Thursday, May 8
Shadow

সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

সৈয়দ মুজিবুর রহমান দুলাল, লাকসাম, কুমিল্লা: ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী ও কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. তাজুল ইসলামসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। মঙ্গলবার কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত ৮-এর বিচারক ফারহানা সুলতানা এ আদেশ দেন।

ওইদিন বিকেলে কুমিল্লা জেলা আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ও বাদীপক্ষের আইনজীবী কাইমুল হক রিংকু গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

লাকসাম পৌরসভা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনির আহমেদ বাদি হয়ে চাঁদা দাবি, সন্ত্রাসী হামলা, গুলিবর্ষণ, হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত বছরের ২৭ আগস্ট ১৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞতানামা ৮০ থেকে ৯০ জনকে বিবাদী করে কুমিল্লার আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। ওই মামলায় সাবেক মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামকে হুকুমের আসামি করা হয়েছিলো।

আইনজীবী কাইমুল হক রিংকু বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছিলেন। সম্প্রতি পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল এবং ঘটনার সত্যতা পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন।  মঙ্গলবার মামলাটির শুনানির ধার্য তারিখ ছিলো। শুনানি শেষে ও পুলিশের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত সাবেক মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামসহ এজাহারভুক্ত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

সাবেক মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ছাড়াও গ্রপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন,সাবেক মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের শ্যালক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মহব্বত আলী, লাকসাম পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ উল্লাহ, ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খলিলুর রহমান, সাবেক পৌরসভা মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মো. আবুল খায়ের, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও গোবিন্দপুর ইউপির চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন শামীম, উপজেলার কান্দিরপাড় ইউপির চেয়ারম্যান মো. ওমর ফারুক, মনোহরগঞ্জের বিপুলাসার ইউপির চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন, সাবেক মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের ভাতিজা ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের এপিএস হিসেবে পরিচিত উন্নয়ন সমন্বয়কারী ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কামাল হোসেন, লাকসাম উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, আজগরা ইউপির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, একই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল আমিন, লাকসাম পৌরসভা যুবলীগ নেতা আবদুল কাদের শাহীন ও নিষিদ্ধ ঘোষিত লাকসাম পৌরসভা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কাওছার আহমেদ।

মামলার বাদী বিএনপি নেতা মনির আহমেদ বলেন, ২০২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মনোহরগঞ্জের বিপুলাসার এলাকায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুসহ নেতা-কর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায় সাবেক মন্ত্রী মো.তাজুল ইসলামের ক্যাডার বাহিনী। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার জের ধরেই সাবেক মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের নির্দেশে ওই সন্ত্রাসীরা তাঁকে হামলা-মামলা, নির্যাতন,শুরু করেন। গত বছর আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তাঁর ওপর আবার হামলা করেন ওই সন্ত্রাসীরা। বিষয়টি তিনি আদালতকেও জানিয়েছেন।

তাঁর অভিযোগ, কোটা আন্দোলনের সময় ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট সন্ত্রাসীরা তাঁর বাড়ির সামনে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ ছাড়াও ১৮ আগস্ট মামলার তিন নম্বর আসামি লাকসাম পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ উল্লাহ’র নেতৃত্বে তাঁর বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়। এ সময় গুলি করে তাঁকে হত্যার চেষ্টাও করা হয়।

মনির আহমেদ বলেন, ‘সাবেক মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের নির্দেশে আমার ওপর বারবার নির্যাতন চালানো হয়েছে। মামলাটির সঠিক তদন্ত হওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকৃত সত্য উঠে এসেছে। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভূক্ত আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক।’

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামসহ মামলার আসামিরা আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের মুঠোফোনও বন্ধ। এ জন্য তাঁদের বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *