
রাহমান জিকু
প্রিয় বাবা,
আমার ঝঞ্জাটময় জীবনে সমস্ত সমস্যার একমাত্র নিখুঁত সমাধান তুমি। তোমাকে ঘিরে আমার পৃথিবী সাজে, যেখানে আমি মুক্ত বিহঙ্গের ন্যায়।
তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে বাবা, তোমার হাতের বাহুতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়া ছোট্ট শিশুটির কথা? আমিই তোমার ভীষণ আদরের সেই ছোট্ট শিশুটি বাবা। তোমার অসীম যত্ন ও ভীষণ আদরে বেড়ে উঠা, সেই ছোট্ট শিশুটি আজ যৌবন ছুঁয়েছে।
তোমার পরম মমতা ও ভালোবাসার আচ্ছাদনে সুদীর্ঘ দু’যুগ পেরিয়েছে বাবা। তোমার সেই ছোট্ট শিশুটি আজ বুঝতে শিখেছে বাবা। তোমার অসীম যত্ন ও ভালোবাসার কাছে আমি বড্ড অসহায়। বাবা, কখনোই বলা হয়নি– ভালোবাসি। তোমার সেই ছোট্ট শিশুটিও তোমাকে অসম্ভব রকমের ভালোবাসে বাবা।
জন্ম লগ্ন থেকে সুদীর্ঘ আঠারোটি বছর ছিল, আমার জীবনের সোনালী সময়। এই সময়গুলোতে আমার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড তুমিই ছিলে বাবা। তোমার হাত ধরে বেড়ে উঠা শৈশব-কৈশোর আমার আমৃত্যু প্রিয় থাকুক।
তোমার এ-ও নিশ্চয়ই মনে আছে বাবা– তুমি অফিস থেকে ফেরার পথে আমি ভীষণ উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করতাম, কবে তুমি বাড়ি ফিরবে? শেষমেশ গোধূলি ফুরানোর আগেই তুমি দেখা দিতে। আর তোমার আগমনে সেই ছোট্ট শিশুটিও ভীষণ প্রফুল্লিত মনে তোমার হাতের আঙুল ছুঁয়ে বাড়ি ফিরেছে।
ঘুমোতে গিয়ে বিছানার চাদর নিয়ে ছুটাছুটি করা তোমার সেই ছোট্ট শিশুটি আমি বাবা। তোমাকে ঘোড়া বানিয়ে তোমার পিঠে শৈশব কাটিয়ে দেয়া বালকটি আমি বাবা। তোমার পিঠে খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে যাওয়া সেই বালকটি আমি বাবা৷ তোমার অনুপস্থিতিতে তোমাকে বড্ড মিস করি বাবা।
উচ্চশিক্ষা অর্জনে আজ দীর্ঘ ৬ টি বছর তোমার কাছ থেকে দূরত্ব বেড়েছে বাবা। বেড়েছে হাহাকার বাবা। শৈশব-কৈশোরের মতো এখন আর তোমার পিঠে খেলা করার দূরত্ব বেড়েছে। দূরত্ব বেড়েছে তোমাকে যখন ইচ্ছে জড়িয়ে ধরার। দূরত্ব বেড়েছে তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে যাওয়ার।
বড় হতে গিয়ে যদি বাবার ভালোবাসা ও আদরে দূরত্ব বাড়ে, তাহলে আমি তোমার সেই ছোট্ট বালকটি হতে চাই বাবা।
তোমাকে কখনোই ক্লান্ত হতে দেখিনি বাবা। সেই ছোট্ট থেকে দেখেছি বাবা, সকালে অফিসে গিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আমার সমস্ত আবদার পূরণে ব্যস্ত হয়ে পড়তে। তোমার এই অসীম যত্ন ও অকৃত্রিম ভালোবাসার কাছে আমি রোজকার অসহায় হয়ে পড়ছি বাবা।
তোমার সাথে আষ্ঠেপৃষ্ঠে লেগে থাকা আমার অসীম ভালোবাসাকে দূরত্ব ঘায়েল করেছে। অথচ– তোমার প্রতি আমার ভালোবাসার তীব্রতা অধিকতর প্রখর হয়েছে। তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর তৃষ্ণা আমার আজন্ম থাকুক।
অতঃপর– বাবা, তুমি আমার মাথার উপর বটবৃক্ষের ছায়া হয়ে অবিচল পাশে থেকো। তোমার পিঠে চড়ে বসে লেপ্টে থাকা আমার শৈশবের সমস্ত আবদার মিটিয়ে দিও। সর্বদা মায়াময় শীতল আবেগে আগলে রেখো নিখাঁদ ভালোবাসায়। তোমার কাছেই আমার শেখার শুরু। শাসনের অন্তরালে তোমার কাছে প্রথম বুঝতে শিখেছি পৃথিবীর ভালো-মন্দের পার্থক্য। স্রষ্টার দপ্তরে প্রার্থনা– তোমার সার্বিক সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু হোক। সবসময়ই ভালো থেকো বাবা, সুন্দর থেকো।
ইতি
তোমার সেই ছোট্ট শিশু
জিকু
লেখক পরিচিতি:
রাহমান জিকু
শিক্ষার্থী,
চট্টগ্রাম কলেজ।