
ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি অতিরিক্ত ভিটামিন ডি-ও হতে পারে বিপজ্জনক। যদিও সাধারণত আমাদের মধ্যে ঘাটতির ঘটনাই বেশি ঘটে, তবে কিছু ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি অতিরিক্ত মাত্রায় শরীরে জমে গিয়ে “হাইপারভিটামিনোসিস ডি” নামে একটি জটিল অবস্থা তৈরি করতে পারে। এই সমস্যা সাধারণত খাবার বা রোদ থেকে নয়, বরং অতিরিক্ত ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ফলে দেখা দেয়।
আমাদের শরীর সূর্যের আলো থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী ভিটামিন ডি তৈরি করে নেয়। আবার খাদ্যেও খুব সীমিত পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে। তাই অতিরিক্ত ডোজে ওষুধ খাওয়াই এই বিষক্রিয়ার মূল কারণ।
অতিরিক্ত ভিটামিন ডি-এর কিছু সাধারণ উপসর্গ ও ক্ষতি:
১. বমি ও বমিভাব
ভিটামিন ডি বেশি খেলে অনেক সময় সকালের বমি ভাব বা বারবার বমি হতে পারে। যাদের এমন সমস্যা হয়, তাদের কম ডোজে ভিটামিন ডি নেওয়া বা কেবল খাবারের মাধ্যমেই এটি গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
২. ক্ষুধামান্দ্য (ক্ষুধা কমে যাওয়া)
ভিটামিন ডি কম থাকলেও যেমন ক্ষুধা কমে যেতে পারে, তেমনি অতিরিক্ত ভিটামিন ডি গ্রহণ করলেও খাবারে আগ্রহ কমে যেতে পারে। তাই ক্ষুধা কমে গেলে রক্তে ভিটামিন ডি মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা দরকার।
৩. শরীরে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম জমা
ভিটামিন ডি বিষক্রিয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো, এটি রক্তে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম (হাইপারক্যালসেমিয়া) তৈরি করে। এর ফলে বমি, দুর্বলতা, বারবার প্রস্রাব হওয়া—এই ধরণের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় ওষুধের পাশাপাশি ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট বন্ধ করাও জরুরি।
৪. কিডনির ক্ষতি
অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম শরীরে জমে গেলে কিডনি স্টোন বা নেফ্রোক্যালসিনোসিস (কিডনিতে ক্যালসিয়াম জমে যাওয়া) দেখা দিতে পারে। এই অবস্থায় কিডনির স্থায়ী ক্ষতি এমনকি কিডনি অকেজো হওয়ার ঝুঁকিও তৈরি হয়।
৫. হাড়ের সমস্যাও হতে পারে
ভিটামিন ডি হাড়ের জন্য খুব দরকারি হলেও, অতিরিক্ত পরিমাণে এটি ভিটামিন কে-টু (K2)-এর কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত করতে পারে। ভিটামিন K2 হাড়ে ক্যালসিয়াম ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে অতিরিক্ত ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম ছড়িয়ে দিয়ে হাড়কে দুর্বল করে দিতে পারে।
ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটি কতটুকু দরকার, তা একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জানা উচিত।
নিজে থেকে বেশি ডোজে সাপ্লিমেন্ট নেওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করে শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা পর্যবেক্ষণ করুন।
শরীরে ভিটামিন ডি যেমন দরকার তেমনি অতিরিক্ত শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।