Friday, June 20
Shadow

কোরআন ও সহিহ হাদিসভিত্তিক ইসলামী ভাবধারায় সালাফি মানহাজ

কোন পথটি বেশি সহিহ, চার মাজহাব ও সালাফি মানহাজ নিয়ে সহজ বিশ্লেষণ

ইসলামের ইতিহাসে যুগে যুগে বিভিন্ন চিন্তাধারা ও ব্যাখ্যার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে চারটি সুপ্রতিষ্ঠিত মাজহাব—হানাফি, মালিকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি। এই চারটি মাজহাবই কোরআন ও হাদিসের আলোকে ইসলামী বিধান ব্যাখ্যা করে থাকে, তবে পদ্ধতিগতভাবে কিছু পার্থক্য রয়েছে। এসব মাজহাব মুসলিম উম্মাহকে শৃঙ্খলিত ও ফিকহভিত্তিকভাবে পরিচালনায় বড় ভূমিকা রেখেছে। তবে সমসাময়িক সময়ে যেসব মুসলমান সরাসরি কোরআন ও সহিহ হাদিস অনুসরণকে প্রধান ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেন, তাদের একটি ধারাকে “সালাফি” বলা হয়।

সালাফি মানহাজ কী?

সালাফি মানহাজ বলতে মূলত সেই চিন্তাধারাকে বোঝানো হয়, যারা ইসলামের প্রথম তিন যুগের (সালাফে সালেহীন) পথ অনুসরণ করে থাকে। তারা মনে করে, নবী মুহাম্মদ (সা.) ও তার সাহাবিগণ, তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীন—এই তিন শ্রেণির মনীষীদের ধর্মীয় অনুশীলন ও ব্যাখ্যার মধ্যেই রয়েছে ইসলামের প্রকৃত ও বিশুদ্ধ রূপ।

সালাফি মতবাদ মূলত তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়: ১. কোরআনের সরাসরি ব্যাখ্যা কোরআনের মাধ্যমে করা। ২. সহিহ হাদিস ও রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাহর উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব। ৩. বিদআত ও ব্যক্তিগত যুক্তি বা কিয়াসের ভিত্তিতে তৈরি কোনো ফিকহি মতকে মান্য না করা।

চার মাজহাব বনাম সালাফি দৃষ্টিভঙ্গি

চারটি মাজহাবই মূলত সহিহ হাদিসের ভিত্তিতেই ব্যাখ্যা প্রদান করে। তবে তাদের মাঝে ব্যাখ্যাগত, পদ্ধতিগত ও কিয়াসের ব্যবহার ভিন্ন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ—

  • হানাফি মাজহাব যুক্তির ব্যবহার ও কিয়াসকে গুরুত্ব দেয়, যা ইসলামি জুরিসপ্রুডেন্সে উন্নত এক কাঠামো তৈরি করেছে।
  • মালিকি মাজহাব মদিনার আমলকে গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচনা করে।
  • শাফেয়ি মাজহাব হাদিসের উৎস ও শুদ্ধতা যাচাইয়ে অত্যন্ত কঠোর।
  • হাম্বলি মাজহাব সহিহ হাদিসকে প্রাধান্য দিয়ে ফিকহ রচনা করে, যা সালাফি চিন্তাধারার সবচেয়ে কাছাকাছি।

সালাফি দৃষ্টিভঙ্গি মতে, চার মাজহাবের কোনো একটি মানা বাধ্যতামূলক নয়, বরং তারা মনে করে কোরআন ও রাসূলের সহিহ হাদিসই একমাত্র মানদণ্ড। এ কারণে সালাফিরা ফিকহি ইখতিলাফ বা মতভেদকে সম্মান জানালেও অন্ধ অনুসরণ (তাকলিদ) থেকে বিরত থাকতে বলে।

কোন পথ সবচেয়ে সহিহ?

এ প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে কার কী দৃষ্টিভঙ্গি। যারা কোরআন ও হাদিসকে সরাসরি মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণ করতে চান, তারা সালাফি মানহাজকে সবচেয়ে কাছাকাছি মনে করেন। কোরআনেও বলা হয়েছে:

আর যদি তোমরা কোনো বিষয়ে মতভেদ কর, তবে তা আল্লাহ রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাওযদি তোমরা আল্লাহ পরকালে বিশ্বাস করো। (সূরা আন-নিসা: ৫৯)

অর্থাৎ দ্বীনের কোনো বিষয়ে মতভেদ হলে কোরআন ও রাসূলের সুন্নাহই চূড়ান্ত মানদণ্ড। এটাই সালাফি দৃষ্টিভঙ্গির মূল ভিত্তি।

তবে কি চার মাজহাব ভুল?

না, চার মাজহাব ভুল নয়। তারা ইসলামি চিন্তার ধারায় মহান আলেমদের নিরলস পরিশ্রমের ফল। সালাফি দৃষ্টিভঙ্গি একে অস্বীকার করে না, বরং অন্ধ অনুসরণের বিরুদ্ধে কথা বলে। সহিহ হাদিসের বিরুদ্ধে কোনো ফিকহি মত থাকলে সেটি পরিত্যাগ করার পক্ষেই তারা অবস্থান নেয়।

বর্তমানে যারা সালাফি মানহাজ অনুসরণ করেন, তারা সরাসরি কোরআন ও সহিহ হাদিসভিত্তিক আমলকে প্রাধান্য দেন। তবে একে অন্য মতবাদ বা মাজহাবকে অবজ্ঞা না করে, পরস্পরের মাঝে সম্মান বজায় রাখা জরুরি। ইসলাম একতা ও সৌহার্দ্যের ধর্ম। কোরআন ও সুন্নাহকেই সবার উপরে রাখলে মতভেদ নয় বরং ঐক্যই প্রতিষ্ঠিত হবে—এটাই ইসলামের মূল শিক্ষা।

জরুরী বার্তা:
পাঠকের জন্য মনে রাখা জরুরি, সালাফি মানহাজ মানেই কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী নয়; এটি একটি চিন্তাধারা। কোরআন ও রাসূলের সহিহ হাদিসের আলোকে ধর্মচর্চাই যার মূলভিত্তি।

প্রস্তুতকারী: মোঃ জামাল হোসেন (ন্যাশনাল গার্লস মাদরাসা ফেনী, শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালক)
বিষয়: ইসলাম চিন্তাধারা বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *