
মস্তিষ্ক গবেষণায় যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি বিশ্বের খ্যাতনামা কয়েকটি একাডেমিক জার্নালে এ নিয়ে প্রকাশ হয়েছে একগুচ্ছ গবেষণা প্রতিবেদন। এতে উন্নত প্রজাতির প্রাণীর নিউরোলজিক্যাল মানচিত্র নির্মাণে চীনের উচ্চ-নির্ভুলতা অর্জনের কথা তুলে ধরা হয়েছে, যা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বিশ্বের চিকিৎসাবিজ্ঞান মহলে।
চায়না অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস বা সিএএস-এর আওতাধীন ‘সেন্টার ফর এক্সেলেন্স ইন ব্রেইন সায়েন্স অ্যান্ড ইনটেলিজেন্স টেকনোলজি’, বিজিআই রিসার্চ এবং সেইসঙ্গে ফ্রান্স, সুইডেন ও যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীদের যৌথ প্রচেষ্টায় সম্পন্ন হয় এ গবেষণাগুলো। ৩০টির বেশি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান এবং তিন শতাধিক বিজ্ঞানী অংশগ্রহণ করেছেন এই গবেষণায়।
প্রকাশিত ১০টি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র স্থান পেয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জার্নাল সেল ও নিউরন-এ। এসব গবেষণা মূলত সরীসৃপ, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী, প্রাইমেট এবং মানুষের মস্তিষ্কের ওপর ভিত্তি করে হয়েছে। এসব প্রজাতির মস্তিষ্কের গাঠনিক তুলনা এবং বিভিন্ন সময়ে মস্তিষ্কে যেসব পরিবর্তন ঘটে, সেসব বিশ্লেষণেও বৈপ্লবিক অগ্রগতি ঘটেছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
মস্তিষ্ক মানবদেহের সবচেয়ে জটিল অঙ্গ। প্রায় ৮৬ বিলিয়ন নিউরন এবং লক্ষ কোটি স্নায়বিক সংযোগে গঠিত এটি। এর অভ্যন্তরীণ কার্যকারিতার অনেক কিছুই এখনও অজানা। তাই চীনের এ গবেষণার প্রতি আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের রয়েছে দারুণ আগ্রহ।
চীনের বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রকাশিত ওই গবেষণাগুচ্ছ মস্তিষ্কজনিত রোগের কারণ অনুসন্ধান এবং চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবনের নতুন দিক খুলে দিয়েছে।
চীনের মস্তিষ্ক গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক এবং সিএএস-এর সদস্য পু মুমিং জানালেন, ‘চীনের মস্তিষ্ক গবেষণা পরিকল্পনা অন্যান্য দেশের, বিশেষ করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় আরও বিস্তৃত ও সামগ্রিক। মৌলিক মস্তিষ্কবিজ্ঞানের পাশাপাশি, আমরা এর ব্যবহারিক প্রয়োগের ওপরও গভীর গুরুত্ব দিয়ে থাকি—যেমন মস্তিষ্কঘটিত রোগের কারণ নির্ণয় ও চিকিৎসা। আবার মস্তিষ্কের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নতুন প্রজন্মের বিকাশ নিয়েও কাজ করছি, যার মধ্যে মস্তিষ্ক-কম্পিউটার ইন্টারফেস বা বিসিআই-এর উন্নয়নও অন্তর্ভুক্ত। এ সমস্ত উদ্যোগকে একযোগে আমরা বলছি ‘একটি দেহ, দুটি ডানা’। এখানে একটি দেহ মানে মৌলিক গবেষণা, আর ‘দুটি ডানা’ হলো—মস্তিষ্কঘটিত রোগের চিকিৎসাব্যবস্থা, এবং মস্তিষ্কের অনুকরণে তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি।’
চীনের এই আন্তর্জাতিক মেগা-সায়েন্স প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হল—প্রাইমেট ও মানুষের মস্তিষ্কের কোষ পর্যায়ের মানচিত্র তৈরি করা। যাতে তৈরি করা যায় আরও উন্নত কিছু প্রযুক্তি।
সিএএস-এর গবেষণা কেন্দ্রের উপ-পরিচালক সুন ইয়াংকাং জানালেন, ‘এই মানচিত্র মস্তিষ্কের কাজ বোঝা, রোগের কারণ জানা ও চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণে সাহায্য করবে। পাশাপাশি, মানুষের মস্তিষ্ক কাঠামো অনুপ্রেরণায় ব্রেইন-মডেল এআই তৈরিতেও সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে।’
এই গবেষণার সাফল্যই বলে দিচ্ছে, মস্তিষ্ক বিষয়ক মৌলিক জ্ঞান, চিকিৎসাব্যবস্থা এবং ভবিষ্যতের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিতে কতটা দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলছে চীন।
সূত্র: সিএমজি