Saturday, April 26
Shadow

৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএসে গ্রাহক কত গতি পাবেন

দেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতারা ইন্টারনেটের গতি বাড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী, গ্রাহক ৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস (মেগাবাইট পার সেকেন্ড) গতি পাবেন।

কিন্তু গ্রাহক–অভিজ্ঞতা ভিন্ন। গ্রাহকের অভিযোগ, ৫০০ টাকার প্যাকেজে ইন্টারনেটের যে গতির কথা বলা হয়, তা আদতে পাওয়া যায় না।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ২০২১ সালে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সর্বনিম্ন দাম ৫০০ টাকা করার জন্য নির্দেশ দেয়। সে ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের গতি নির্ধারণ করা হয় ৫ এমবিপিএস।

চার বছর পর এসে এই প্যাকেজের (৫০০ টাকার) ইন্টারনেটের গতি দ্বিগুণ (১০ এমবিপিএস) করার ঘোষণা দিল ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। গত শনিবার এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

২০২১ সালের জুনে বিটিআরসি ‘এক দেশ এক রেট’ নীতি চালু করে। এই নীতির আওতায় সারা দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের একই দামে সংযোগ দিতে বলা হয়। এতে তিনটি প্যাকেজ রাখা হয়। প্রথম প্যাকেজের মূল্য মাসে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা, গতি ৫ এমবিপিএস। দ্বিতীয় প্যাকেজের মূল্য মাসিক ৮০০ টাকার মধ্যে, গতি ১০ এমবিপিএস। আর তৃতীয় প্যাকেজের মূল্য মাসিক ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে, গতি ২০ এমবিপিএস। সম্প্রতি বিটিআরসি জানিয়েছে, এই ‘এক দেশ এক রেট’ নিয়ে আবার কাজ হবে।

দেশের বিভিন্ন স্থানের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের (আইএসপি) সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেউ ইতিমধ্যে নতুন ঘোষিত গতি (১০ এমবিপিএস) বাড়িয়েছে। কেউ শিগগির তা বাস্তবায়ন করবে।

এখন প্রশ্ন হলো, ৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএসের যে ঘোষণা এসেছে, গ্রাহক কি আসলেই এই গতির ইন্টারনেট পাবেন?

রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা ফয়সাল আহমেদ তাঁর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ৫০০ টাকায় ৫ এমবিপিএসের সংযোগ নিয়ে ব্যবহার করছেন। কিন্তু তিনি ২ থেকে ৩ এমবিপিএসের মতো গতি পান।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরার একটি আইএসপি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আশিকুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ভাগাভাগির নীতি অনুযায়ী একটি সংযোগ কয়েকজন গ্রাহককে দেওয়া হয়। ফলে ১০ এমবিপিএসের ক্ষেত্রে একজন গ্রাহক হয়তো গড়ে ৩ এমবিপিএসের মতো গতি পাবেন।

বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী, একটি সংযোগ সর্বোচ্চ আটজনের মধ্যে ভাগ করা যাবে। সে হিসাবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গ্রাহক যে সংযোগ পান, তা এই ভাগাভাগির ভিত্তিতেই পেয়ে থাকেন বলে জানায় আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো।

তবে গ্রাহকের একক সংযোগ নেওয়ারও সুযোগ আছে। সে ক্ষেত্রে দাম বেশি পড়ে।

তাহলে গ্রাহক কি ৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস একেবারেই পাবেন না? এই প্রশ্নের জবাবে কয়েকটি আইএসপি প্রতিষ্ঠান বলে, পিক আওয়ারে, অর্থাৎ রাতের দিকে সব গ্রাহক যখন একসঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করেন, তখন গতি কমে যায়। আবার দিনের বেলায় বা অফপিক আওয়ারে (চাহিদা যখন কম থাকা) গতি বেড়ে যায়।

আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের দিক থেকে গতি বাড়ানোর জন্য একটা প্রত্যাশা ছিল। সব মিলিয়ে তাঁরা ৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে ভাগাভাগির নীতিতে এই প্যাকেজের গ্রাহক ১০ এমবিপিএসের চেয়ে কম গতি পাবেন।

দেশে ইন্টারনেটের গতি ও মান নিয়ে অসন্তোষ আছে। সম্প্রতি এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, দেশের ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা বলে থাকেন, এ অঞ্চলে, বাংলাদেশে ইন্টারনেট অনেক সস্তা। কিন্তু এখানে যে মানের ইন্টারনেট দেওয়া হয়, তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট। সে হিসাবে মান বিবেচনায় দাম অনেক বেশি।

ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষা ও বিশ্লেষণের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওকলার গত মার্চ মাসের হিসাব অনুযায়ী, ফিক্সড ব্রডব্যান্ডের গতিতে বিশ্বের ১৫৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০০তম।

বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী, দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহকসংখ্যা ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি। আর লাইসেন্সধারী আইএসপি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ হাজার ৪১৫; যদিও লাইসেন্সধারী, লাইসেন্স ছাড়াসহ সব মিলিয়ে দেশে আইএসপি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬ হাজারের বেশি বলে জানায় আইএসপিএবি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আইএসপিএবি যখন ১০ এমবিপিএসের ঘোষণা দেয়, তখন গ্রাহক ধরেই নেন, তিনি এই পরিমাণ গতিই পাবেন। কিন্তু এর সঙ্গে (প্যাকেজ) যেসব শর্ত থাকে, তা গ্রাহককে জানানো হয় না। ইন্টারনেট সেবার সঙ্গে যেসব শর্ত রয়েছে, তা স্পষ্ট করে গ্রাহককে জানাতে হবে। আগের ডিশ ব্যবসা এখন ইন্টারনেট ব্যবসায় রূপান্তর রয়েছে। এখানে পেশিশক্তি, চাঁদাবাজি, কাঙ্ক্ষিত সেবা না দেওয়ার মতো বিষয় আছে। গ্রাহক কোথায় অভিযোগ জানাবে, প্রতিশ্রুতির কতটা গতি গ্রাহককে দেওয়া হচ্ছে, এসব বিষয়ে বিটিআরসির ভূমিকা ও পর্যবেক্ষণ দরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *