Thursday, May 8
Shadow

আড়াই মাস ধরে বন্ধ কুয়েট, আজও শিক্ষকরা ক্লাসে না ফেরায় শিক্ষার্থীরা হতাশ


এম এন আলী শিপলু, খুলনা :দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) একাডেমিক কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকায় লেখাপড়ায় পিছিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সেশনজটেরও আশংকা করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসলেও একাডেমির কার্যক্রম চালু না হওয়ায় হতাশ শিক্ষার্থীরা। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ রোববার (৪ মে) থেকে ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও শিক্ষকরা ক্লাসে না ফেরায় শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

রবিবার (৪ মে) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন একাডেমিক ভবনগুলো খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনকল্পে সকাল সাড়ে দশটায় সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত ভিসি অধ্যাপক ড. হযরত আলী প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে শিক্ষক সমিতির সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এরপর পর্যায়ক্রমে তিনি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করেন। বৈঠকের পর শিক্ষক সমিতি নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, তাঁরা সোমবার সভা করে সিদ্ধান্ত জানাবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকদের সঙ্গে আমাদেরও দাবি ছিল সকল ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক। বিচারের যে প্রক্রিয়া এটা একটা লং প্রক্রিয়া। আমরা চাই ক্লাসও শুরু হোক, পাশাপাশি বিচার প্রক্রিয়াও চলতে থাক। আমরা শিক্ষকদের কাছে প্রয়োজনে ক্ষমা চাইবো। আমরা স্যারদের পা ধরে ইন্ডিভিজুয়ালভাবে মাফ চাইতে রাজি আছি।

তিনি বলেন, নতুন তদন্ত কমিটির মাধ্যমে অন্যায়ভাবে যারা ক্যাম্পাসে পলিটিক্স ঢুকাতে চেষ্টা করেছে, যারা দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে আহত করেছে তদন্তের মাধ্যমে এটার সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার হোক এটা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর দাবি।

উল্লেখ্য, শিক্ষক সমিতি ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী, ভিসিসহ শিক্ষকদের লাঞ্ছনাকারীদের সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার পূর্ব সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন।

অবশ্য ক্লাস শুরুর জন্য শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। কিন্তু শিক্ষক সমিতি ক্লাস বর্জন কর্মসূচিতে অটল রয়েছেন। ফলে আজ থেকে একাডেমিক কার্ক্রম শুরুর কথা থাকলেও শুরু হয়নি।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড.মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী, ভিসিসহ শিক্ষকদের লাঞ্ছনাকারীদের সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরব না। গতকাল আমরা আমাদের সিদ্ধান্তের কথা নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত ভিসিকে জানিয়ে দিয়েছি। তিনি আজ আমাদের সঙ্গে বসতে চেয়েছেন।

কুয়েটের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা চেয়ে ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের দপ্তর ও ১৬টি বিভাগের প্রধানের দপ্তরে লিখিত চিঠি দিয়েছি। আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে বিদ্বেষমূলক কোনো আচরণে যেতে চাই না। রোববার আবারও শিক্ষকদের কাছে গিয়ে আমরা ক্ষমা চাইবো।

এদিকে ৭৪ দিন একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর আজ ক্লাসে ফিরতে উন্মুখ হয়ে বসে আছেন শিক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যে আবাসিক হল গুলো ভরে গেছে শিক্ষার্থীদের পদচরণায়।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদল ও বহিরাগতদের নেতাকর্মীদের  সংঘর্ষের ঘটনায় ২৫ ফেব্রুয়ারি কুয়েট বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে কুয়েটে অচলাবস্থা চলছে। এরপর শিক্ষার্থীদের এক দফা আন্দোলন ও আমরণ অনশনের প্রেক্ষিতে গত ২৫ এপ্রিল উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে অপসারণ করে সরকার।

গত ১ মে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলীকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *