Thursday, May 8
Shadow

অবশেষে বরখাস্ত বিতর্কিত শিক্ষক কিরীটী

  • নারী সহকর্মীদের গোপন অঙ্গের ছবি তোলা ও ছাত্রীদের যৌন পীড়ন
  • বিনা অনুমতিতে ১২বার বিদেশ ভ্রমণ
  • ৮টি পৃথক অভিযোগে বিভাগীয় মামলায় গুরুদন্ড প্রদান
  • একাধিকবার শাস্তিযোগ্য বদলী, গুরুদন্ড ও সাময়িক বরখাস্ত

এম এস আলী শিপলু, খুলনা : অবশেষে চাকরী থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে খুলনার বিতর্কিত শিক্ষক কিরীটী রায়কে। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এ বিধি ৩(খ) অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগে দোষী সাবস্ত করে গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিক সকল বিষয় বিবেচনায় একই বিধিমালার ৪(৩)(ঘ) বিধি মোতাবেক তাকে চাকরি হতে বরখাস্তকরণের গুরুদন্ড আরোপ করা হয়েছে। গত রবিবার (২৭ এপ্রিল) খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এক আদেশে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত খুলনা সদরের এই বিতর্কিত প্রাইমারী শিক্ষক কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া টানা ৬ মাস চিকিৎসা ছুটিতে স্কুলে অনুপস্থিত ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তাকে অন্তত ১০বার বিনা অনুমতিতে বিদেশ ভ্রমণের বিভাগীয় মামলার তদন্তে হাজির হওয়ার নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। সম্পূর্ণ সুস্থ এই ধুরন্ধর শিক্ষক নিজের অপরাধ ঢাকতে ভূয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন।

খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসা ছুটি বাতিল করে স্কুলে যোগদানের নির্দেশ দিলেও তিনি যোগদান করেননি। কোন তদন্তেও হাজির হননি। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া একজন শিক্ষক এতদিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকায় ব্যাপক বিতর্ক তৈরী হয়। অবশেষে তার বিরুদ্ধে বরখাস্তকরণের গুরুদন্ড আরোপ কার হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এই শিক্ষক ২০০৬ সালে চাকরি জীবন শুরু করে অসংখ্য বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিয়ে ১২বার স্কুল পরিবর্তন করেছেন। প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চিত করা, সহকর্মী শিক্ষকদের অন্যত্র বদলির হুমকি, নারী সহকর্মী শিক্ষকদের গোপন অঙ্গের ছবি তোলা, ছাত্রীদের উপর যৌন পীড়ন, ছাত্রদের বেদম প্রহারসহ অভিভাবকদের সাথে মারামারি করেছেন। উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে ২০১২ সালের জুলাই মাসে তিনি উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির একজন ছাত্রকে অমানবিক প্রহার করে বিভাগীয় মামলায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন। তখন তিনি ব্যক্তিগত শুনানীতে হাজির না হয়ে অনুনোমোদিত ছুটি কাটিয়েছিলেন। ভেন্যু ও তদন্ত কর্মকর্তার পরিবর্তন চেয়ে বারবার সময় ক্ষেপণ করেছিলেন। সেই মামলায় তার বিরুদ্ধে সন্দেহাতিতভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিধিমালার ৪(৩) ডি ধারায় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত হয়।

২০১৩ সালের অক্টোবরে কিরীটী রায়ের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে আরও একটি গুরুদন্ড প্রমাণিত হয়েছিল। তখন তাকে মানবিক বিবেচনায় চাকরি থেকে বরখাস্ত না করে বেতন স্কেল কর্তন করে লঘুদন্ড দেওয়া হয়।

২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির দুইজন ছাত্রীর বিরুদ্ধে যৌন পীড়নের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন মামলায় তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়। এই ঘটনায় তাকে চাকরি থেকে প্রায় ১ বছর বরখাস্ত করা হয়?
২০২৩ সালের ৯ অক্টোবর তালতলা উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন নারী সহকারী নারী শিক্ষক তার বিরুদ্ধে বিনা অনুমতিতে বিদেশ ভ্রমণের (তাকে সঙ্গে নিয়ে)   লিখিত অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগে জেলা শিক্ষা অফিসের তদন্তে তার বিরুদ্ধে ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত বিপি০৮৩৫৩৬৫ এবং বি০০১৩৯০১০ নম্বরের ২টি পাসপোর্টে ১২বার বিনা অনুমতিতে ভারত ভ্রমণের তথ্য মেলে। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালে ৩০ অক্টোবর একটি বিভাগীয় মামলা হয়।

২০২৪ সালের ৫ মার্চ তালতলা উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চিত করা ও ৫জন নারী সহকারী শিক্ষকের শরীরের স্পর্শকাতর অংশের ছবি তোলাসহ ৮টি পৃথক অভিযোগ তার নামে আরও একটি বিভাগীয় মামলা হয়।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে কিরীটী রায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন মামলা থেকে নিষ্কিৃতি পেয়ে উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের বাঁধায় ঐ স্কুলে যোগদান করতে পারেননি। ৩০ সেপ্টেম্বর তাকে আড়ংঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। ১ অক্টোবর  এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের বাঁধার তাকে পুলিশ প্রহারায় স্কুল থেকে উদ্ধার করা হয়।

এরপর থানা শিক্ষা অফিসে তার হাজিরার ব্যবস্থা করা হয়। পরে তাকে নুরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি ককেয়জন শিক্ষকের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। এরপর তাকে কৌশলে রায়ের মহল বিদ্যানিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করানো হয়।

 গত ৪ নভেম্বর ঐ স্কুল সংলগ্ন রাস্তায় কয়েকজন তাকে ধাক্কা মারে বলে জানা যায়। এই ঘটনার পর থেকে টানা ৬ মাস চিকিৎসা ছুটিতে ছিলেন। ২৮ নভেম্বর তাকে পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে সংযুক্তিতে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়। তখন পিটিআই সুপার তাকে অন্যত্র বদলির জন্য ডিজি বরাবর আবেদন করেন। এই সময় কিরীটী রায় পিটিআই সুপারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির খবর প্রকাশ করিয়ে অতিসংগোপনে ২০২৫ সালের ১১ জানুয়ারি ঐ স্কুলে যোগদান করেন। তবে তিনি ঐ স্কুলে যাননি।

২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে বরখাস্ত এবং ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর থেকে অনুমতি ছাড়া চিকিৎসা ছুটিতে থাকার কারণে এই শিক্ষক টানা ১ বছর ৭ মাস স্কুল কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *