
এস এ বিপ্লব, নারায়ণগঞ্জ
(১) সাজ রোজ সকালে কোচিং পড়তে যায়। আজ তার ব্যতিক্রম নয়।তবে কোচিং এ আজ ব্যতিক্রম ছিল। সেটা হলো আজ নতুন একটি মেয়ে এলো পড়তে যাকে এই প্রথম দেখলাম। টিচার আমাদের সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।মেয়ে টি এম এস এস পড়ছে সরকারি তোলারাম কলেজে। সাজ মনে মনে বলছে আমিও তো এই কলেজে পড়ি কিন্তু কখনো দেখিনি তো।
মেয়ে : নিজের নাম বলল। সাজের পিছনের সিটে বসল। নাম শাহনাজ।পিছনে বসাতে তাকিয়ে দেখি এতো সুন্দর মেয়েটির চেহেরা যেন, চাঁদ।
সাজ : তাই সাজ মনে মনে ঠিক করে ফেলে, মেয়ে টিকে চাঁদ বলেই ডাকবে। এরপর থেকে সাজ মেয়ে টিকে চাঁদ বলেই ডাকত। মেয়ে টিও কিছু বলত না। চাঁদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ নবীনগর এলাকাতে।
(২) রমজান মাস তবুও কোচিং পড়তে যেতে হয়।আজ পড়া শেষে চাঁদ বলল সাজ ভাই আপনাকে কিন্তু এবারের ঈদে আমাদের বাসায় যেতে হবে।
সাজ: ঈদ আসুক তো, আর বলেছ যখন যাবো। যদিও এক মাস যেতে আর কদিন।দেখতে দেখতে ঈদ এসে যায়।
চাঁদ : ঈদের দিন সকালে ফোন করে,চাঁদ ঈদ মোবারক জানাল। আর বলল কখন আসবেন।
সাজ: ঈদ মোবারক বলে – বলল আরে বোকা ঈদের দিন তো কেউ বেড়াতে যায় না। কাল যাবো, ফোন খোলা রেখ,আর ফোন দিলে ধরিও।কেননা আমি তো আর তোমাদের এলাকা চিনি না।
চাঁদ : ওকে আমি পথ চেয়ে থাকব, ঠিকানা তো জানা আছে আর ফোন খোলা থাকবে।
(৩) সাজ -: পরের দিন বিকেল ৪.৩০ মিনিটে সাজ বের হয়।পরনে ছিল পাঞ্জাবি আর জিন্সের প্যান্ট। নতুন এলাকা তাই আসতে আসতে ছয়টা বেজে গেল।
চাঁদ :- সাজ, চাঁদ কে ফোন দিতেই গেইটের সামনে হাজির। বলল এতো দেরি কেন? এই বলেই, বলল ভিতরে আসেন। ভিতরে যেতেই ওর বাবা- মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। আর পুরো বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখাল। এতো বড় বাড়ি এ এলাকাতে ওদের টাই আছে।শেষে চাঁদের নিজে ঘরে নিয়ে বসাল। কিছুসময় পর সেই খাবার নিয়ে আসল। এতো খাবার দেখে ঈদ না মনে হয়ে মনে হলো জামাই খাবার। খাওয়া আর কথায় রাত ৮ টা বেজে যায়।
সাজ: এবার যে যেতে হবে, এই বলে উঠে দাঁড়াতেই বিদ্যুৎ চলে যায়। চাঁদ মোমবাতি হাতে নিয়ে এসে সামনে দাড়াতেই মোমের আলোতে নয, চাঁদের সৌন্দর্যেই ঘর আলোকিত হয়ে যায়। তাই সাজ বলল, কি দরকার মোমের, যেখানে চাঁদের আলো আছে।
চাঁদ : বলে উঠল আজ না গেলে নয় কি? থেকে যান, অবশ্য জোর করব না।হয় আজ থাকেন না হয় আরেকটু বসুন।
সাজ : প্রথমবার এলাম, বাড়িও চিনে গেলাম। পরে না হয় আর একদিন এসে থাকব।এই বলে বলল চলি।
চাঁদ : চলি না, বলেন আসি।
সাজ: ওকে, আসি বায়।কলেজ খুললে দেখা হবে।
চাঁদ : ওকে বায।
(৪) সকাল ১০টার পর চাঁদ এলো, যদিও পূর্বে ফোনে বলেছিল তবে বিশেষ কারন টা বলেেনি।তাই সাজ বলল, কি ম্যাডাম এতো জরুরী তলব।
চাঁদ – একটি খবর আছে যা শুনলে চমকে যাবেন।
সাজ – কি খবর, এক্সামের কোন খবর, কি বল রুটিন দিয়ে ফেলেছে…..
চাঁদ — আরে খবর না শুনেই, শুধুই বকবক করে যাচ্ছেন।
সাজ– ও-ও হে তাই তো,তা বল তোমার সেই খবর
চাঁদ– বিয়ের খবর, এই বলে বিয়ের কার্ড বের করে দিল।
সাজ – তোমার বোনের বিয়ে, তার দাওয়াত, ভালোই হলো অনেক দিন পর একটা দাওয়াত খেতে যাবো।সাজ এতো বোকা কার্ড হাতে নিয়েও বুজতে পারে না।
চাঁদ — জি, না আমার নিজের। আসবেন কিন্তু।
সাজ- নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারল না, যেন আকাশ মাথায় পড়ল।তবে জানতে চাইল এক্সাম কি দিবে না?
চাঁদ – হে এক্সাম দিব, আচ্ছা আজ চলি আরো অনেকেই কার্ড দিতে হবে তো।
সাজ – চাঁদের যাওয়ার পথে এগিয়ে দিতে গিয়ে বলল, একটা কথা বলি?
চাঁদ — আমার কথা শেষ না হতেই স্টপ বলে থামিয়ে দিয়ে বলল, জানি কি বলবেন? আপনিও এই রকম একটা আয়োজন করতে চেয়েছেন আমাকে নিয়ে,, এইতো… এই বলে চাঁদ চলে গেল।
সাজ : মনে মনে বলল তার মানে চাঁদ সব জানে। আবেগ জনিত ভাবে সাজ কার্ড টা হাতে নিয়ে…… সামনে আসতেই, দেখা হলো সাজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে।
বন্ধু- কিরে দোস্ত হাতে কি, এই বলে হাত থেকে টেনে নিয়ে পড়া শুরু করল।পড়া শেষে বলল কি রে তুই না চাঁদ কে……ভালোবাসো….
সাজ — থামিয়ে দিয়ে বলল, ভালোবাসি এই তো! কিন্তু আমি যে বন্ধু অলস্কোয়ার প্রতিবন্ধী।
বন্ধু:- না, না, তুই — তুই– তুই তোর চাঁদের প্রতিবন্ধী।
(৫) এক মাস পর চাঁদ তার স্বামী কে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। এজন্য চাঁদ কে আরেক বার বিশেষ ধন্যবাদ, কেননা মেয়ে মানুষ বিয়ে হলেই পর। সবাই তো আর স্বামীকে পরিচয় করিয়ে দেয় না। সবাই একসাথে চা- কফি পান করা হলো। পরিশেষে বিদায় বেলায়, চাঁদ কে বললাম আর কি আমাদের দেখা হবে না?
চাঁদ — ইচ্ছে আছে আরেকবার দেখা করার, কিন্তু কবে তা জানি না। এই বলে বিদায়……
(৬) প্রায় এক বছর পর হঠাৎ আমাকে ফোন দিয়ে যেতে বলল, হাসপাতালে। সাজও গেল, শত হলেও ভালোবাসার মানুষ, গিয়ে দেখে চাঁদ এক সন্তানের মা হয়েছে, চাঁদের কোল আলো করে একটি ছেলে জম্ম নিয়েছে।
সাজ – তুমি আমাকে পূর্বে বলতে পারতে।
চাঁদ — ১মত বলেছিলাম আরেক বার দেখা করব তাই, আর ২য়ত সারপ্রাইজ দিয়ে চমকে দিলাম। ভালো হয়েছে না।
সাজ — চুপ কোন কথা বলছে না, মনে মনে অনুসূচনা চাঁদের ছেলে কে কিছু দিতে পারলাম না, তাই সাজ বলে উঠল আচ্ছা চলি।
চাঁদ :- চলে যাবেন, ওকে বিদায় থাকল, ভালো থাকবেন। এরপর আর দেখা হবে কিনা জানি না।
সাজ– বিদায় বেলায় হঠাৎ আকস্মিক ভাবে বলে উঠল, আচ্ছা চাঁদ তোমার ছেলে কি প্রতিবন্ধী হয়েছে?
চাঁদ — কি বলেন, প্রতিবন্ধী হবে কেন?
সাজ- না, ঠিক তা না,আর আমি সেটা চাইব ও না।আসলে মানুষ জম্মালেই প্রতিবন্ধী হয় কি? অনেক সময় এই সমাজও প্রতিবন্ধী গড়ে তোলে, প্রতিবন্ধী বানায় বা বানিয়ে থাকে। এই বলে বিদায় নিল সাজ।
কিছু দিন পর সাজের ফোন চুরি হয়ে যায়, ফলে নতুন সিম নেয়,সুতরাং চাঁদের নাম্বার সেটাও হারাতে হয়।
সাজ ;; মনের টানে প্রায় অনেকবার চেয়েছিল চাঁদের বাড়িতে যেতে ওকে একবার দেখে আসতে। কিন্তু সাহস পায় নি,সাজ যে প্রতিবন্ধী।
হা! হা!হা! হাসতে হাসতে চিৎকার দিয়ে বলল,চাঁদ তোমার দোলনায় দোলে দোলনা আর আমার জীবনের দোলনায় দোলে খেলনা। আসলে আমি যে, বাবা- মা হীন, অর্থহীন, পদহীন, সম্পদহীন এক প্রতিবন্ধী। নো প্রতিবন্ধী। এ সাজ শুধুই চাঁদের প্রতিবন্ধী!