
মাইনুল ইসলাম রাজু, আমতলী বরগুনা : বরগুনার তালতলী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এ. আই টেকনিশিয়ান আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে গরু ও ছাগল দেওয়ার কথা বলে ৩৫ জন লোকের নিকট থেকে দেড় লক্ষাধিক টাকা তুলে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ইউএনওর নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। টাকা আত্মসাতের পর থেকেই ওই টেকনিশিয়ান দুই মাস ধরে পলাতক রয়েছে। ভুক্তভোগীরা টাকা আদায়ের জন্য তার গ্রামের বাড়ি ছাতন পারা গেলে সে টাকা না দিয়ে উল্টো তাদের মারতে চায় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছেন উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা। পলাতক কাদের বরবগী ইউনিয়নের ছাতনপাড়া গ্রামের শানু হাওলাদারের ছেলে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, তালতলী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ‘কৃত্রিম প্রজনন’ প্রকল্পের এ. আই টেকনিশিয়ান আব্দুল কাদের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে গরু ও ছাগল দেয়ার কথা বলে নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের মরানিদ্রা এলাকার ৩৫ জন লোকের কাছে থেকে এনআইডি কার্ড, ছবি ও বিকাশের মাধ্যমে জন প্রতি ৫ হাজার টাকা করে সর্বমোট ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন। টাকা নেয়ার দীর্ঘদিন পরও গরু ছাগল পায়নি ওই ব্যাক্তিরা। এরপর তার কাছে টাকা ফেরত চাইলে সে নানা ছলনা শুরু করেন। টাকা ফেরৎ না দিয়ে কাদের গত ফেব্রুয়ারি মাসে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে ভুক্তভোগীরা আব্দুল কাদেরকে খুঁজতে তার বাড়িতে গেলে পরিবারের লোকজন হত্যার হুমকি দেয়।
মরা নিন্দ্রা গ্রামের ভুক্তভোগী পারভীন বেগম বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে আমাকে একটি বকনা বাছুর দেয়ার কথা বলেন। এ জন্য জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করেন। পরে ধার-দেনা করে আমরা তাকে টাকা দেই। কিন্তু এর পর থেকে আজ-কাল করে ঘোরাচ্ছেন, গরু ছাগল দিচ্ছেন না। এখন তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’
একই গ্রামের সুমাইয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার নিকট থেকে ছাগল দেওয়ার কথা বলে ৫ হাজার টাকা নিয়েছে। এখন পর্যন্ত ছাগলও পাইনাই টাকাও ফেরৎ পাই নাই।
ভুক্তভোগী বেল্লাল খান বলেন, ‘আব্দুল কাদের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে আমিসহ এলাকার বিধবা, প্রতিবন্ধী, ক্যান্সার আক্রান্তসহ ৩৫ জনের কাছ থেকে গরু ও চাগল দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাউকে গরু ছাগল দেয়নি। গত দুই মাস ধরে আত্মগোপনে চলে গেছে তাঁর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এখন আমাদের টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ তিনি আরো বলেন, কাদেরের ছাতন পারা গ্রামের বাড়িতে গেলে সে আমাদের মারার জন্য হুমকি দিছে।
অভিযুক্ত আব্দুল কাদেরের টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি টাকা নিয়ে খরচ করে ফেলেছি। সকলের টাকা আমি অল্প সময়ের মধ্যে ফেরৎ দেব।
তালতলী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাদেকুর রহমান বলেন, আব্দুল কাদের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে গরু চাগল দেওয়ার কথা বলে টাকা আত্মসাতের বিষয়ে জানতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, ‘আব্দুল কাদের গত দুই মাস ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি কোনো উত্তর না দেওয়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি।’
তালতলী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা উম্মে সালমা বলেন, এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের নিকট থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তালতলী থানার ওসিকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছি।