Sunday, May 18
Shadow

লাইভস্ট্রিমিংয়ের সুতায় দুলছে খুচরা বাজারের পেন্ডুলাম

চীনা অর্থনীতিতে শনৈঃ শনৈঃ উন্নতি। সেই উন্নতির চাকা যাতে হড়কে না যায়, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বরাবরই কাঁধে নিয়েছে প্রযুক্তি। এমনকি ‘সূচাগ্র মেদিনি’ বিক্রিতেও দেখা যাচ্ছে কোনো না কোনোভাবে ‘রণে’ অংশ নিয়েছে বাহাদুর কোডিং। প্রযুক্তি—তা যত সহজ বা সরলই হোক, চীনা উদ্যোক্তার হাতে পড়লে ব্যবহার হবে ষোলোআনাই। অনেকদিন ধরেই এ প্রযুক্তির খাতায় নাম লিখিয়েছে সরাসরি ভিডিও প্রদর্শন ওরফে ‘লাইভস্ট্রিমিং’। চায়না ইন্টারন্যাশনাল ইলেকট্রনিক কমার্স সেন্টারের সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে এমনটা।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, এ ধরনের লাইভস্ট্রিমের একটি রুম থেকেই শিল্পচেইনের এ মাথা থেকে ও মাথায় তৈরি হতে পারে অন্তত ৩০টি নতুন চাকরি। পদবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—লাইভস্ট্রিমিং হোস্ট, ভিডিও অ্যানালিস্ট, ভিডিও এডিটর, খরচ বিশ্লেষক। আবার লাইভস্ট্রিমিং কক্ষের জন্য দরকার হয় পণ্য বাছাই বিশেষজ্ঞ, ভিডিও স্ক্রিপ্টের পরিকল্পনাকারী, কনটেন্ট প্রডাকশন ও ডাটা ট্রাফিক ব্যবস্থাপক।
চীনের শর্ট ভিডিও প্লাটফর্ম খুয়াইশৌ-এর এক জরিপ জানাল আশা জাগানিয়া খবর—যেসব প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের প্রচারে ঘন ঘন লাইভস্ট্রিমিংয়ে যাচ্ছে, তাদের নতুন গ্রাহকদের ৭০ ভাগই আসছে সেই ভিডিও দেখে। এমনকি লাইভস্ট্রিমিংয়ের কারণে তাদের পণ্যে নতুনত্বের আগমণও বেড়েছে দ্বিগুণ।
শুধু ভিডিওতে কেউ একনাগাড়ে পণ্যের গুণকীর্তন গাইবেন, ব্যাপারটা এমনও নয়; এআই এবং বিগ ডেটার ব্যবহারও চলছে দেদার। ক্রেতারা কী করে পণ্যের দুনিয়ায় আরও নিশ্চিন্তে গা ভাসাতে পারেন সেটাও নিশ্চিত করছে প্রযুক্তি। এ ধারাবাহিকতায় ক্রেতাদের সঙ্গে একখানা মজবুত আবেগের সম্পর্ক স্থাপনের প্রয়াসেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন ছুটছে লাইভস্ট্রিমিংয়ের পেছনে।
চায়না ইন্টারন্যাশনাল ইলেকট্রনিক কমার্স সেন্টারের উপ-প্রধান চাই ওয়েইবিন বললেন, ‘লাইভস্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে ই-কমার্স কেবল গ্রাহকদের কেনাকাটার অভ্যাসটাই বদলে দেয়নি, বরং চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও নতুন প্রেরণা যুগিয়েছে।’
ওই প্রতিবেদনে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিল্প রূপান্তর ও উন্নয়ন, গ্রামীণ জীবনযাত্রা সমর্থন এবং কৃষি পণ্যের বিক্রয় চ্যানেল সম্প্রসারণে লাইভস্ট্রিমিং ই-কমার্সের ঝাঁ চকচকে ভূমিকাও তুলে ধরা হয়েছে।
চাইনিজ একাডেমি অফ সোশ্যাল সায়েন্সেসের অধীনে ন্যাশনাল একাডেমি অফ ইকোনমিক স্ট্র্যাটেজির গবেষক লি ইয়ংচিয়ান বলেন, লাইভস্ট্রিমিং ই-কমার্স শহর ও গ্রামীণ বাসিন্দাদের মধ্যে আয়ের ব্যবধান কমাতে সাহায্য করতে পারে, কারণ গবেষণায় দেখা গেছে যে লাইভস্ট্রিমিং সেশনের সময় যদি তাজা কোনো খাবারের মোট মার্চেন্ডাইজ মূল্য বা জিএমভি ১ শতাংশ বাড়ে, তাহলে গ্রামীণ বাসিন্দাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে যায় দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
বাজার পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান আই-রিসার্চের তথ্যে জানা যায়, চীনের লাইভস্ট্রিমিং ই-কমার্স খাতের রাজস্ব গত বছর ৫.৮ ট্রিলিয়ন ইউয়ান পৌঁছেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে স্বল্প-ভিডিও প্ল্যাটফর্মগুলো লাইভস্ট্রিমিং শপিংয়ে তাদের উপস্থিতি সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করছে, অনলাইন ট্র্যাফিক ঐতিহ্যবাহী ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকে ভিডিও-শেয়ারিং অ্যাপে স্থানান্তরিত হচ্ছে।
প্রতিবেদন ঘেঁটে আরও দেখা গেল, ডেটা বিশ্লেষণ এবং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা জানতে পারছেন তাদের গ্রাহকদের নজর মূলত কোন পণ্যের দিকে ঝুঁকছে বেশি। সেইসঙ্গে কোম্পানিগুলো পাচ্ছে রিয়েলটাইম পূর্বাভাস। সেই অনুযায়ী ঝটপট হয়ে যাচ্ছে নতুন পণ্যের নকশা।
এআই-চালিত ভার্চুয়াল হোস্টের দেখাও মিলছে হরদম। মানুষের সঙ্গে এআই-এর সমন্বিত লাইভস্ট্রিমিংও এখন নতুন প্রবণতার তালিকায়। আর লাইভস্ট্রিমিংয়ে এআই মানেই, তাৎক্ষণিক গ্রাহকরা পাচ্ছেন তাদের সমস্ত উত্তর, কেনাকাটায় এ যেন এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা!

সিএমজি বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *