Sunday, May 25
Shadow

আলো: জীবন ও বিজ্ঞানের আলোকবর্তিকা

আলো—এই শব্দটি শুধু একটি প্রাকৃতিক উপাদান নয়, বরং জীবনধারণের অন্যতম শর্ত। আমরা চোখের সাহায্যে জগতকে যেভাবে দেখি, রঙের বিচারে সৌন্দর্য উপলব্ধি করি এবং প্রযুক্তির নানা ব্যবহারে আলোর শক্তি কাজে লাগাই—সবকিছুর মূলে রয়েছে “আলো” নামক এই আশ্চর্য শক্তি।

আলো কী?

আলো হলো এক ধরনের শক্তি যা তরঙ্গের আকারে চলাচল করে এবং যা আমাদের চোখে প্রতিসরণ ঘটিয়ে বস্তুকে দৃশ্যমান করে তোলে। এটি একটি তরঙ্গ কণিকা—উভয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বস্তু, অর্থাৎ দ্বৈত প্রকৃতির (Dual Nature)।

  • আলোর গতি: শূন্যে আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩ × ১০⁸ মিটার (3,00,000 কিমি/সেকেন্ড)।
  • আলো সোজা রেখায় চলে।
  • এটি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলে প্রতিফলন (Reflection), প্রতিসরণ (Refraction), বিচ্ছুরণ (Dispersion) ইত্যাদি ঘটায়।

আলোর রঙ বিচ্ছুরণ

প্রিজমের মাধ্যমে যখন সাদা আলো ভাঙানো হয়, তখন সাতটি রঙের বিচ্ছুরণ ঘটে—বেগুনি, নীল, আকাশি, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল। এটি আমরা রংধনু হিসেবেও দেখতে পাই।

আলোর ইতিহাস

  • আইজ্যাক নিউটন (Sir Isaac Newton)
    নিউটন প্রথম প্রমাণ করেন যে সাদা আলো আসলে অনেক রঙের মিশ্রণ। তিনি প্রিজম দিয়ে রঙ বিচ্ছুরণ দেখান।
  • হিউয়েনস (Huygens)
    আলোর তরঙ্গ তত্ত্ব প্রদান করেন। তিনি বলেন, আলো তরঙ্গাকারে ছড়িয়ে পড়ে।
  • ম্যাক্সওয়েল আইনস্টাইন
    আলোর কণিকা ধর্ম ব্যাখ্যা করেন। আইনস্টাইন আলোর কণিকা ‘ফোটন’ নামে পরিচিত করেন ও ফোটোইলেকট্রিক ইফেক্ট ব্যাখ্যা করেন, যার জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পান।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আলোর ব্যবহার

  • সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে
  • মাইক্রোস্কোপ, টেলিস্কোপ, ফাইবার অপটিক্স
  • ফটোগ্রাফি ও সিনেমাটোগ্রাফি
  • চিকিৎসায় লেজার সার্জারি
  • যোগাযোগ ব্যবস্থায় ফাইবার অপটিক্স

আলো শুধু বিজ্ঞান বিষয় নয়, এটি জীবন, প্রযুক্তি ও জ্ঞানের প্রতীক। দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে আলোর অধ্যায়টি ভালোভাবে বোঝা মানে শুধু একটি পরীক্ষার বিষয় আয়ত্ত নয়, বরং জীবনের আলো চিনে নেওয়া। শিক্ষার্থীরা যদি এই অধ্যায় মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারে, তবে তারা বিজ্ঞানের অনেক জটিল বিষয় সহজেই বুঝতে শিখবে।

প্রতিটি পাঠ শেষে চিত্র দেখে ধারণা নেওয়া, বাস্তব উদাহরণ (যেমন: আয়না, প্রিজম, টর্চলাইট, রংধনু) দেখে নিজে পরীক্ষা করা, এবং প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে অনুশীলন করলে আলো অধ্যায় হয়ে উঠবে আগ্রহ ও আনন্দের উৎস।

কিছু প্রশ্ন উত্তর দেয়া হল

প্রশ্ন ১: আলো যদি সোজা রেখায় চলে, তবে রেইনবো বা রঙধনু কিভাবে সৃষ্টি হয়?

উত্তর: রেইনবো মূলত সূর্যালোকের পানিকণায় প্রতিসরণ ও প্রতিফলনের ফলে সাদা আলোর বিচ্ছুরণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। প্রতিটি পানিকণা একটি প্রিজমের কাজ করে, যা আলোর রঙগুলোকে ভেঙে দেয়।

প্রশ্ন ২: আলো তরঙ্গ না কণিকা? কীভাবে বুঝব?

উত্তর: আলো দ্বৈত প্রকৃতির। এটি কখনো তরঙ্গের মতো আচরণ করে (যেমন: ব্যতিচার ও অপবিকরণ), আবার কখনো কণিকার মতো (যেমন: ফোটোইলেকট্রিক ইফেক্ট)। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান এই দ্বৈত প্রকৃতি গ্রহণ করেছে।

প্রশ্ন ৩: ফাইবার অপটিক্সে আলো কীভাবে বেঁকে যায় অথচ সোজা চলে?

উত্তর: ফাইবার অপটিক্সে আলো অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলনের (Total Internal Reflection) কারণে বহুবার প্রতিফলিত হয়ে সংকীর্ণ পথে সামনের দিকে চলে যায়। এতে আলো বাঁকেও, কিন্তু শক্তি হারায় না।

প্রশ্ন ৪: আলো না থাকলে আমাদের জীবন কেমন হতো?

উত্তর: আলো না থাকলে পৃথিবী হতো অন্ধকার, শীতল ও প্রাণহীন। গাছপালা সালোকসংশ্লেষণ করতে পারত না, ফলে খাদ্যশৃঙ্খলা ভেঙে যেত। মানুষও চোখের সাহায্যে কিছু দেখতে পারত না। সভ্যতা অন্ধকারেই থেকে যেত।

পাঠ্যপুস্তক: দশম শ্রেণি, পদার্থবিজ্ঞান, অধ্যায় আলো

মোঃ জামাল হোসেন (ন্যাশনাল গার্লস মাদ্রাসা)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *