Saturday, June 7
Shadow

বিডার  চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী দিলেন ৮ মাসের কাজের খতিয়ান

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে দেশে ঠিক কতটা বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে—তা নিয়ে সম্প্রতি নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কাছে এ বিষয়ে ‘গত ৮ মাসের আমলনামা’ চেয়েছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।

তাঁর প্রশ্নের জবাবে বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন (আশিক চৌধুরী) প্রকাশ করেছেন এই সময়ের কাজের একটি বিশদ বিবরণ। শুক্রবার (৬ জুন) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ‘আমাদের আমলনামা’ শিরোনামে একটি বিস্তারিত স্ট্যাটাসে তুলে ধরেছেন বিডার কাজের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেছেন, ‘‘তথ্য যাচাই করে নিন। বিভ্রান্ত হবেন না। আমাদের প্রশ্ন করুন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।’’

আজকের কাগজের পাঠকদের জন্য বিডার এই ৮ মাসের রিপোর্ট কার্ডে তুলে ধরা হল—

প্রধান তিনটি খাত –

. বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়তে নীতি ও বাস্তবায়নে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ
. বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের সমস্যার সমাধান করে তাদের বিনিয়োগে অনুপ্রাণিত করা
. দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়ন ও একটি শক্তিশালী বিনিয়োগ পাইপলাইন গঠন

ক. নীতিগত ও কাঠামোগত পদক্ষেপ: প্রথমেই দেশি-বিদেশি ২০০ জন উদ্যোক্তা ও সিইওদের পরামর্শে চিহ্নিত করা হয় ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর মধ্যে ১৮টি কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই এগিয়েছে, ৭টি কাজ নির্ধারিত সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে এবং ৫টি কাজে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে বিডা।

প্রতি দুই মাস পরপর “স্টেট অব ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট” নামে ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে অগ্রগতি ভাগাভাগি করছে বিডা।

যেসব খাতে নির্ধারিত সময়ের তুলনায় অগ্রগতি বেশি:

১. বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বাধা ও সমাধান নিয়ে আলোচনা
২. ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলের বদলে ৫টিতে ফোকাস; পরিকাঠামো উন্নয়ন ও রোডম্যাপ প্রকাশ
৩. আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় বৈঠকের মাসিক আয়োজন
৪. গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগকারীদের জন্য আলাদা সমস্যা সমাধান টিম
৫. ওয়ান স্টপ সার্ভিস পোর্টালের কার্যকারিতা প্রকাশ
৬. কোন খাতে বিনিয়োগ ভালো হবে—এ নিয়ে এফডিআই হিটম্যাপ ও সেমিকন্ডাক্টর টাস্কফোর্স
৭. বৈদেশিক ঋণ গ্রহণে দ্রুততা ও নমনীয়তা আনয়ন
৮. এনবিআর-এ গ্রিন চ্যানেল চালু
৯. ডিজিটাল ইনভয়েসিং চালু
১০. বন্দর কৌশল ও ফ্রি ট্রেড জোন
১১. ব্যবসা শুরুতে প্রয়োজনীয় অনুমোদন ডিজিটালাইজেশন
১২. বিডায় রিসার্চ উইং চালু
১৩. বিনিয়োগে প্রণোদনা প্যাকেজ
১৪. ঢাকায় ইনভেস্টমেন্ট সামিট
১৫. বিডা ও বেজাকে কাগজমুক্ত, কর্মীদের জন্য ডে কেয়ার, ক্যান্টিন
১৬. ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া, নতুন লোগো
১৭. বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি বিডায় বসানো ও ফোকাল পার্সন নিযুক্তি
১৮. ওয়ার্ক পারমিট ও সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স উন্নয়ন

যেসব পদক্ষেপ সময়মতো চলছে (অন ট্র্যাক):

১৯. গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগকারীদের জন্য রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট টিম
২০. ওয়ান স্টপ সার্ভিসকে একীভূতকরণ
২১. লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া সহজীকরণ
২২. অলাভজনক সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারীকরণ
২৩. মার্জার ও একুইজিশন রুল সংস্কার
২৪. বিডা ও বেজার আইন আধুনিকীকরণ
২৫. বিডা, বেজা, বেপজা, হাইটেক পার্ক ও পিপিপি অথরিটির সমন্বয়

যেসব খাতে কিছুটা পিছিয়ে বিডা:

২৬. প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল
২৭. ট্যাক্স রুলস: ইনকিউবেশন, গ্র্যান্ডফাদারিং, সানসেট রুলস
২৮. পুঁজি প্রত্যাবাসন নীতির সংস্কার
২৯. বিডার সাংগঠনিক কাঠামো আধুনিকীকরণ
৩০. জ্বালানি নিরাপত্তা কৌশল (এনার্জি সিকিউরিটি)

এই সব পদক্ষেপে বিডা কাজ করছে বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি, বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও দেশীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। অনেকে কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই দেশের জন্য কাজ করছেন।

. বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের সমস্যার সমাধান

নতুন বিনিয়োগকারীরা আসার আগে বিদ্যমানরা কতটা সন্তুষ্ট—তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিডা ইতিমধ্যে ইয়ংওয়ান গ্রুপ, মেটলাইফ, শেভরন, লাফার্জ, বাংলাদেশ অটোমোবাইলসের মতো বড় কোম্পানির জটিলতা সমাধান করেছে।

নীতি সংস্কারেও বিডা কাজ করছে—যেমন:

  • ফুল ও পার্শিয়াল বন্ডেড ওয়্যারহাউস নীতির সংস্কার
  • ম্যান-মেড ফাইবারের ইম্পোর্ট ডিউটি হ্রাস
  • ইনসেন্টিভ প্রদানে নো-ডিডাকশন সার্টিফিকেট সহজীকরণ

এর কিছু প্রতিফলন ২০২৫-২৬ বাজেটে দেখা যাবে।

গ. বিনিয়োগ পাইপলাইন ও ভাবমূর্তি উন্নয়ন

ইতিপূর্বে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ট্র্যাক করা হতো না। এবার বিডা উদ্যোগ নিয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক, মিলনমেলা ও সামিট আয়োজনের।

দুইটি সামিট আয়োজন করা হয়েছে। ১. একটি সবার জন্য ২. একটি চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য

এই দুই ইভেন্টে মোট ৬৭৫ জন বিনিয়োগকারী অংশ নেন, যার মধ্যে ৩০০-এর বেশি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে।

ইতোমধ্যে তিনটি নতুন বিনিয়োগ চূড়ান্ত হয়েছে (গার্মেন্টস, এয়ারলাইন্স অ্যামেনিটি কিট, ঘড়ি কারখানা)। সম্ভাব্য কর্মসংস্থান হবে প্রায় ১০,০০০। এছাড়া ১৫টি প্রকল্প চূড়ান্ত হওয়ার অপেক্ষায়।

বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ একদিনে আসে না। যারা এ খাতে কাজ করেন, তারা জানেন—এটা ধৈর্যের খেলা।’’

সংক্ষেপে বলা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারে বিডার ৮ মাসে কিছু কার্যক্রম দৃষ্টান্তমূলক অগ্রগতি দেখিয়েছে, কিছু জায়গায় সময়মতো চলছে এবং কিছু জায়গায় এখনো পিছিয়ে। তবে একটি শক্তিশালী বিনিয়োগ কাঠামো তৈরির যে ভিত্তি গড়া হয়েছে, তা ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *