Monday, May 26
Shadow

কোরবানি বন্ধের নির্দেশ দেয়ায় কলকাতায় বদলি বাতিল, ঢাকায় ফেরার নির্দেশ শাবাব বিন আহমেদকে

বাংলাদেশের কলকাতা উপ-হাইকমিশনে কোরবানি বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বিতর্কে জড়ানো কূটনীতিক শাবাব বিন আহমেদের বদলি আদেশ বাতিল করে তাকে অবিলম্বে ঢাকায় ফিরতে বলা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রশাসন অনুবিভাগ থেকে এক অফিস আদেশে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।

অফিস আদেশে বলা হয়, বর্তমানে নেদারল্যান্ডসের হেগে মিনিস্টার (রাজনৈতিক) হিসেবে কর্মরত শাবাব বিন আহমেদকে দ্রুত ঢাকা সদর দপ্তরে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, কলকাতার উপ-হাইকমিশনার পদে তার বদলির পূর্বের আদেশও বাতিল করা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, “বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। তার বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জবাবদিহির মুখোমুখি হবেন।” তিনি আরও জানান, কলকাতা মিশনে কোরবানি অব্যাহত রাখার নির্দেশ ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে।

শাবাব বিন আহমেদ তার সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, “হোস্ট কান্ট্রির (ভারত) আস্থা অর্জন জরুরি। তাদের রীতিনীতি আমাদের শ্রদ্ধা করতে হবে। আমরা যেটা কোরবানির জন্য জবাই করি, তারা সেটাকেই পূজার বস্তু হিসেবে দেখে।” তার এই বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেক সিনিয়র কূটনীতিক।

কর্মকর্তারা জানান, কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনে দীর্ঘ ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ঈদের কোরবানি হয়ে আসছে। প্রতিবছর ৫ থেকে ৭টি গরু ও ছাগল কোরবানি দিয়ে সেখানকার এতিমখানা ও আশপাশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর মাঝে মাংস বিতরণ করা হয়। কোরবানির এই ঐতিহ্য শুধু ধর্মীয় নয়, বরং এটি পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

এক সিনিয়র কূটনীতিক জানান, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বরাবরই এই কোরবানিকে ইতিবাচকভাবে দেখে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের উদ্যোগ বন্ধ হলে সেটা বিজেপি-আরএসএস রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে পারে। এতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা ছিল।”

কলকাতা মিশনে কর্মরত কর্মকর্তারা জানান, শাবাব বিন আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার আগেই কোরবানি বন্ধে তৎপরতা শুরু করেন। কর্মকর্তারা তাকে বিষয়টির স্পর্শকাতরতা বোঝানোর চেষ্টা করলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। এমনকি তাকে অনুরোধ করা হয় যেন তিনি কোরবানির পর দায়িত্ব নেন, কিন্তু তিনি ২ জুন দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানিয়ে কোরবানির প্রস্তুতি বন্ধের নির্দেশ দেন।

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, কলকাতার স্থানীয় হিন্দু সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরাও বাংলাদেশ মিশনে ফোন করে কোরবানি বন্ধ না করার অনুরোধ জানান। তারা বলেন, কোরবানি বন্ধ হলে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

শাবাব বিন আহমেদর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “কলকাতা ছাড়া অন্য কোনো মিশনে কোরবানি হয় না। আমি পাঁচটি মিশনে কাজ করেছি, কোথাও কোরবানি হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের হোস্ট কান্ট্রির সংস্কৃতি ও সংবেদনশীলতা মাথায় রাখতে হবে। কলকাতা মিশনের নিরাপত্তাকর্মীরা যাকে পূজা করেন, সেটিকে জবাই করলে তাদের মানসিক অবস্থা কেমন হয়, সেটা ভেবে দেখা উচিত।”

এই মন্তব্যেও হতবাক হয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, “তিনি এখনো দায়িত্ব নেননি, অথচ এত স্পর্শকাতর বিষয়ে একক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন! এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তিনি আগে দিল্লি হাইকমিশনেও দায়িত্বে ছিলেন। হতে পারে, সেখান থেকেই তিনি বিজেপির আদর্শে প্রভাবিত হয়েছেন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *