Thursday, May 29
Shadow

নামাজে রফ’উল ইয়াদাইন: সুন্নাহ, সাহাবি আমল ও মতভেদ

রফউল ইয়াদাইন কী?

রফ’উল ইয়াদাইন মানে: নামাজে নির্দিষ্ট স্থানে হাত উত্তোলন করা।
রাসূল (সাঃ)-এর পক্ষ থেকে যে চার স্থানে হাত তোলার হাদীস পাওয়া যায়:

  1. তাকবীরে তাহরিমা (নামাজ শুরুর সময়)
  2. রুকুতে যাওয়ার সময়
  3. রুকু থেকে ওঠার সময় (সামিআল্লাহু liman hamidah)
  4. দ্বিতীয় রাকাআতের জন্য দাঁড়ানোর সময় (বিরল বর্ণনা)

 রফউল ইয়াদাইনের পক্ষে সহীহ হাদীসসমূহ

 সহীহ বুখারীহাদীস নং ৭৩৫

রাবী: আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা)
বর্ণনা:
“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সালাত শুরু করার সময়, রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে উঠার সময় রফ’উল ইয়াদাইন করতেন।”

বিশ্লেষণ: বর্ণনাকারী: আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) – বিশ্বস্ত সাহাবি এই হাদীসটিকে ইমাম বুখারী, মুসলিম, নাসায়ী, তিরমিযী – সকলেই গ্রহণ করেছেন।এতে প্রমাণিত হয়, রাসূল (সাঃ) তিন স্থানে হাত উত্তোলন করতেন।


সহীহ মুসলিম, তিরমিযি, নাসায়ী, আবু দাউদসহ অন্যান্য গ্রন্থে

অন্যান্য সাহাবা থেকেও একই আমল বর্ণিত:

  • মালিক ইবনে হুওয়ারিস (রা)
  • আবু হুমায়দ (রা)
  • আলী (রা)
  • ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রা)

সংখ্যাগত দিক থেকে:
এটি মুতাওয়াতির আমলি হাদীস – বহু সাহাবার মাধ্যমে রাসূল (সাঃ)-এর এই আমল এসেছে। ফলে এটি অস্বীকারযোগ্য নয়।


রফউল ইয়াদাইনের বিপক্ষে উল্লেখিত হাদীস বিশ্লেষণ

❝মুজাহিদ (রহ.) বলেন:

“আমি আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা)-এর পিছনে দুই বছর সালাত আদায় করেছি। তিনি প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্য কোনো স্থানে রফ’উল ইয়াদাইন করেননি”❞

  • বিশ্লেষণ:
  • রাবী: মুজাহিদ ইবনে জাবির (রহ.), একজন জ্ঞানের শিখর তাবেয়ী
  • রাবীর মান: বিশ্বস্ত, তবে এখানে তিনি কোনো হাদীস বর্ণনা করেননি, বরং নিজের দেখা একটি আমল বলেছেন (মওকূফ)
  • হাদীসের ধরন: এই বক্তব্য মারফূ (রাসূলের উক্তি/কাজ) নয়, বরং মওকূফ (সাহাবির আমল)

দুইটি সমস্যা:

  1. ইবনে ওমর (রা) নিজেই বহু সহীহ হাদীসে রাসূল (সাঃ)-এর তিন জায়গায় হাত তোলার হাদীস বর্ণনা করেছেন।
  2. সেই সাহাবিই যদি নিজের বলা হাদীসের বিপরীত আমল করেন, তাহলে সেটি হয় ভুলে বা কোনো সময়ভিত্তিক মত পরিবর্তন, যা হাদীস খণ্ডন করতে পারে না।

 হাদীস শাস্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী রাবীর বিপরীত আমল

 হাদীসের মূলনীতি:

  • রাবী যদি নিজের বর্ণিত হাদীসের বিপরীতে আমল করেন, তাহলে হাদীসটি এককভাবে বাতিল হয় না।
  • বিশেষ করে, যদি তার বর্ণিত হাদীসটি মারফূ এবং সহীহ হয়, এবং সে শুধু আমলে ভিন্ন কিছু করে, তবে হাদীসই অধিক গ্রহণযোগ্য

ইবনে তাইমিয়াহ, ইবনে হাজার, ইমাম নববী প্রমুখ বলেছেন:

“রাবীর ব্যক্তিগত আমল নয়, বরং রাসূল (সাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসই হলো শরীয়তের মূল।”


চার ইমামের মতামত

ইমামরফউল ইয়াদাইন বিষয়ে মত
ইমাম আবু হানিফা (রহ.)শুধুমাত্র তাকবীরে তাহরিমায় হাত তুলবেন। পরে তুলবেন না। (অগ্রাধিকার দিয়েছেন সাহাবীদের আমলকে)
ইমাম মালিক (রহ.)মদীনাবাসীদের আমল অনুসরণে হাত না তোলার মত দিয়েছেন; তবে হাদীস স্বীকার করেছেন।
ইমাম শাফেয়ী (রহ.)তিন জায়গায় হাত তোলা সুন্নত – সহীহ হাদীসসমূহের ভিত্তিতে।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.)রুকুর আগে ও পরে হাত তুলতে হবে – সহীহ হাদীস অনুসরণে।

উপসংহার: কোনটি অধিক গ্রহণযোগ্য?

বিষয়বিশ্লেষণ
আপনার উল্লিখিত হাদীসএকটি মওকূফ ও হাসান হাদীস, যা একটি সাহাবীর সীমিত সময়ের ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ
রফ’উল ইয়াদাইনের পক্ষে হাদীসসমূহবহু সাহাবা, বহু কিতাব, সহীহ বর্ণনা, প্রামাণিক মারফূ হাদীস দ্বারা সমর্থিত
ফিকহী ফয়সালাযারা হাত তোলেন না, তাদের আমলও প্রমাণিত; তবে রাসূল (সাঃ)-এর আমল অনুসারে রফ’উল ইয়াদাইন করাই সুন্নাহ’র নিকটবর্তী

সিদ্ধান্তস্বরূপ বলা যায়:

রুকুতে যাওয়ার সময় রুকু থেকে ওঠার সময় হাত তোলা সুন্নাহ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত
যারা হাত তুলেন না, তাদের আমলও সাহাবীগণ থেকে প্রমাণিত; তবে এটি সুন্নাত থেকে পরিপূর্ণ নয়।
উম্মতের ঐক্য রক্ষার্থে—উভয়টাই গ্রহণযোগ্য, একে অপরকে দোষারোপ করা উচিত নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *