
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর শতদিন পার করেছেন। নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি হোয়াইট হাউসে ফিরে নাটকীয় পরিবর্তনের অঙ্গীকার করেছিলেন। তবে খুব কম মানুষই ধারণা করেছিলেন, পরিবর্তন এতোটা দ্রুত ও গভীরভাবে বাস্তবায়িত হবে। শপথের পর প্রথম তিন মাসে তিনি নির্বাহী ক্ষমতা এমনভাবে ব্যবহার করেছেন যা খুব কম প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে।
নির্বাহী আদেশের ঝড়
শুরুতেই ট্রাম্প একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করে আমেরিকার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোয় বড় ধরনের রদবদল ঘটান। সমর্থকদের কাছে এটি প্রতিশ্রুতি পূরণের নিদর্শন হলেও, সমালোচকদের মতে, এটি সাংবিধানিক ভারসাম্যে একধরনের চ্যালেঞ্জ। আদালত এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের শতাধিক নির্বাহী সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে।
ভাইস প্রেসিডেন্টের পোস্টে সাংবিধানিক বিতর্ক
ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের এক্সে (প্রাক্তন টুইটার) পোস্টে সাংবিধানিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। তিনি মন্তব্য করেন, “বিচারকদের নির্বাহী শাখার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের অধিকার নেই,” যা বিচার বিভাগের উপর সরাসরি আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হয়। আদালতের সঙ্গে সংঘাতে গিয়ে হোয়াইট হাউস কংগ্রেসের পাশ কাটিয়ে একতরফাভাবে বিভিন্ন সংস্থার তহবিল বন্ধ করে দেয়। যদিও দুই কক্ষেই রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় প্রতিক্রিয়া ছিল সীমিত।
সরকারি খরচে ‘চেইনসো’ নীতি
বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক সরকারি ব্যয় হ্রাসের লক্ষ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের হয়ে কাজ করছেন। মাস্ক বলেছেন, তার লক্ষ্য আমলাতান্ত্রিক অপচয় দূর করা। এজন্য তিনি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম পর্যালোচনায় তার লোক নিয়োগ দেন। ইউএসএআইডি বন্ধ এবং শিক্ষা বিভাগ বিলুপ্ত করার উদ্যোগের মতো সিদ্ধান্ত এরই ফল। তবে বাজেট কাটছাঁট জনপ্রিয় কর্মসূচিগুলোর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে সমালোচকরা বলছেন।
অভিবাসন নীতির কঠোর প্রয়োগ
অভিবাসনের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান দ্বিতীয় মেয়াদেও বহাল। অভিযোগ উঠেছে নিরপরাধদের বেআইনিভাবে আটক এবং নির্বাসনের মুখে ফেলা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও প্রশাসনের টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন। যদিও এখনও গণহারে বহিষ্কারের দৃশ্য দেখা যায়নি, তবে আইন প্রয়োগকারীরা ঘরে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং এমনকি গির্জাতেও হানা দিচ্ছেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমে চাপ
হার্ভার্ডসহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেডারেল অনুদান বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। বিক্ষোভ ও মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়নের নীতিমালা পরিবর্তনের জন্যও চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। করপোরেট জগতে প্রভাব বিস্তারে আইনি সংস্থাগুলোকে ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবিসি নিউজকে মানহানি মামলায় ১৫ মিলিয়ন ডলার ট্রাম্পের ফাউন্ডেশনে অনুদান দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
রাজনৈতিক শক্তির প্রদর্শন বনাম উত্তরাধিকার
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম ১০০ দিন ছিল শক্তি প্রদর্শনের একটি পর্ব। প্রশ্ন হচ্ছে—এই ধারা অব্যাহত রেখে তিনি কি একটি স্থায়ী রাজনৈতিক উত্তরাধিকার গড়ে তুলতে পারবেন? আগামী ১,৩৬১ দিনেই এর উত্তর পাওয়া যাবে।
এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, সংবিধান এবং প্রশাসনিক কাঠামো এক অজানা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্পের সমর্থকরা যেখানে এটি বাস্তবায়নের রাজনীতি হিসেবে দেখছেন, সমালোচকরা বলছেন—এটি আমেরিকার গৌরবময় ইতিহাসের বিরুদ্ধে এক অভূতপূর্ব ঝড়।