Wednesday, July 30
Shadow

আলকুশি গাছ: নার্ভ শক্তি ও যৌনস্বাস্থ্যের প্রাকৃতিক টনিক

একেএম নাজমুল আলম  কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ঝোপঝাড়, বনবিথি ও খেতের ধারে এক ধরনের লতা জাতীয় গাছ দেখা যায়, যার নাম আলকুশি। দেখতে সাদামাটা হলেও এর বীজ এবং শিকড়ে এমন কিছু গুণ লুকিয়ে আছে, যা একে করে তুলেছে প্রাকৃতিক শক্তি ওষুধের আধার। কিন্তু এই গাছ সম্পর্কে এখনো দেশের অনেক মানুষের ধারণা নেই।

গাছ পরিচিতি:

বৈজ্ঞানিক নাম: Mucuna pruriens

গোত্র: Fabaceae (ডালজাতীয় উদ্ভিদ)

এটি একটি লতানো গাছ, যার ফলের গায়ে থাকে ছোট ছোট লোম – যা চুলকানি সৃষ্টি করে।

মূলত বীজেই লুকিয়ে আছে এই গাছের প্রধান ঔষধি শক্তি।

অজানা তথ্য:

আলকুশি বীজে রয়েছে প্রাকৃতিক L-Dopa, যা ব্রেইনে ডোপামিন হরমোন বাড়ায়।

 এটি বিশ্বজুড়ে পারকিনসন রোগ, অবসাদ ও নার্ভ ড্যামেজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে।

আয়ুর্বেদে একে বলা হয় “মহাবীর্য বীজ” – কারণ এটি নার্ভ ও যৌন শক্তি বাড়ায় চমৎকারভাবে।

পুরনো যুগে ভারতীয় যোদ্ধারা যুদ্ধের আগে শক্তি বৃদ্ধির জন্য আলকুশি সেবন করতেন।

ঔষধি গুণাবলি:

১. স্নায়ুতন্ত্রের দুর্বলতা দূর করে:

আলকুশি বীজ ব্রেইনের স্নায়ু সংযোগ শক্তিশালী করে। স্মৃতিশক্তি, মনঃসংযোগ, ঘুমের সমস্যা এবং পারকিনসনের মতো রোগে উপকারী।

২. পুরুষের যৌনশক্তি ও শুক্রাণু বৃদ্ধি:

আলকুশি নিয়মিত সেবনে শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়ে, দ্রুত বীর্যপাত প্রতিরোধ হয় এবং টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়ে।

৩. নারীদের উর্বরতা বাড়ায়:

এই গাছের নির্যাস নারীর হরমোন ব্যালান্স করে ও মাসিক নিয়মিত করে।

৪. বিষাক্ততা ও বিষক্রিয়া রোধ:

আলকুশি লিভারকে ডিটক্সিফাই করে এবং বিষক্রিয়াজনিত সমস্যা দূর করে।

৫. ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে উপকারী:

ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং হৃদযন্ত্র শক্তিশালী করে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, বিশেষ করে কুষ্টিয়া, যশোর, ঝিনাইদহ এলাকায় এটি নিজে নিজেই জন্মায়।

সচরাচর এটি বন বা ফাঁকা মাঠের ধারে দেখা যায়।

তবে বর্তমানে ভেষজ গবেষকদের তত্ত্বাবধানে এর চাষ শুরু হচ্ছে।

▪️ ফলের গায়ে থাকা লোমে চুলকানির রাসায়নিক থাকে, সাবধানভাবে ব্যবহার করতে হয়।

▪️ বীজ সেবনের আগে অবশ্যই সিদ্ধ বা শুকিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত।

আলকুশি গাছ যেন প্রকৃতির এক গোপন উপহার। শারীরিক দুর্বলতা, মানসিক চাপ কিংবা যৌনস্বাস্থ্যের সমস্যা—সবকিছুরই প্রাকৃতিক সমাধান রয়েছে এই গাছের বীজে। বিজ্ঞান আজ যা বলছে, প্রাচীন আয়ুর্বেদ তা বহু শতাব্দী আগে জানত।

বাংলাদেশে এই গাছের ব্যাপক চাষ ও প্রসার হলে তা হতে পারে স্বাস্থ্যসচেতন সমাজ গঠনের এক নতুন দিগন্ত। সরকারি পর্যায়ে ভেষজ উদ্ভিদ সংরক্ষণে আলকুশির গবেষণা ও বাণিজ্যিকীকরণ জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *