Monday, May 19
Shadow

লাকসামে চার কোটি টাকার আর্চ সেতুর কাজ ,পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি!

সৈয়দ মুজিবুর রহমান দুলাল, লাকসামঃ কুমিল্লার লাকসামে সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর হাতিরঝিলের আদলে দৃষ্টিনন্দন আর্চ সেতু নির্মাণ কাজ প্রায় পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। পৌরবাসীর বহুল প্রত্যাশিত ও কাঙ্খিত সেতুটির কাজ মন্থর গতিতে চলায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে স্থানীয়রা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত সাড়ে চার বছরে সেতুটির ৮০ ভাগ কাজও সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদার। এ সেতুর শতভাগ কাজ শেষ হতে আর কতোদিন লাগবে এমন প্রশ্ন এখন স্থানীয়দের।

লাকসাম পৌরসভা ও প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্থাপনা লাকসামে নির্মাণাধীন এ আর্চ সেতু। বিগত আওয়ামী সরকার আমলে সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী ও স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য মো. তাজুল ইসলাম লাকসাম পৌর শহরের পশ্চিমগাঁও সামনীরপুল, নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ সংলগ্ন ও উত্তর লাকসামে (পেয়ারাপুর জেলেপাড়া) ডাকাতিয়া নদীর ওপর রাজধানীর হাতিরঝিলের আদলে এই দৃষ্টিনন্দন তিনটি আর্চ সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ২০২০ সালের এই আর্চ সেতুগুলো প্রায় ১৫ কোটি টাকার ব্যয়ে অনুমোদন হয়। সেতুতে দু’পাশে থাকবে ফুটপাত, লাইটিং এবং মাঝখানে পিলার বিহীন। নৌযান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত ফাঁক রেখে দু’পাশের দু’টি অ্যাবাটমেন্টের মাধ্যমে ইস্পাত দিয়ে সেতুগুলো দৃশ্যমান হবে। তিনটি সেতুর মধ্যে দুইটির সেতু নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেছেন অন্যান্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু পেয়ারাপুর-জেলেপাড়া এলাকায় সেতুটির নির্মাণ কাজ এখানো শেষ করতে পারিনি ঠিকাদার।

২০২০ সালের ১৯ আগস্ট ডাকাতিয়া নদীর ওপর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ব্যয় ধরা হয় ৪ কোটি ৫০ লাখ ১৩ হাজার ৬৭৪ টাকা। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৪০ মিটার। এর কার্যাদেশ পায় ঢাকার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স বেলাল এন্ড ব্রাদার্স’। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কাজটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটি হয়নি। পরে প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ কাজের বাড়তি সময়ের আবেদন করলে পর পর দু’বার সময় বাড়ানো হয়। এরপর তিন বছর ধরে ঢিলেঢালাভাবে সেতুটির। নির্মাণ কাজ চলতে থাকে। ইতিমধ্যে বেশির ভাগ অংশের কাজ সম্পন্ন হলেও সেতুর দু’পাশের মুখের ও সড়কের কাজ বাকি রয়েছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর মুখে পূর্ব পাশে গার্ড ওয়ালের কাজ করছে দুইজন নারী ও একজন পুরুষ শ্রমিক। তারা ‘বেলাল এন্ড ব্রাদার্স’ নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক। এ সময় ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের একজন প্রকৌশলী পাশে দাঁড়ানো। তাঁর নাম জুবায়েদ খাঁন। তিনি মুঠোফোনে অন্যজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ সময় কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

জুবায়েদ খাঁন জানান, বছরখানেক আগে তিনি ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছেন । তাঁর আগে দায়িত্বে ছিলেন রিয়াদ নামে একজন প্রকৌশলী। শ্রমিক সংকটের কারণে সময় মতো সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেননি। তবে সেতুর মূল কাজ (৮৫ ভাগ) প্রায় শেষ। এখন কেবল সেতুর মুখে অল্প কিছু কাজ বাকি রয়েছে। কাজটি দ্রুত শেষ করতে আমরা আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে আরো কোনো তথ্য জানার থাকলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

এদিকে নির্মাণধীন সেতুর পাশে রয়েছে লাকসাম-চাঁদপুর রেলপথ। ওই রেলপথ ঘেঁষে ভাঁঙাচোরা একটি মাটির রাস্তা। রাস্তাটি লাকসাম-মুদাফরগঞ্জ সড়কের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। রাস্তার উত্তর পাশে রয়েছে পেয়ারাপুর গ্রামসহ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেতুর পূর্বে অংশে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের সঙ্গে মিলিত হয়েছে একটি সংযোগ সড়ক এবং পাশেই রেলগেইট। সড়কের পাশেই দৌলতগঞ্জ বাজার, বিদ্যুত অফিস, বউ বাজার, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, জেলপাড়া, রবিদাসপাড়া, নশরতপুর। রয়েছে অনেকগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা। সেতুর দুই পাড়ের বাসিন্দাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এ পথ। সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় লোকজন বাধ্য হয়ে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে প্রায় ৪০ মিটার দৈর্ঘ্য রেলসেতুর ওপর দিয়ে পারাপার হচ্ছেন।

লাকসাম পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার মো. আবদুর রশিদ, জেলেপাড়ার জয়দেব সাহা ও পেয়ারাপুর গ্রামের বেলাল রহমান মজুমদার বলেন, ডাকাতিয়া নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো। কাঙ্ক্ষিত সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় এলাকাবাসী অত্যন্ত খুশি হয়েছে। কিন্তু দু’বছরে সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় পাঁচ বছর অতিবাহিত। তবুও সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি! এতে মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তির অন্ত নেই।

লাকসাম পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের  জেলেপাড়ার বাসিন্দা বাসুদেব বর্মণ বলেন, এলাকার মানুষজন প্রতিদিন প্রয়োজনীয় কাজে এ পথে চলাচল করে। কিন্তু যেভাবে মন্থরগতিতে সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে আর কতোদিন লাগবে। কবে নাগাদ শেষ হবে সেতুর নির্মাণ কাজ সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সোহেল রানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মাঝে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় বছরখানেক আগে তিনি ওই প্রতিষ্ঠান থেকে চাকুরী ছেড়ে চলে গেছেন।

এই ব্যাপারে লাকসাম পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো জাকির হোসেন জানান, সেতুটির নির্মাণ কাজ গত বর্ষা মৌসুমে বন্ধ ছিলো। বর্তমানে কাজ চলমান রয়েছে।যথাসময়ে সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও নানা জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আরো বাড়তি সময় চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদনের প্রেক্ষিতে সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তিনি সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে না পারলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *