Wednesday, July 2
Shadow

নেতৃত্ব, শিক্ষা ও খেলাধুলায় সেরা—নোবিপ্রবির সারোয়ার

শিক্ষা জীবনে সাফল্য শুধু পরীক্ষার ফলাফলে নয়—তা প্রতিফলিত হয় নেতৃত্ব, সহশিক্ষা কার্যক্রম, গবেষণা এবং আত্মোন্নয়নের ধারাবাহিক চেষ্টায়। শিক্ষা, গবেষণা, নেতৃত্ব ও খেলাধুলা—এই চারটি ক্ষেত্রেই নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস (এমআইএস) বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো: সারোয়ার হোসেন। মেধা, পরিশ্রম ও একাগ্রতার মাধ্যমে তিনি বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।

সারোয়ার হোসেন কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক (এসএসসি) এবং সোনার বাংলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে তিনি নোবিপ্রবির এমআইএস বিভাগে ভর্তি হন এবং সেখানেই শুরু হয় তার অসাধারণ একাডেমিক যাত্রা।

সারোয়ার হোসেননের স্নাতক পর্যায়ে প্রতিটি সেমিস্টারের ফলাফল ছিল প্রশংসনীয়। তিনি ৮টি সেমিস্টারে গড়ে প্রায় ৩.৮৫ সিজিপিএ অর্জন করেন। এর মধ্যে তিনবার ৩.৯২ এবং একাধিকবার ৩.৮৫ এর বেশি স্কোর করেন—যা তার একাগ্রতা ও নিরবিচারে অধ্যয়নের পরিচায়ক। স্নাতকোত্তর পর্যায়েও তিনি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। তার স্নাতকোত্তর পর্যায়ের চূড়ান্ত সিজিপিএ ছিল ৪.০০—যা সর্বোচ্চ স্কোর।

শুধু পাঠ্যপুস্তকের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি সারোয়ার, সহশিক্ষা কার্যক্রম ও খেলাধুলায়ও ছিলেন সমান দক্ষ। দাবা ও টেবিল টেনিসে তার ধারাবাহিক সাফল্য নজরকাড়া। 

  • বিশ্ববিদ্যালয়ের বেস্ট চেস প্লেয়ার প্রতিযোগিতায় ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে রানার আপ এবং ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে চ্যাম্পিয়ন হন।
  • আন্তঃবিভাগীয় দাবা ও টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় টানা তিন বছর (২০২১-২৪) চ্যাম্পিয়ন হন।
  • ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় দাবা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে নোবিপ্রবিকে পঞ্চম স্থানে পৌঁছে দেন।

সারোয়ার হোসেন নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক কর্মকান্ডেও সক্রিয় ছিলেন। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে তিনি “এমআইএস নেট” বিভাগীয় ক্লাবের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন একাডেমিক ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে উদ্যমী ভূমিকা রাখেন। জুনিয়রদের একাডেমিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি কারো কোনো বিষয়ে জটিলতা থাকলে তা ধৈর্যসহকারে ব্যাখ্যা করে বোঝানোর ব্যাপারে ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক।

শিক্ষা ও ক্রীড়ার পাশাপাশি গবেষণাতেও আগ্রহী সারোয়ার একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। “এমব্রেসিং ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ ফর সাসটেইনেবল বিজনেস গ্রোথ” শীর্ষক সম্মেলনে তার গবেষণাপত্র উপস্থাপন ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গবেষণার শিরোনাম ছিল—“বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সেবার ব্যবসায়িক প্রভাব বৃদ্ধিতে শ্রেণিবিন্যাস মডেলের কার্যকারিতা বিশ্লেষণ” যেখানে তিনি আধুনিক প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে দেশের বিমান পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন।

ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন এবং ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো: জিয়াউল হক বলেন, সারোয়ার হোসেন আমাদের প্রথম ব্যাচের অত্যন্ত মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলাতেও ছিল সমান পারদর্শী। শুরু থেকেই তাকে দেখতাম সে সবসময় মনযোগী থাকতো। তার প্রতিটি সেমিস্টারের ফলাফল ছিল প্রশংসনীয়। আমি এমআইএস বিভাগের পক্ষ থেকে তার ভবিষ্যত সাফল্য কামনা করি। 

সারোয়ার হোসেন জানান ভবিষ্যতে তিনি একজন শিক্ষক হতে চান। তিনি মনে করেন, শিক্ষকতা এমন একটি পেশা যার মাধ্যমে একজন শিক্ষক তার অর্জিত জ্ঞান তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে দেশ ও জাতি গঠনে সর্বোচ্চ অবদান রাখতে পারে এবং তিনি সেই অবদানের অংশীদার হতে চান। এ বিষয়ে প্রেরণা পেয়েছেন তিনি তার পরিবার থেকেও—তার বাবা একজন শিক্ষক এবং বড় বোন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক।

তিনি বলেন, “আমার শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই আমি সর্বদা আমার বোনের পদাঙ্ক অনুসরণ করার চেষ্টা করি। তিনি আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই আমাকে পরামর্শ ও সহযোগিতা করে আসছেন। শিক্ষকতা ও গবেষণা একটি অন্যটির পরিপূরক। আমি মেশিন লার্নিংয়ে একজন শীর্ষ গবেষক হতে চাই।”

সারোয়ার হোসেনের এই যাত্রা শুধু একজন শিক্ষার্থীর কাহিনি নয়—এটি প্রমাণ করে, শুধুমাত্র মেধা নয়—নিয়মিত পরিশ্রম, সময়ানুবর্তিতা এবং বহুমুখী আগ্রহ একজন শিক্ষার্থীকে অসাধারণ করে তুলতে পারে পাশাপাশি সুযোগ, চেষ্টা ও অভিপ্রায় একত্রে হলে তরুণরাও হতে পারে দেশের অনুপ্রেরণা। 

মো: নূর উন নবী সিয়াম 

শিক্ষার্থী

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *