Tuesday, April 1
Shadow

ঢাকায় বড় ভূমিকম্প হলে ২ লাখ মৃত্যু, আটকা পড়বে ৭ লাখ

বাংলাদেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা প্রবল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চল উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ভূমিকম্প হলে তাৎক্ষণিকভাবে ২ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে, আর ৫-৭ লাখ মানুষ ভবনে আটকা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সম্প্রতি দেশে ভূমিকম্পের ঘটনা বেড়েছে। এক মাসে পাঁচবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, সবশেষ শুক্রবার ১২টা ২১ মিনিটে কম্পন টের পাওয়া যায়। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে শক্তিশালী ভূমিকম্পে হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্যও সতর্কবার্তা হতে পারে।

ভূতাত্ত্বিক গবেষণা বলছে, বাংলাদেশ তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত, যেখানে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের শক্তি সঞ্চিত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ৭ থেকে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প ঢাকায় ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। ঢাকার জনঘনত্ব অত্যন্ত বেশি, যা প্রাণহানির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৩৫-৪০ শতাংশ ভবন ভূমিকম্প সহনীয় নয়। স্কুল ও গার্মেন্টস ভবনগুলোর ৩৫ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে তুরস্কের মতো ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

সরকারি উদ্যোগে ভূমিকম্প মোকাবিলায় কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হলেও বাস্তবায়নের গতি ধীর। জরুরি টেলিফোন নম্বর সংরক্ষণ, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা জোরদার, ভবনের কাঠামোগত নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ভূমিকম্প প্রতিরোধী নির্মাণ কোড মেনে ভবন নির্মাণের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, ভূমিকম্প মোকাবিলায় সব পর্যায়ে প্রস্তুতি ও সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। বিশেষত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো দ্রুত সংস্কার না করলে বিপর্যয় এড়ানো কঠিন হবে।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, এই মাত্রার ভূমিকম্প হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঢাকা নগরী। অপরিকল্পিত শহর এবং বিল্ডিং কোড মেনে অনেক স্থাপনা নির্মাণ না হওয়ায় এখানকার ১ শতাংশ বিল্ডিংও যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে দুই লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটবে। ৫-৭ লাখ মানুষ বিভিন্ন বিল্ডিংয়ে আটকা পড়বে। পরবর্তী সময়ে খাদ্যাভাব, অগ্নিকাণ্ডসহ নানা কারণে তাদেরও একটি বড় অংশের মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে ২০০৮ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে দেশে ভূমিকম্প হলে তার জন্য প্রস্তুতি কেমন-এ বিষয়ে একটি কমিটি করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। সেই কমিটি এখন কাজ করছে। হাইকোর্টের আরেক নির্দেশনায় ভূমিকম্প হলে পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে, কী কী যন্ত্রপাতি আছে, নগরীকে কীভাবে আবার আবাসযোগ্য করা হবে-সেসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এসব বিষয়ে এরই মধ্যে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। বর্তমানে ১২ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প চলমান আছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। জানা যায়, দেশে এখন যে লেডার আছে, তা দিয়ে ২০তলা পর্যন্ত ওঠা যায়। ৬২ হাজারের টার্গেট নিয়ে এখন পর্যন্ত ৪৮ হাজার আরবান ভলান্টিয়ারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ হলে মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএম) নিতাই চন্দ্র দে সরকার বলেন, যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে-বিষয়টি অনেক আগে থেকেই বলা হয়েছে। আমরা সে বিবেচনায় রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট, তাৎক্ষণিকভাবে কী করা উচিত-সেসব বিষয়ে পরিকল্পনা করেছি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ রংপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জের জন্য রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট করা হয়েছে।

এদিকে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশেও ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। বিশেষত চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকা অঞ্চল উচ্চঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি দেশে ভূমিকম্প মোকাবিলায় সব পর্যায়ে পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ ও সচেতনতা তৈরির জন্য ৯টি বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে। সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২০ অনুযায়ী ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন নির্মাণ করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরোনো ভবনগুলোর সংস্কার ও শক্তিশালী করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সব বহুতল ও বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। ইউটিলিটি সার্ভিস যেমন গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের লাইনের সঠিকতা নিশ্চিত করতে হবে। ভূমিকম্প চলাকালীন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি পর্যায়ে বিভিন্ন করণীয় সম্পর্কে নিয়মিত মহড়া অনুশীলন ও প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। জরুরি টেলিফোন নম্বর যেমন ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স, পুলিশ, হাসাপাতাল ও অন্যান্য জরুরি নম্বর ব্যক্তিগত পর্যায়ের পাশাপাশি সব ভবন বা স্থাপনায় সংরক্ষণ এবং তা দৃশ্যমান স্থানে লিখে রাখতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *