
নিজস্ব প্রতিবেদন:
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় তাৎক্ষণিক, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপিত হয় গতকাল বুধবার (৪ জুন)। তবে প্রস্তাবটি পাশ হতে পারেনি, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতে ভেটো দেয়। যদিও নিরাপত্তা পরিষদের বাকি ১৪টি দেশই প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয়।
এই খসড়া প্রস্তাবে গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির আহ্বানও ছিল। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তা অপ্রাসঙ্গিক আখ্যা দিয়ে জানায়, যুদ্ধবিরতির দাবি ও বন্দিমুক্তির বিষয়টি একে অপরের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ডরোথি শিয়া নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে এবং হামাসকে পরাজিত করা তাদের অধিকারভুক্ত।’
অন্যদিকে, চীনের রাষ্ট্রদূত অভিযোগ করেন, “ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করছে, অথচ কেউ তাদের জবাবদিহির আওতায় আনছে না।”
আল জাজিরার বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেন, “মার্কিন ভেটো পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলেছে। ইসরায়েল আত্মরক্ষার নামে গাজায় অবরোধ ও দখলদারিত্ব চালিয়ে যাচ্ছে।”
২৪ ঘণ্টায় নিহত আরও ৯৫ জন, আহত ৪৪০
গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৪৪০ জন। দেইর এল-বালাহ থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, গাজা জুড়ে নিরবিচারে হামলা চলছে।
এদিকে ইসরায়েল সতর্ক করে দিয়েছে—ত্রাণ সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত রুট কেউ ভাঙলে, সেই এলাকা যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হবে এবং একদিনের জন্য ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ রাখা হবে।
এই সতর্কতার মাঝেই, রিম আল-আখরাস নামে এক ফিলিস্তিনি নারী ইসরায়েলি গুলিতে নিহত হন। তার পরিবার জানিয়েছে, তিনি খাবার সংগ্রহে গিয়েছিলেন। ইসরায়েল বলছে, যারা নির্ধারিত রুট ভেঙে বেরিয়ে আসেন, তাদের গুলি করা হয়।
তবে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বলছে, ইসরায়েলের নতুন ত্রাণ বিতরণ পদ্ধতি মানবিক নীতিমালা লঙ্ঘন করছে এবং ত্রাণ কার্যক্রম সামরিকীকরণ করা হচ্ছে।
‘সব ক্রসিং খুলে দিন’—জাতিসংঘের আহ্বান
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, “সব ক্রসিং খুলে দিন, যাতে জীবন রক্ষাকারী ত্রাণ সহজে প্রবেশ করতে পারে।”
এছাড়া, ইউনিসেফের মুখপাত্র জানিয়েছেন, “গাজায় শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে, হাসপাতালে এবং রাস্তায় কাঁদছে খাবারের জন্য।”
যুদ্ধের শুরু থেকে নিহত ৫৪,০০০, অধিকাংশ নারী ও শিশু
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর এ পর্যন্ত ৫৪,০০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এই মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেই চলতে থাকা যুদ্ধবিরোধী প্রস্তাবে পুনরায় মার্কিন ভেটো বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা