Monday, June 23
Shadow

লাকসামে বৃদ্ধাকে হত্যার অভিযোগে এক নারী গ্রেপ্তার : চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন

সৈয়দ মুজিবুর রহমান দুলাল, লাকসাম : কুমিল্লার লাকসামে এক বৃদ্ধা নারীকে শ্বাসরোধে হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে জাফরিন তাবাস্সুম জেরিন (২১) নামে অপর এক নারীকে লাকসাম থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছেন। গ্রেপ্তারকৃত ওই নারী একই বাড়ির মো. মাজহারুল ইসলামের স্ত্রী।

শুক্রবার (২০ জুন) রাতে উপজেলার কান্দিরপাড় ইউনিয়নের সিংজোড় গ্রাম থেকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজনীন সুলতানা গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ, এলাকাবাসী ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আগেরদিন বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকেলে উপজেলার কান্দিরপাড় ইউনিয়নের সিংজোড় গ্রামের আবদুল বারেকের স্ত্রী সায়েরা খাতুন (৫৮) নিজ ঘরেই খুন হয়। এ সময় ঘরে পরিবারের অন্য কোনো সদস্য ছিলেন না। ওই বৃদ্ধা একাই ঘরে ছিলেন। তাঁর স্বামী ছিলেন কুমিল্লায়।

নিহত বৃদ্ধার স্বামী আব্দুল বারেক জানান, ওইদিন তিনি একটি কাজে কুমিল্লায় গিয়েছিলেন। তখন তাঁর এক নাতির মাধ্যমে খবর পান তার স্ত্রীকে দুর্বৃত্তরা শ্বাসরোধে হত্যা করেছে। সংবাদ পেয়ে তিনি দ্রুত বাড়িতে ফিরে আসেন এবং লাকসাম থানা পুলিশকে অবহিত করেন।

সংবাদ পেয়ে লাকসাম থানা পুলিশ ঘটস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। পরদিন শুক্রবার ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন পুলিশ।

এই ঘটনায় শুক্রবার (২০ জুন) রাতে নিহত ওই বৃদ্ধার ছেলে মো. মাকসুদুর রহমান বাদি হয়ে লাকসাম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ, এলাকাবাসীসহ একাধিক সূত্র জানায়, ঘরে কেউ না থাকার সুযোগে একই বাড়ির মো. মাজহারুল ইসলামের স্ত্রী জেরিন আক্তার ওই বৃদ্ধার ঘরে ঢুকে তাঁকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এ সময় বৃদ্ধার সঙ্গে  থাকা স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন নিয়ে চম্পট দেয়। ঘটনার পরপরই ওই নারী (জেরিন) গা ঢাকা দেন। নিহত ওই বৃদ্ধার মরদেহ দাফনেে সময়েও তিনি বাড়ি ছিলেন না। এতে বাড়ির অনেকেই তাঁকে সন্দেহ করেন।

ওইসব  সূত্রে আরো জানায়, গতকাল শুক্রবার (২০ জুন) নিহত ওই বৃদ্ধার মরদেহ দাফন শেষে মাজহারুল তাঁর স্ত্রীকে বাড়ি এনে কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি (জেরিন) হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে এবং চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেন।

মাজহারুলের স্ত্রী জেরিন’র দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সে প্রথমে ঘরে ঢুকে ওই বৃদ্ধাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে গলার স্বর্ণের চেইন টান দিয়ে খুলে ফেলেন। তখন ওই বৃদ্ধার ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং তাকে দেখে ফেলেন। এ সময় সে (জেরিন) একটি লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। একপর্যায়ে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে ওই বৃদ্ধার সঙ্গে থাকা গলার স্বর্ণের চেইন, হাতের বালা, কানের দূল ও নাকের ফুল নিয়ে বেরিয়ে যায়।

স্বীকারোক্তিমূলক হত্যাকাণ্ডের এই তথ্যগুলো জেরিন’র স্বামী মো. মাজহারুল ইসলামসহ অন্যারা মুঠোফোনে রেকর্ডিংসহ তাকে আটক করে লাকসাম থানা পুলিশে সোপর্দ্দ করেন।

এলাকাবাসী ও ভূক্তভোগীর জানান, গ্রেপ্তারকৃত ওই নারী এলাকায় পূর্বেও এরকম অনেক চুরির ঘটনা ঘটিয়েছেন। কিন্তু হাতেনাতে ধরতে না পারলেও সন্দেহ করতেন। নারী হওয়ায় আইনী জটিলতার ভয়ে অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পেতেন।

নাম  প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার ভুক্তভোগী একটি পরিবারের এক সদস্য জানান, অনেক পূর্বে ওই নারীর এমন অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে উল্টো বিপাকে পড়ার উপক্রম হয়েছিলো।

গ্রেপ্তারকৃত জাফরিন তাবাস্সুম জেরিন’র স্বামী মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, ওই বৃদ্ধার হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে থাকা তাঁর স্ত্রীকে বাড়ি এনে অত্যন্ত কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে। এ সময় তিনি তাঁর স্ত্রীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রেকর্ডিং করেন। পরে ভুক্তভোগী পরিবারসহ এলাকাবাসীকে সরবরাহ করেন। একপর্যায়ে স্ত্রী জেরিনকে এলাকাবাসীর সহায়তায় লাকসাম থানা পুলিশে সোপর্দ্দ করেন।

মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, তাঁর অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন সময় স্ত্রী জেরিন এমন আরো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।

এই ব্যাপারে লাকসাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শাহদাত হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ওই নারীকে আজ শনিবার (২১ জুন) কুমিল্লার বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া, মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *