Wednesday, July 2
Shadow

দেশে প্রথমবারের মতো মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে  ব্রুসেলোসিস শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণে সফলতা

ব্রুসেলা হলো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া একটি মারাত্মক ঘাতক ব্যাধি, যা গৃহপালিত গবাদি পশু, বন্যপ্রাণী এবং সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটায়। এটি পশু খামারিদের জন্য ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতি ডেকে আনে এবং এটি একটি জুনোটিক রোগ হওয়ায় গবাদি পশু থেকে সহজেই মানুষে সংক্রমিত হতে পারে। গবাদি পশুর ক্ষেত্রে দুধ উৎপাদন কমে যাওয়া, গর্ভপাত এবং উৎপাদনশীলতা ব্যাপক হারে হ্রাস পাওয়াসহ নানান সমস্যা দেখা দেয়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান এবং তাঁর পিএইচডি গবেষণারত শিক্ষার্থী কর্ণেল (অব:) এসএম আজিজুল করিম হুসাইনী দাবি করেছেন, দেশে প্রথমবারের মতো মেশিন লার্নিং পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্রুসেলোসিস রোগের ঝুঁকি নির্ধারণ, রোগ শনাক্তকরণ ও প্রতিরোধে কার্যকর তথ্য বের করে আনা সম্ভব হয়েছে। তাদের সাফল্য সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থী মো. আশিকুজ্জামান। 

এই সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র এশিয়ান জার্নাল অব অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড বায়োলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণা সাময়িকীটি একটি স্কোপাস ইনডেক্সভুক্ত জার্নাল এবং এর ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর ১.৬। এই গবেষণায় প্রধান গবেষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান এবং কো-সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জার্মানির ফ্রেডেরিখ লোফলর ইনস্টিটিউটের ড. হেনরিখ নইবার। গবেষণায় প্রযুক্তিগত সুবিধা প্রদান করেছে সৌদি আরবের কিং ফয়সাল বিশ্ববিদ্যালয়।

গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “এই রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে খামারিরা ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছেন। আমরা মেশিন লার্নিংয়ের পাঁচটি অ্যালগরিদম প্রয়োগ করে সফলভাবে ব্রুসেলোসিস রোগের ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলো নির্ণয় করতে পেরেছি। এর মধ্যে এমএলপি, ডিপ লার্নিং ৪জে, অ্যাডাবুস্ট এমআই, এবং জে৪৮ ট্রি সবচেয়ে বেশি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম শুধু পশুস্বাস্থ্য নয়, মানুষের হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিস, শ্বাসতন্ত্রের রোগ ইত্যাদি নির্ণয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে আমাদের দেশে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা ও ধর্মীয় অনুভূতির কারণে ব্রুসেলোসিস আক্রান্ত পশু নিধনের পদ্ধতি গ্রহণ করা সম্ভব নয়। বরং যেসব পশুর বিদেশি রক্তের অনুপাত বেশি ও যারা উচ্চমূল্যের, তাদের ক্ষেত্রে নিরীক্ষা করে চিকিৎসা প্রদান করা যায়।”


গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রুসেলোসিস সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার অন্তত ১২টি প্রজাতির মধ্যে ব্রুসেলা অ্যাবোরটাস, ব্রুসেলা সুইস, ব্রুসেলা মেলিটেনসিস ও ব্রুসেলা ক্যানিস সবচেয়ে ক্ষতিকর। 

অধ্যাপক আরও জানান,  বর্তমানে ব্যবহৃত ব্রুসেলা অ্যাবোরটাস (এস-১৯) এবং আরবি৫১ লাইভ ভ্যাকসিনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তবে ‘কিল্ড ভ্যাকসিন’ নিরাপদ এবং কার্যকর বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ব্রুসেলোসিস প্রতিরোধে একটি যুগান্তকারী টিকা উদ্ভাবনের সম্ভাবনা রয়েছে।

পিএইচডি গবেষক কর্ণেল (অব:) এসএম আজিজুল করিম হুসাইনী বলেন, অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই গবেষণায় মেশিন লার্নিং পদ্ধতির সফল প্রয়োগের মাধ্যমে রোগ সংক্রমণের পদ্ধতি ও প্রতিরোধের উপায় নির্ধারণ করা গেছে। 

তিনি আরো বলেন, “আমরা সঠিক নির্দেশনা পেয়েছি, তা অনুসরণ করে কাজ করেছি, এবং কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেয়েছি। এই সাফল্য দেশ ও জাতির জন্য একটি গর্বের বিষয় হয়ে থাকবে।”

মো. আশিকুজ্জামান 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *