Wednesday, March 12

এআই দিয়ে নতুন ওষুধ তৈরি করছেন চীনের গবেষকরা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় এখন বিশ্বসেরাদের কাতারে আছে চীন। তবে শুধু রোবট কিংবা কনটেন্ট তৈরি নয়, চীনের এআই ব্যবহার করা হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানেও। সম্প্রতি চ্যচিয়াং প্রদেশের লিয়াংচু ল্যাবরেটরিতে এ আই ব্যবহার করে বিরল কিছু রোগের ওষুধ আবিষ্কারের কাজ শুরু হয়েছে। এআই অ্যালগরিদমের মাধ্যমে ওষুধের ডিজাইন ও পরীক্ষায় পাওয়া গেছে দারুণ সাফল্য। চীনা গবেষকরা জানালেন, আগে যেখানে ওষুধ তৈরিতে ১৫ থেকে ২০ বছর লাগতো, এআই প্রযুক্তিতে তা ৩ থেকে ৫ বছরেই সম্ভব হচ্ছে।

চ্যচিয়াং প্রদেশের হাংচৌ শহরের একটি গবেষণা ল্যাবরেটরিতে ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। এতে করে নতুন ওষুধ তৈরির সময়সীমা কমিয়ে আসছে আশাতীত গতিতে। বিশেষ করে  প্রোজেরিয়া নামে একটি বিরল জিনগত রোগের চিকিৎসার জন্য তৈরি করা হচ্ছে ওষুধ, যা শিশুদের দ্রুত বার্ধক্যের শিকার করে তোলে।

চ্যচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আছে লিয়াংচু ল্যাবরেটরি। ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত গবেষণাগারটি চ্যচিয়াং প্রভিনিসিয়াল সিস্টেম মেডিসিন অ্যান্ড প্রিসিশন ডায়াগনসিস ল্যাবরেটরি হিসেবেও পরিচিত।

এআই অ্যালগরিদম ব্যবহার করে, এই ল্যাবরেটরি প্রোজেরিয়ার চিকিৎসায় নতুন একটি ওষুধের ডিজাইন করেছে। পরীক্ষাগারে ব্যতিক্রমী সাফল্য অর্জন করেছে এটি। শিগগিরই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে নেওয়া হবে এই ওষুধ।

লিয়াংচু ল্যাবরেটরির গবেষক শেন নিং জানালেন, ‘আমাদের প্রকল্পটি প্রায় তিন বছর ধরে চলছে, যার ৯০ শতাংশ সময় প্রি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার পেছনে ব্যয় হয়েছে। এআই অ্যালগরিদমের জন্য আমাদের ওষুধ তৈরির প্রক্রিয়া দ্রুত ও কার্যকর হয়েছে।’

শেনের মতে, বিশ্বজুড়ে সাত হাজারের বেশি বিরল রোগ রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কার্যকর চিকিৎসা নেই। লক্ষ্য নির্ধারণ, ওষুধ স্ক্রিনিং, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এবং নিয়ন্ত্রক অনুমোদনের দীর্ঘ প্রক্রিয়াটি ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। এখন, এআই বড় মডেলগুলোর মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা সম্ভব হচ্ছে।

শেন নিং আরও জানালেন, ‘আগে বিশাল পরিসরে স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ছোট আণবিক ওষুধ তৈরিতে ১৫ থেকে ২০ বছর সময় লাগত। এতে ব্যর্থতার হারও ছিল বেশি। এখন, এআই অ্যালগরিদমের সহায়তায়, ওষুধ উন্নয়নের সময় তিন থেকে পাঁচ বছরে নেমে এসেছে।’

২০২১ সালে, লিয়াংচু ল্যাবরেটরি একটি বৈচিত্র্যময় দল গঠন করে, যেখানে ক্লিনিক্যাল মেডিসিন, জীববিজ্ঞান, গণিত, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও পরিসংখ্যানের বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। তারপর থেকে, দলটি নির্ভুল রোগ নির্ণয় ও জিনগত ও বিরল রোগের চিকিৎসার জন্য একাধিক ডিপ লার্নিং এআই অ্যালগরিদম তৈরি করেছে।

শেন নিং বললেন, ‘আমরা বিভিন্ন রোগের তথ্য এবং এমনকি পৃথক রোগীদের উপাত্ত বিশ্লেষণ করি। আমাদের আশা, এআই সরঞ্জামের মাধ্যমে আমরা প্রতিটি রোগীর ধরন বুঝে আলাদা চিকিৎসা দিতে পারব।’

চ্যচিয়াংয়ের গবেষকরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও জটিল ও বিরল রোগের চিকিৎসা সহজলভ্য হবে। ওষুধ উন্নয়নের সময় ও ব্যয় কমিয়ে আনার পাশাপাশি, এআই রোগীদের জন্য যার যার রোগের ধরনবুঝে কার্যকর ওষুধও নিশ্চিত করা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *