Wednesday, July 30
Shadow

‘রানঝানা’ সিনেমার লেখক এআই: তুঙ্গে বিতর্ক বলিউডে

২০১৩ সালে মুক্তির পরপরই পরিচালক আনন্দ এল রাইয়ের সিনেমা ‘রানঝানা’ দর্শক ও সমালোচকদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিল। এক যুগ পর সেই সিনেমাটি আবারও প্রেক্ষাগৃহে আসছে নতুন রূপে। তবে এই পুনঃমুক্তি নিয়ে তৈরি হয়েছে জোরালো বিতর্ক—পরিচালক আনন্দ এল রাই ও প্রযোজনা সংস্থা ইরোস ইন্টারন্যাশনালের মধ্যে। কারণ, এবার সিনেমার গল্পের শেষটা বদলে দেওয়া হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যা নির্মাতার অনুমতি ছাড়াই করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

ইরোস সম্প্রতি ঘোষণা দেয় যে, ‘অম্বিকাপথি’ নামে তামিল ভাষায় ‘রানঝানা’ আবার মুক্তি পাবে আগামী ১ আগস্ট। এই নতুন সংস্করণে AI প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিনেমার শেষ পরিবর্তন করা হয়েছে। মূল কাহিনিতে যেখানে কুন্দন (অভিনয় করেছেন ধানুশ) মারা যান, সেখানে এবার দেখানো হবে তিনি বেঁচে থাকেন। অর্থাৎ, ট্র্যাজিক সমাপ্তি বদলে দেওয়া হয়েছে হ্যাপি এন্ডিংয়ে।

এই সিদ্ধান্তে রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়েছেন নির্মাতা আনন্দ এল রাই। তিনি বলেন, “এই সিদ্ধান্ত নির্মাতা বা সংশ্লিষ্ট কাউকে কিছু না জানিয়েই নেওয়া হয়েছে। এটা গভীরভাবে উদ্বেগজনক একটি বিষয়।” তিনি আরও বলেন, “ইরোস প্রযোজক হিসেবে কিছু নির্দিষ্ট অধিকার রাখলেও, তারা এমন একটি কাজ করেছে যা শিল্পীর সম্মতি ও নৈতিক অধিকারের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন।”

এ ব্যাপারে ইরোস গ্রুপের প্রধান নির্বাহী প্রদীপ দ্বিবেদী দাবি করেছেন, AI দিয়ে নতুন সমাপ্তি তৈরি করা এখনকার যুগে স্বাভাবিক বিষয়। তাঁর ভাষায়, “ভারতীয় কপিরাইট আইন অনুযায়ী, প্রযোজকই চলচ্চিত্রের একমাত্র ও পূর্ণ অধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তি।” তিনি আরও দাবি করেন, “এই ছবির চুক্তিতে পরিচালক তাঁর নৈতিক অধিকার লিখিতভাবে পরিত্যাগ করেছেন।”

তবে এখানেই শেষ নয়। ২০২২ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে বলেছিল, চলচ্চিত্র পরিচালকদের লেখক হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তাঁদের নির্দিষ্ট নৈতিক অধিকার রয়েছে। এমনকি অর্থনৈতিক অধিকার প্রযোজকের কাছে গেলেও, নৈতিক অধিকার থেকে যায় পরিচালকের কাছেই।

এই আইনি বিতর্কের পাশাপাশি একটি করপোরেট দ্বন্দ্বও সামনে এসেছে। ইরোস অভিযোগ এনেছে আনন্দ এল রাইয়ের ‘কালার ইয়েলো প্রোডাকশন’ সংস্থার বিরুদ্ধে। অভিযোগ, “তাঁরা বোর্ড অনুমোদন ছাড়াই অবৈধ লেনদেন করেছেন।” তবে আনন্দ এল রাই দাবি করেন, “এই বাণিজ্যিক বিরোধের সঙ্গে এআই ইস্যুর কোনও সম্পর্ক নেই। এটা একেবারেই আলাদা এবং অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”

আনন্দ এল রাই আরও বলেন, “চলচ্চিত্র শুধু একটি বাণিজ্যিক পণ্য নয়। এটা তার নির্মাতার শ্রম, চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। এ ধরনের পরিবর্তন শিল্পীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা।” তাঁর আশঙ্কা, “যদি এ ধরনের প্রযুক্তিনির্ভর পরিবর্তন নিয়মহীনভাবে চলতে থাকে, তবে একসময় এগুলো শিল্পের মৌলিকতাকে ধ্বংস করে দেবে।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, “আমরা এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। আজকে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, সেটাই নির্ধারণ করবে—ভবিষ্যতের নির্মাতারা তাঁদের কাজের সম্মান, স্বাধীনতা ও সুরক্ষা পাবেন কিনা।”

ইরোসের পক্ষ থেকে প্রদীপ দ্বিবেদী এ বিষয়ে পাল্টা বলেন, “আইন অনুযায়ী প্রযোজকই সিনেমার আইনগত লেখক। আমরা নতুন করে সিনেমা বানাইনি—শুধু একটি বিকল্প সমাপ্তি উপস্থাপন করেছি।” তাঁর ভাষায়, এটা এক ধরনের নতুন যুগের সূচনা।

তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে ইরোস আরও সিনেমার AI ভিত্তিক পুনর্নির্মাণ নিয়ে ভাবছে। প্রয়োজনে নির্মাতাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতেও প্রস্তুত, যদিও সেটা আইনি বাধ্যবাধকতা নয়।

এই ঘটনার মাধ্যমে ভারতের সিনেমাজগতে এক নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। যেখানে প্রযুক্তি, শিল্প, আইন ও করপোরেট স্বার্থের সংঘাত এক জায়গায় এসে ঠেকেছে। পরিচালক আনন্দ এল রাই এই ঘটনাকে বলেছেন, “ভারতীয় সিনেমার ভবিষ্যতের জন্য এটা একটি টার্নিং পয়েন্ট।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *