Saturday, August 2
Shadow

হলুদগাছ একটি প্রাকৃতিক ওষুধের ভাণ্ডার

একেএম নাজমুল আলম

বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক বাড়ির উঠানে দেখা মেলে পরিচিত ভেষজ গাছ হলুদগাছের (Curcuma longa)। সাধারণত মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হলেও, এই গাছের রয়েছে বিস্ময়কর সব ঔষধি গুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা। প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিৎসায় হলুদ ছিল অপরিহার্য।

বৈজ্ঞানিক নাম: Curcuma longa

পরিবার: Zingiberaceae (আদা গোত্রের উদ্ভিদ)

মূল ব্যবহার্য অংশ: গাছের কন্দ (রাইজোম), অর্থাৎ মূল অংশ

চাষ: প্রধানত ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়ায়

গন্ধ ও স্বাদ: তীব্র গন্ধযুক্ত ও কিছুটা ঝাঁঝালো স্বাদের

প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট:

কাটা বা ছেঁড়া স্থানে গুঁড়ো হলুদ দিলে ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে।

শরীর ডিটক্সে সহায়ক:

হলুদ লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, দেহের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে।

জয়েন্ট ও বাত ব্যথা উপশমে:

হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন উপাদান প্রদাহনাশক (anti-inflammatory)। এটি বাতজনিত ব্যথায় দারুণ কার্যকর।

 ত্বক ও চর্ম রোগে উপকারী:

হলুদ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, ব্রণ ও দাগ দূর করতে সহায়তা করে। ঘরোয়া ফেসপ্যাকে এটি বহুল ব্যবহৃত।

ইমিউন সিস্টেম বাড়ায়:

নিয়মিত হলুদ খাওয়া রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:

কারকিউমিন ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়িয়ে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে 

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন (NCBI) ও জার্নাল অফ মেডিসিনাল ফুড এর গবেষণায় দেখা গেছে, কারকিউমিন ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিকে হ্রাস করতে পারে, এবং আলঝেইমার ও হৃদরোগ প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে।

অতিরিক্ত হলে গ্যাস্ট্রিক বা পাকস্থলীতে জ্বালাভাব সৃষ্টি করতে পারে।

গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত হলুদ গ্রহণ না করাই উত্তম।

হলুদ একটি কম রক্ষণাবেক্ষণযুক্ত ফসল হওয়ায় কৃষকেরা অল্প খরচে লাভবান হতে পারেন। দেশে ভেষজ ফার্মিং-এর প্রসারের সাথে সাথে হলুদের চাষও বাড়ছে। বিশেষ করে কুষ্টিয়া, বরিশাল, যশোর, মৌলভীবাজার ও দিনাজপুরে বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে।

মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা হলুদগাছের এই কন্দ যেন এক স্বর্ণখনি। প্রাকৃতিক এই উপাদানকে ঘিরে তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের একটি নতুন ভেষজ শিল্প, যা হতে পারে স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির যুগান্তকারী সংযোজন।

হেলদি থাকুন, হলুদের সঙ্গেই থাকুন।

FacebookMastodonEmailShare

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *