
দেশের সব নাগরিকের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ—এ কথা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “বাংলাদেশে যেকোনো সাংবাদিক যেকোনো সময় আসতে পারেন। আমরা পুরোপুরি স্বচ্ছতা বজায় রাখছি।”
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক মার্কিন কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ)-এর চেয়ারম্যান স্টিফেন শ্নেকের সঙ্গে সাক্ষাতে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পর অনেক আন্তর্জাতিক সাংবাদিক বাংলাদেশে এসেছেন। তারপরও দক্ষিণ এশিয়ার কিছু গণমাধ্যম এবং বিদেশি কিছু উৎস অভ্যুত্থানকে ভুলভাবে উগ্র ইসলামপন্থি আন্দোলন হিসেবে উপস্থাপন করছে, যা দুঃখজনক।”
তিনি আরও বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা এবং ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যা আমাদের দেশেও ভেতর থেকে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। কিন্তু সত্ত্বেও আমরা দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।”
সাক্ষাতে বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতার বর্তমান অবস্থা, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম, প্রস্তাবিত সংবিধান সংশোধনী এবং চলমান রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি ধর্মীয় বৈচিত্র্যে ভরপুর দেশ। এখানে ১৭ কোটি ১০ লাখ মানুষ বসবাস করে এবং সবাই যাতে নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।”
সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাস্তব পরিস্থিতি দেখতে ও যাচাই করতে আমরা আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের বাংলাদেশে স্বাগত জানাচ্ছি। আমাদের কোনো কিছু লুকানোর নেই।”
স্টিফেন শ্নেক গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর কাজ এবং প্রস্তাবিত সংবিধান সংশোধনী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা জানান, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার আরও সুরক্ষিত করা হবে।
তিনি বলেন, “ঐকমত্য কমিশন দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত সংলাপ করছে। আমাদের নীতিগত অবস্থান পরিষ্কার—এই দেশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সংখ্যালঘু সবাই সমান অধিকার উপভোগ করবেন।”
রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও সাক্ষাতে আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা জানান, “রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্দশা এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে ইউএসসিআইআরএফ-এর সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা জাতিসংঘকে অনুরোধ জানিয়েছি, সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করতে। যত দ্রুত সম্ভব এই সংকটের স্থায়ী সমাধান দরকার, কারণ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক ক্ষুব্ধ তরুণ প্রজন্ম বড় হচ্ছে। তাদের আশার আলো দেখাতে হবে।