Saturday, August 2
Shadow

তবুও তুমি এলে

একেএম নাজমুল আলম 

রাত দশটা পেরিয়েছে। কমলাপুর স্টেশন ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে আসছে। সিয়াম প্ল্যাটফর্মে এক কোণে বসে আছে—হাতে এক গ্লাস চা, চোখে বিরহের ছায়া।

নীলার সঙ্গে তার শেষ দেখা আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে।

একটি ভুল বোঝাবুঝি, একটি তিক্ত বাক্য, আর একরাশ অভিমান তাদের আলাদা করে দিয়েছিল।

নীলা বলেছিল, “তুমি কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসো, নাকি শুধু তোমার ইগোর অংশ আমি?”

সিয়াম সেদিন চুপ ছিল। আর সেই চুপ থাকাই ছিল সবচেয়ে বড় উত্তর।

নীলা চলে গিয়েছিল ঢাকা ছেড়ে—এক চিঠি রেখে, “যদি সত্যিই ভালোবাসো, একদিন ঠিক দেখা হবে।”

সিয়াম আজও সেই চিঠি যত্ন করে রেখে দিয়েছে। মাঝে মাঝে পড়ে—চোখ ভিজে যায়।

আজ হঠাৎ ফোনে একটা অজানা নম্বর থেকে এসেছিল এসএমএস:

“শেষ ট্রেনটা রাত ১১:৪৫-এ ছাড়বে। আমি আসবো কিনা, জানি না। কিন্তু তুমিই বলেছিলে—শেষ সুযোগটা যেন আমি দেই।”

সিয়াম জানে, এই ট্রেনটা নীলার শহর থেকে ঢাকায় আসে।

সে জানে না, নীলা আসবে কিনা।

তবু সে অপেক্ষা করছে।

চোখ আটকে আছে ট্রেন লাইনের দিকে।

ঘড়ির কাঁটা ১১:৪৫ পেরোল।

ট্রেন এল। থামল।

মানুষ নামছে, ছুটছে, কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না।

সিয়ামের চোখ এক মুহূর্তে স্থির হয়ে গেল।

সব কোলাহলের মাঝখানে, লাল রঙের সালওয়ার কামিজে এক মেয়ে।

হাতে একটা ছোট ব্যাগ।

চোখে জল।

নীলা।

সিয়াম দাঁড়িয়ে পড়ল। কিন্তু হেঁটে গেল না।

নীলা ধীরে ধীরে এগিয়ে এল। একদম সামনে এসে দাঁড়াল।

— “তুমি চুপ কেন?”

— “ভয়ে।”

— “কিসের ভয়?”

— “তুমি আবার চলে যাবে।”

— “এইবার ফিরিনি যাওয়ার জন্য। এসেছি থেকো বলার জন্য।”

সিয়ামের চোখ ভিজে গেল।

সে বলল, “তুমি আসবে, জানতাম না। কিন্তু বিশ্বাস করতাম।”

নীলা ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে দিল।

এই শহরের হাজার গল্পের মাঝে আরেকটি গল্প তৈরি হলো আজ।

ট্রেন চলে গেল। প্ল্যাটফর্ম ফাঁকা হয়ে এল।

কিন্তু এক জোড়া চোখে ছিল পূর্ণতা।

শেষ ট্রেনটা ঠিক এসেছিল।

তবে শেষ দেখা হয়নি—হয়েছে নতুন শুরুর অপেক্ষা।

FacebookMastodonEmailShare

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *