Wednesday, May 7
Shadow

শেরপুরে প্রথমবারের মতো চিয়া সিড চাষ করে সফল তরুণ উদ্যোক্তা শিমুল

বিদেশি সুপারফুড এখন দেশের মাঠে, কৃষিতে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

শেরপুর প্রতিনিধি:
শেরপুরে প্রথমবারের মতো উচ্চমূল্যের বিদেশি সুপারফুড চিয়া সিড চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা শিমুল মিয়া। মাত্র ৫ হাজার টাকা খরচ করে ৫০ শতক জমিতে পরীক্ষামূলক চাষ করে তিনি এখন লক্ষাধিক টাকার আশাবাদী। তার এই উদ্যোগ স্থানীয় কৃষকদের আগ্রহী করে তুলেছে এবং চিয়া সিডকে শেরপুরের সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসলে পরিণত করছে।

শিমুল মিয়া জেলার সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের সূর্যদী গ্রামের মৃত মোজাফফর আলী ও মোছা. ছানোয়ারা বেগমের জ্যেষ্ঠ পুত্র। ২০১৩ সালে ইমামবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১৫ সালে শেরপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন তিনি। বর্তমানে শিমুল ওই কলেজেই ইংরেজি বিভাগে সম্মান শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন। পড়ালেখার পাশাপাশি শখের বশে তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ঔষধি ও নতুন ধরনের ফসলের চাষ করে আসছেন।

শিমুল বলেন, “কৃষির প্রতি ভালোবাসা থেকেই এ পথচলা। চিয়া সিড ছাড়াও আমি বস্তায় আদা, ভেষজ উদ্ভিদ ও নতুন ধরনের সবজি চাষ করছি।”
তিনি জানান, জেলা কৃষি বিভাগের সহায়তায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথমবারের মতো বিদেশি এই উচ্চমূল্যের ফসল চিয়া সিডের বীজ বপন করেন। পুরো মৌসুমে সার, সেচ ও পরিচর্যা মিলিয়ে তার খরচ হয় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা।

শিমুলের মতে, “চিয়া সিড চাষে খরচ কম, রোগবালাই নেই বললেই চলে এবং বাজারে কেজিপ্রতি দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা হওয়ায় লাভের সম্ভাবনা অনেক বেশি।”
চিয়া সিড দেখতে অনেকটা তোকমা কিংবা তিল বীজের মতো। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, আয়রন, পটাশিয়াম, ওমেগা-থ্রি, প্রোটিনসহ বিভিন্ন পুষ্টিগুণ, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণসহ হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে শিমুল জানান, এক বিঘা জমিতে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম বীজ লাগে এবং বপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তোলা যায়। দেশের বিভিন্ন সুপারশপ ও অনলাইন মার্কেটে এই সিডের চাহিদা প্রচুর।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন বহু মানুষ শিমুলের জমিতে ভিড় করছেন এই অচেনা ফসলটি দেখতে ও জানার জন্য।
স্থানীয় কৃষক বেলায়েত মিয়া বলেন, “নতুন এই ফসল আমাদের কৃষিতে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। আমরাও আগ্রহী হয়েছি চাষে।”
আরেক কৃষক শিখন মিয়া বলেন, “আমদানি নির্ভরতা কমলে আমরা চিয়া সিড চাষ করে লাভবান হতে পারবো।”

কামারিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. খাদেম মিয়া বলেন, “আমরা গর্বিত যে, গ্রামের সন্তান শিমুল বিদেশি ফসল চাষে সফল হয়েছে। এটা অন্যদের জন্য উদাহরণ।”

শিমুলের প্রতিবেশী ও নূরে মদীনা মাদ্রাসার মোহতামিম মো. মশিউর রহমান বলেন, “দেশেই এখন বিদেশি ফসল উৎপাদন সম্ভব—এটা ছিল অকল্পনীয়। শিমুল সেটা প্রমাণ করেছে।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, “শেরপুরের মাটি ও আবহাওয়া চিয়া সিড চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে উদ্বুদ্ধ করছি যাতে আরও কৃষক এতে আগ্রহী হন।”

চিয়া সিড চাষের সফল এই উদ্যোগ প্রমাণ করেছে—উদ্যম, সচেতনতা ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের তরুণরাও বিদেশি ফসলের চাষে বিপ্লব ঘটাতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *