Tuesday, June 3
Shadow

নওগাঁর বলিহার দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

মাহবুবুজ্জামান সেতু, নওগাঁ : নওগাঁয় বলিহার দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বুধবার (২৮ মে) বেলা ১১ টার দিকে নওগাঁ সদর উপজেলার বলিহার ইউনিয়নের বলিহার দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে এ তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গত ১৪ মে জেলা প্রশাসক,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অত্র এলাকাবাসীর পক্ষে জাহাঙ্গীর আলম নামে এক শিক্ষানুরাগী  ব্যাক্তি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
স্থানীয়রা জানান, নওগাঁ সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বলিহার দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম,দূর্নীতি,অর্থ আত্মসাত,স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ের বার্ষিক আয় ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা হওয়া সত্ত্বেও, স্কুলটির অবকাঠামোগত সংস্কার, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মান উন্নয়ন এবং স্কুলের সার্বিক উন্নয়নে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
সরেজমিনে বিদ্যালয়ের বর্তমান চিত্র দেখলে সহজেই অনুধাবন করা যায়, দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। ভেঙে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা, ময়লার স্তুপ জমেছে শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে। ভবনের বেশিরভাগ জানালার গ্লাসগুলো ভাঙ্গা। এছাড়াও ছেলে ও মেয়েদের দুইটি আলাদা টয়লেট থাকলেও যা ব্যবহার একেবারেই অনুপোযোগী। ছাত্র-ছাত্রীদের টয়লেট ব্যবহার করার প্রয়োজন হলে স্কুলের বাইরে যেতে হয়। দেখা যায় মেয়েদের কমনরুমে স্কুলের নাইটগার্ড বিছানা করে ঘুমানোর পাশাপাশি দিনে বিশ্রাম নিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির চারিদিকে বাউন্ডারি থাকার কারণে বহিরাগত কেউ ভেতরে প্রবেশ করা কথা না থাকলেও, স্কুলের ভেতরে প্রায় সময় ধূমপানের অবশিষ্ট অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। অন্যদিকে বিদ্যালয়ের একটি ল্যাব থাকলেও সেখানে থাকা ল্যাপটপগুলো দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।
শিক্ষার্থী ইমরান,মাহী,সাবা,তিহা এবং নাফিজসহ অন্যান্যদের অভিযোগ, ল্যাব থাকলেও তাদের সেখানে বসার তেমন একটা সুযোগ দেওয়া হয় না। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা করার জন্য নেই কোন সরঞ্জাম; যা আছে সেগুলো খেলার অনুপযোগী।
স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলম,সেলিম রেজা,সাইফুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন স্বপনসহ একাধিক ব্যক্তি ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে আফজাল হোসেন প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়ে উঠেছে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। শিক্ষক, নৈশ প্রহরী, অফিস সহকারী, অফিস সহায়ক, পদে নিয়োগ দিয়ে ৪৭ লক্ষ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করা হলেও  স্কুলের উন্নয়নমূলক খাতে জমা করা হয়নি একটি টাকাও। এছাড়াও গত ১২-১৩ বছরের স্কুলটির বাৎসরিক আয় প্রায় ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। যা থেকে সামান্য কিছু টাকা বিদ্যালয়ের খাতে জমা দিলেও ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। এছাড়াও বিদ্যালয়ের নিজস্ব পুকুর গোপনে লিজ দেওয়া এবং গাছ কর্তনের অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এসব বিষয় নিয়ে ইতোমাধ্যে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।


অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.আফজাল হোসেন বলেন, কমিটি গঠন সংক্রান্ত মতবিরোধের কারণে একটি পক্ষ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমার আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করছেন। যার কোন সত্যতা নেই।
বিদ্যালয় পরিচালনা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহফুজুল আলম বলেন, তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এমতাবস্থায় কোন মন্তব্য করতে চাই না।
এ বিষয়ে নওগাঁ সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ ওয়াসিউর রহমান বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত  কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।  অনিয়ম-দুর্নীতি ও ও অর্থ আত্মসাতের সত্যতা পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর আগে কাউকে দোষী সাব্যস্থ করা ঠিক হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *