Wednesday, July 30
Shadow

“নান্দাইলে গড়ে উঠেছে বাঁশের মাচা চৌকি: গ্রামীণ ঐতিহ্যে নিরাপত্তা ও সচেতনতার ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত”

ফরিদ মিয়া, নান্দাইল ময়মনসিংহ : প্রকৃতির নিবিড় কোলে গড়ে উঠেছে এক অভিনব নিরাপত্তা চৌকি। ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের কিছমত কচুরী গ্রামের শালবনের ভেতরে গাছের ডালে বাঁশ, কাঠ ও রশি দিয়ে নির্মিত হয়েছে একটি উঁচু মাচা। পা রাখার সিঁড়িসহ পুরো কাঠামোটি যেন একসঙ্গে ঐতিহ্য, সচেতনতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধের প্রতীক।

এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের পেছনে রয়েছেন গ্রামের কিছু সচেতন তরুণ—শুভ, সাব্বির, ইমন, মেহেদী ও তানভীরসহ একদল যুবক। সাম্প্রতিক সময়ে গ্রামে চুরি এবং সন্দেহজনক চলাফেরার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় তারা নিজেরাই নিরাপত্তার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন।

তানভীর বলেন, “এক রাতে আমাদের গ্রামে সাতটি গরু চুরি হয়। থানায় জানানো হলেও, দূরত্ব বেশি হওয়ায় তাৎক্ষণিক সহায়তা পাওয়া যায় না। তাই নিজেরাই দায়িত্ব নিয়েছি। নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে আরও ক্ষতি হতো। এই মাচা থেকে পুরো এলাকাটা নজরে রাখা যায়।”

সাধারণ কাঠ, বাঁশ ও রশি দিয়ে তৈরি মাচাটি থেকে পুরো গ্রামটি পর্যবেক্ষণ করা যায় সহজেই। এটি প্রযুক্তির বিকল্প না হলেও এক ধরনের মানবিক, সামাজিক এবং পরিবেশসম্মত নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। স্থানীয়দের মতে, এটি গ্রামীণ ঐতিহ্যের এক নতুন রূপে প্রত্যাবর্তন।

গ্রামের প্রবীণ আব্দুল আওয়াল তাড়া মিয়া বলেন, “আগে ধানক্ষেতে পাখি তাড়াতে কিংবা চোর ঠেকাতে এমন মাচা বানানো হতো। এখন আবার তা ফিরে এসেছে। সবচেয়ে ভালো লাগে, গ্রামের ছেলেরা নিজেরাই করছে।”

স্থানীয় পারভেজ আহমেদ জামিন বলেন, “রাস্তার পাশে বাগানের ভেতরে গাছের সঙ্গে বানানো কাঠামোটি পরিবেশের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আছে। কংক্রিটের ছোঁয়া ছাড়াই প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার করে বানানো এই মাচা গ্রামবাসীর সচেতনতার নিদর্শন। এ যেন আধুনিক নিরাপত্তার মাঝে এক টুকরো গ্রামীণ সৌন্দর্য।”

মো. দুলাল মিয়া বলেন, “এ উদ্যোগ কেবল নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং সামাজিক সম্প্রীতি, ঐক্য এবং পারস্পরিক দায়িত্ববোধেরও প্রতীক। যারা পাহারা দিচ্ছেন, তাদের জন্য গ্রামবাসীর খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও করা উচিত।”

খোকন মিয়া বলেন, “এই মাচা যেন শুধু কয়েকটি কাঠ আর বাঁশের তৈরি উঁচু কাঠামো নয়—এটি গ্রাম বাংলার আত্মা, নিরাপত্তা, ঐতিহ্য ও মানবিক বন্ধনের জীবন্ত নিদর্শন।”

এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ কেবল নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে না, বরং তরুণদের মধ্যে নেতৃত্ব, সচেতনতা ও গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা জাগিয়ে তুলছে। পরিবেশবান্ধব ও প্রগতিশীল এমন উদ্যোগ হতে পারে দেশের অন্যান্য গ্রামাঞ্চলের জন্যও একটি অনুসরণযোগ্য অনুপ্রেরণা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *