
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর গরু-মহিষ ও ভেড়া-ছাগলের খুরারোগের টিকা কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করেছিল। তবে টিকা কেনার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব এবং অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধের অভিযোগ উঠেছে। এতে সরকারের প্রায় ১৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকার লোকসান হবে বলে জানা গেছে। দরপত্র অনুযায়ী প্রথমে ওএমসি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান ৮২ কোটি ৫০ লাখ টাকায় টিকা সরবরাহের প্রস্তাব দিলেও, কাজটি পায়নি। পরে দুই মাসের ব্যবধানে একই পরিমাণ টিকা ৯৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকায় সরবরাহের প্রস্তাব করলে, সেই কাজটি পায় ওএমসি। অথচ, সর্বনিম্ন দরদাতা ছিল জেনটেক নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান।
ওএমসি লিমিটেডের কাজ পাওয়ার পেছনে প্রভাবশালী একজন ব্যক্তির প্রভাব থাকার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আবু সুফিয়ান জানান, সেই ব্যক্তি তাঁর দপ্তরে এসেছিলেন, তবে খুরারোগের টিকার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর খুরারোগের টিকা কেনার জন্য তিনবার দরপত্র আহ্বান করে। প্রথম দফায় ওএমসি অংশ নেয়নি। দ্বিতীয় দফায় সাতটি প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও কোনো প্রতিষ্ঠান কাজ পায়নি। তবে তৃতীয় দফায় তিনটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয় এবং সর্বনিম্ন দরদাতা ছিল জেনটেক। জেনটেক ২০ কোটি টাকা কম মূল্যে সরবরাহের প্রস্তাব দিলেও, নিরাপত্তা ঝুঁকির অজুহাতে কাজটি ওএমসিকে দেওয়া হয়।
খুরারোগের টিকা কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে অভিযান চালায়। দুদকের একটি দল প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করেছে। বিষয়টি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ওএমসিকে টিকা সরবরাহের কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট সন্দেহের জায়গা রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রের অর্থের সঠিক ব্যবহার হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এই টিকা কেনার প্রক্রিয়া এবং এতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের বিষয়টি এখন তদন্তাধীন। সরকার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।