
চীনের ছিনলিং পর্বতমালায় গোল্ডেন স্নাব-নোজড বানরের মতো বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর সংরক্ষণে ব্যবহার হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বাএআই। ভিডিও বিশ্লেষণ করে একেকটি বানরের পরিচয় শনাক্ত করতে পারছে এই প্রযুক্তি, যা তাদের আচরণ পর্যবেক্ষণ ও স্বাস্থ্য বিশ্লেষণেকাজেআসছে। শায়ানসি প্রদেশের ফোপিং কাউন্টিতেএইসোনালিস্নাবনোজডবানরের ওপর চালানো এই গবেষণা চীনের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ প্রযুক্তিতেযোগকরেছে এক নতুন অধ্যায়। গবেষকদের আশা—এভাবে শুধুই বানর নয়, আরও বিপন্ন প্রাণীর রক্ষণাবেক্ষণও সহজহবে।
শায়ানসি প্রদেশের ফোপিং কাউন্টির ছিনলিং পর্বতমালায় শুরু হয়েছে গোল্ডেন স্নাব-নোজড বানরের নতুন মৌসুমের তথ্য সংগ্রহ। এসব বানরের নবজাতকদের সংখ্যা গণনার উপযুক্ত সময়ইহলোজুনমাস।
নর্থওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অধীনে কলেজ অফ লাইফ সায়েন্সেসের গবেষকরাএবার আটটি পরিবারের প্রায় ১০০টি সোনালী নাকওয়ালা বানরের তথ্য সংগ্রহের একটি নতুন রাউন্ড নিয়েকাজকরছেন।
নর্থ-ওয়েস্টবিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক কুয়ো সোংথাওর নেতৃত্বে ২০ বছরের গবেষণার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে এক অভিনব এআইভিত্তিক শনাক্তকরণ প্রযুক্তি, যা বানরের ছবি দেখে তাদের নাম, বংশগত পরিচয় ও দলগত সম্পর্ক নির্ধারণ করতে পারে।
নর্থওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কুয়োসোংথাও জানান, ‘এই মেয়ে বানর, যার নাম সিয়াওসিয়াওছিং—এআইসিস্টেম শুধু তার নামই নয়, তার জেনেটিক তথ্য, সে কোন গোত্রে আছে –সবই শনাক্ত করতে পারে।’
গবেষক দল জানিয়েছে, প্রতিটি বানরের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভিডিও রয়েছে। সেখান থেকে সংগ্রহ করা লাখ লাখ ফ্রেমের ছবি দিয়েই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এআইঅ্যালগরিদমকে।
নর্থওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী চাংচিনবাং জানালেন, ‘আমরা প্রতিটি মৌসুমে বানরগুলোর ওজনবের করি। এসব ডেটা তাদেরভবিষ্যতের পুষ্টিরচাহিদা বা তাদেরশরীরেআবহাওয়ার প্রভাব সম্পর্কেও তথ্য দেবে।’
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী লিউ হোংইয়িং জানালেন, “এই তথ্যগুলো আমরা ব্যবহার করবো পুষ্টি, পরিবেশ আর সামাজিক কাঠামোর প্রভাব বোঝার কাজে।”
এআইপ্রযুক্তি শুধু গোল্ডেন বানরেই সীমাবদ্ধ নয়—একইভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে টাকিন, পান্ডা ও অন্যান্য বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীকে।
৫০,০০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি বিস্তৃত ছিনলিং পর্বতমালা হচ্ছে চীনের ‘জীববৈচিত্র্যের জিন ব্যাংক’। এখানেই বাস করে চারটি জাতীয়ভাবে সুরক্ষিত প্রাণী—জায়ান্ট পাণ্ডা, গোল্ডেন স্নাব-নোজড বানর, টাকিন এবং ক্রেস্টেড আইবিস।
এদিকে এ বছর ছিনলিংয়ে গোল্ডেন স্নাব নোজড বানরের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে পৌঁছেছে। বিশ্বের সব চেয়ে সুন্দর বানর খ্যাত এই প্রজাতিটির বংশ বৃদ্ধির সময় কাল মার্চ থেকে মে পর্যন্ত। ছিনলিংয়ের গহীন অরণ্যের মাঝামাঝি অঞ্চলে এদের দেখা পাওয়া যায় বেশি।
চৌচি ন্যাশনাল রিজার্ভের পরিচালক থিয়ানওয়েনইয়োং জানালেন, ‘এ বছর নতুন জন্ম নেওয়া সোনা লিস্নাবনাক বানরের সংখ্যা গণনা করেছি। মোট ৪৫ টি পাওয়া গেছে।’
চীন প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টার ফলে গোল্ডেন স্নাবনোজড বানরের সংখ্যা এক দশকে চার হাজার থেকে বেড়ে এখন ছয় হাজারে দাঁড়িয়েছে। চীনে প্রথম শ্রেণির জাতীয় সুরক্ষা শ্রেণি ভুক্ত প্রাণীটির সংখ্যা বৃদ্ধিতেই প্রমাণ হয়, বন্য প্রাণী সুরক্ষা ও তাদের আবাসস্থল সংরক্ষণে সম্প্রতি বেশ সাফল্য পেয়েছে চীন।
সূত্র: সিএমজি বাংলা