Thursday, May 8
Shadow

অস্ত্র ফেরত চান আত্মগোপনে থাকা বিতর্কিত ব্যক্তি, কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতারা


অস্ত্র ফেরত চাচ্ছেন আত্মগোপনে থাকা বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতারা
# প্রশাসন বলছে বিতর্কিতদের সুযোগ কম
# শঙ্কায় নাগরিক নেতারা
# জমা ৫২২, ফেরতের আবেদন ৩৭০


এম এন আলী শিপলু, খুলনা
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অস্ত্র জমা দেয়ার পর সবার সাথে ফেরত পেতে চাচ্ছেন বিভিন্ন মামলার আসামি এবং আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতারাও। অন্য সবার মতো অস্ত্র ফেরত পেতে যথারীতি তারাও আবেদন করেছেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে দেওয়া সব অস্ত্রের লাইসেন্স ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত বছর ২৫ আগস্ট স্থগিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্থগিত লাইসেন্সভুক্ত অস্ত্র ও গুলি নিকটস্থ থানায় অথবা জেলা ট্রেজারি ও আর্মস ডিলারের কাছে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।

খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সূত্র থেকে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারি থেকে অস্ত্র ফেরতের জন্য আবেদন জমা দেয়া শুরু হয়। গত ৯ এপ্রিল পর্যন্ত মোট আবেদন জমা পড়েছে ৩২০ জনের। বীর মুক্তিযোদ্ধা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা, অতীতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি, সাবেক কাউন্সিলর ও সাবেক জনপ্রতিনিধিরাও অস্ত্র ফেরত পেতে আবেদন করেছেন।

আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদে খুলনা থেকে ৫২৪ জনকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৫২২ জন বৈধ অস্ত্র জমা দেন। সরকারি নির্দেশ অমান্য করে অস্ত্র জমা না দেওয়া ২জন হলেন বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন এবং বটিয়াঘাটার জলমা ইউনিয়নের কাজী মোমিনুল হক। তারা তাদের অস্ত্র জমা না দেয়ায়া সরকার তাদের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করে দেন।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, গত ৯ জানুয়ারি কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপুও মৃত্যুর আগে অস্ত্র ফিরে পেতে আবেদন করেছিলেন।

এছাড়া আওয়ামী লীগের শাসনামলেই হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় কয়েকবার গ্রেপ্তার হওয়া ১৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন খন্দকার গণঅভ্যুত্থানের পর আরও কয়েকটি মামলার আসামি হয়েছেন। তিনিও জামিনে বের হয়ে এসে তার পিস্তল ও শর্টগান ফেরত চেয়ে আবেদন করেছেন।

একইভাবে অস্ত্র ফেরত চেয়ে আবেদন করেছেন সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বুলু বিশ্বাসের ভাই ওমর ফারুক বিশ্বাস। এ

ছাড়া বিতর্কিত ঠিকাদার মাহাবুব ব্রাদার্সের মালিক শেখ মাহাবুবুর রহমান, চিতলমারী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান শামীম, কেসিসির সাবেক প্যানেল মেয়র এস এম রফি উদ্দিন আহমেদ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য আনিসুর রহমান বিশ্বাস, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আরিফ হোসেন মিঠু, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলমগীর কবীরসহ অনেকে অস্ত্র ফেরত চেয়ে আবেদন করেছেন।

সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ পিন্টুর বিরুদ্ধে আগে থেকেই  হত্যাসহ একাধিক মামলা ছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে রয়েছেন তিনি আত্মগোপনে। তার বিরুদ্ধে নতুন করে আরও তিনটি মামলা হয়েছে। পলাতক থাকা অবস্থায় নিজের লাইসেন্স করা রিভলবার ও বন্দুক ফেরত পেতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন সাবেক এই কাউন্সিলর।

আরেক এলাকাছেড়ে আত্মোগোপনে থাকা ব্যক্তি ১৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর শ্রমিক লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লবও। তাঁর বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা হয়েছে। কেসিসির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মাদক বিক্রেতাদের প্রশ্রয়সহ এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তিনিও জমা দেওয়া বন্দুক ফেরত পেতে আবেদন করেছেন।

বিপ্লব-পিন্টু ছাড়াও আত্মগোপনে থাকা বিতর্কিত ব্যক্তি, কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকেই লাইসেন্স করা অস্ত্র ফেরত পেতে আবেদন করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে গত বছরের আগস্ট মাসে তারা এসব অস্ত্র থানায় জমা দিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে নাগরিক নেতারা বলছেন, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বিতর্কিত ব্যক্তিরা অস্ত্র ফেরত পেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সতর্ক থাকা উচিত।  

খুলনার জেলা প্রশাসক ও আগ্নেয়াস্ত্র ফেরত প্রদান-সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আবেদন করলেই অস্ত্র ফেরত পাবেন– এমন ভাবার অবকাশ নেই। বিতর্কিতদের অস্ত্র ফেরত পাওয়ার সুযোগ কম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *