
চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের উরুমছিতে হয়ে গেল আন্তর্জাতিক স্নাইপার প্রতিযোগিতা ‘শার্প ব্লেড-২০২৫’। বিশ্বের ২০টিরও বেশি দেশের পেশাদার স্নাইপাররা প্রতিযোগিতায় লড়েছেন চারটি ভিন্ন ইভেন্টে।
চীনের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, যেখানে পিপলস লিবারেশন আর্মি ও সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর ১২টি দলও অংশ নেয়।
‘নদী পার হওয়ার সময় আক্রমণ’ নামের একটি ইভেন্টে স্নাইপারদের ভূমিকাটা ছিল এমন—শত্রুপক্ষ সমুদ্রতীরে নামার মুহূর্তে তাদের স্থায়ী অবস্থান গড়ে তোলার আগেই স্নাইপারদের দ্রুত হামলা চালাতে হবে। এতে অংশগ্রহণকারীদের ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে পাঁচটি লক্ষ্যবস্তুতে গুলি চালাতে হয়।
চীনা স্নাইপার খাং খাইনিং জানালেন, ‘এটি মূলত একটি মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা, নিজের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। সময় তুলনামূলকভাবে কম, এবং লক্ষ্যবস্তুগুলো থাকে বিভিন্ন দূরত্বে। এর মানে হলো আপনি যদি ভুল করেন, তাহলে এটি মোট লক্ষ্য স্কোরকে প্রভাব ফেলবে।’
এরপর ছিল ‘শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল ও স্নাইপিং’। এতে অংশগ্রহণকারীদের শহরের উঁচু ভবনে লুকিয়ে অবস্থান নিয়ে দ্রুত লক্ষ্য খুঁজে বের করে আক্রমণ চালাতে হয়। এই প্রকল্পে অসাধারণ পারফরম্যান্স দিয়ে উজবেকিস্তান দল পূর্ণ নম্বর অর্জন করে।
অন্য ইভেন্টে ১০০ থেকে ৭০০ মিটার দূরে থাকা একাধিক চলমান লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত ও দ্রুত গুলি করার চ্যালেঞ্জ ছিল, যেখানে দুই স্নাইপারকে একসঙ্গে আলাদা টার্গেটে গুলি চালাতে হয়।
প্রতিযোগিতার বিচারক দলের সদস্য মেং ছিংফেং জানালেন, ‘এই ইভেন্টের সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার হলো—টার্গেটের অবস্থান বিভিন্ন জায়গায় এবং দূরত্বটাও অনির্ধারিত। তাই স্নাইপারদের দ্রুত দূরত্ব নির্ধারণ করে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে হয়। তাছাড়া গুলি চালাতে হয় ভবনের পঞ্চম তলা থেকে, যা স্নাইপারদের অবস্থান ও ভঙ্গিমার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে।’
শেষ দিনে প্রতিযোগীরা নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স প্রদর্শনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামে। সবচেয়ে কঠিন ইভেন্ট ছিল দীর্ঘ দূরত্বে স্নাইপিং, যেখানে প্রতিযোগীদের প্রকৃতির প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করে লক্ষ্যবস্তুতে গুলি চালাতে হয়।
এ প্রতিযোগিতা আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিল বাস্তব যুদ্ধের মতো প্রশিক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক সামরিক সহযোগিতার বিস্তৃতি বাড়ানো। এই সিরিজ ইতোমধ্যে তিনবার সফলভাবে আয়োজন করেছে চীনের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী।
প্রতিযোগিতার দক্ষতা মূল্যায়ন কমিটির পরিকল্পনা প্রণয়নকারী লি সিয়াংশেং জানালেন, ‘বিভিন্ন দলের অভিজ্ঞতা বিনিময় ও বাস্তব যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি আমাদের নিজ নিজ প্রশিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর মাধ্যমে আমরা শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সম্মিলিতভাবে সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারব।’
এ প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন দেশ থেকে আসা স্নাইপারদের খেলার নিয়মকানুন বুঝিয়ে দিতে সারাক্ষণ সঙ্গে ছিলেন ৪১ জন চীনা অনুবাদকের একটি দল। অংশগ্রহণকারীদের বোঝানোর জন্য তাদেরকেও শিখতে হয়েছিল স্নাইপারের খুঁটিনাটি।
অনুবাদক ছেন ছি বললেন, ‘এখানে খুঁটিনাটি জানাটাই ছিল সবচেয়ে কঠিন অংশ। অংশগ্রহণকারীরা নিয়মগুলো ভুল বুঝলে বা আমরা যদি সেগুলো সঠিকভাবে প্রকাশ করতে না পারি, তবে সেটা তাদের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলবে। এ জন্য প্রধান রেফারির সাথে প্রতিটি বিষয় আমরা সাবধানতার সাথে যাচাই করেছি’
চীন এবং অংশগ্রহণকারী অন্য দেশগুলোর মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক ও বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদানই এ প্রতিযোগিতার বড় উদ্দেশ্য। সেইসঙ্গে সামরিক পর্যায়ে কৌশল আদান-প্রদানেও অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন বেশ সচেষ্ট।
সূত্র: সিএমজি