
সৈয়দ মুজিবুর রহমান দুলাল, লাকসামঃ কুমিল্লার লাকসাম ও মনোহরগঞ্জে বিএনপির ওয়ার্ড কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। শনিবার (২৬ এপ্রিল) লাকসাম উপজেলার আজগরা এবং মনোহরগঞ্জের বাইশগাঁও ও নাথেরপেটুয়া ইউনিয়নে পৃথক এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় নেতাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ওইদিন সকালে লাকসামের আজগরা হাজি আলতাফ আলী হাই স্কুল ও কলেজ মাঠে উপজেলার আজগরা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি গঠন উপলক্ষে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিলকে ঘিরে কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম (চৈতী কালাম) ও সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) আনোরুল আজিমের অনুসারীদের মধ্যে ভোট প্রদান নিয়ে বাকবিতণ্ডা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে দু’পক্ষের অনুসারী কর্মী-সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় উভয় পক্ষের অনুসারী স্থানীয় যুবদল ও ছাত্রদলের কমপক্ষে ৬ নেতাকর্মী আহত হন। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সংঘর্ষের মাঝেই ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা হয়। তবে নেতাকর্মীদের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
লাকসাম উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শাহ আলম জানান,শনিবার (২৬ এপ্রিল) আজগরা স্কুল ও কলেজ মাঠে বিএনপির ওয়ার্ড কমিটি গঠন উপলক্ষে কাউন্সিল চলছিল। ঠিক তখন বাহিরে প্রার্থীর সমর্থন নিয়ে স্থানীয় যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও সামান্য হাতাহাতি হয়। পরে দায়িত্বশীলদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে এতে কাউন্সিলে কোনো সমস্যা হয়নি।
এ ছাড়া একইদিন (শনিবার) সকালে মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাইশগাঁও ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি গঠন উপলক্ষে আয়োজিত কাউন্সিলে দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে চারজন গুরুতর আহত হন। সংঘর্ষে আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে বাইশগাঁও ও আশপাশের এলাকার দলের উভয়পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান, শনিবার সকালে মনোহরগঞ্জের বাইশগাঁও ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি গঠন উপলক্ষে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে সভাপতি পদে বিএনপি নেতা সুলতান আহমেদ এবং হোসাইন মোহাম্মদ হেলাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোট প্রদান ও সমর্থন নিয়ে সুলতান ও হেলালের অনুসারীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। দফায় দফায় সংঘর্ষে সুলতানের অনুসারী এক কর্মী এবং হেলালের অনুসারী তিন কর্মী গুরুতর আহত হন।
বাইশগাঁও ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি সুমন পাটোয়ারী বলেন, কমিটি ঘোষণা শেষে হঠাৎ সুলতান ও হেলালের অনুসারী কর্মী-সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে চার নেতাকর্মী আহত হন। নিজেদের মধ্যে এমন সংঘর্ষ, হানাহানী অত্যন্ত দুঃখজনক।
অপরদিকে একই উপজেলার নাথেরপেটুয়া ইউনিয়নের কান্দি স্কুল মাঠে ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কাউন্সিলেও আবুল কালাম ও আনোরুল আজিমের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
নাথেরপেটুয়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মো. হারুনুর রশিদ জানান, শনিবার (২৬ এপ্রিল) সকালে স্থানীয় কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নাথেরপেটুয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি গঠন উপলক্ষে কাউন্সিল অনুষ্ঠান শুরু হয়। হঠাৎ দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরে জেলার নেতৃবৃন্দ কমিটি ঘোষণা না করে কাউন্সিল অসমাপ্ত রেখেই স্থান ত্যাগ করেন।
এ ছাড়াও আগেরদিন শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) লাকসাম পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলে গাজিমুড়া মাদ্রাসা মাঠে মিজানুর রহমান নামে স্থানীয় এক বিএনপি কর্মীর জাতীয় পরিচয়পত্র চাওয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলা বিএনপির জনৈক নেতার সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে মিজানুর রহমানকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ ওঠে উপজেলা বিএনপির ওই নেতাসহ আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মিজানুর রহমান বাদই হয়ে ৮জনের বিরুদ্ধে লাকসাম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এই ব্যাপারে লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজনীন সুলতানা অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ঘটনার সত্যতা তদন্তে থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।