, ‘সবুজ জ্বালানিতে রূপান্তরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো খরচ। উৎপাদন বেশি না হলে খরচ কমানো কঠিন। আমরা এখন এই জ্বালানির অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বাড়ানো নিয়ে কাজ করছি।’

বাদ পড়েনি অত্যাধুনিক ড্রোনও। চীনের মূল ভূখণ্ডে প্রথমবারের মতো প্রদর্শিত হয়েছে স্বয়ংক্রিয় উড়ন্ত গাড়ি। এতে ৯০ শতাংশের বেশি কার্বন ফাইবার ব্যবহার করা হয়েছে, যা ওজন কমিয়ে বাড়িয়েছে ফ্লাইটের দক্ষতা।

কুয়াংচৌ অটোমোবাইল করপোরেশনের গবেষক লি শুহান জানালেন এই উড়ন্ত কার ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ৩০০ মিটার উচ্চতায় উড়তে পারে।

লি জানান, আগামী বছর বাজারে ছাড়া হবে গাড়িটি। এরই মধ্যে প্রি-অর্ডার এসেছে এক হাজারের বেশি।

সূত্র: সিএমজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *