
নিজস্ব প্রতিবেদক:
পবিত্র ঈদুল আযহা মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। প্রতি বছর এই ঈদে কুরবানি দেওয়ার পাশাপাশি অনেকেই গ্রামে যান, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটান। ফলে শহরের একটি বড় অংশের মানুষ ৫-৭ দিনের জন্য বাসাবাড়ি ফাঁকা রেখে যান। আবার যারা শহরে থেকে যান, তাদের জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা।
এমন সময়ে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের কিছু বিষয় বিশেষভাবে মনে রাখা উচিত, যা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র—সব কিছুর স্বার্থেই গুরুত্বপূর্ণ।
১. নিরাপত্তা:ঈদের ছুটিতে অনেকেই গ্রামের বাড়িতে যান, ফাঁকা পড়ে থাকে শহরের বাড়ি-ঘর। এ সময় বাড়তি সতর্কতা জরুরি। বাসার তালা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিকঠাক আছে কি না তা পরীক্ষা করুন। পড়শিদের জানিয়ে যান, যাতে কোনো সন্দেহজনক কিছু হলে তারা নজর রাখতে পারেন। সিসিটিভি বা অ্যালার্ম সিস্টেম থাকলে সক্রিয় করে রাখুন। মূল দরজা ও জানালার লক নিরাপদভাবে বন্ধ করুন। বাসায় থাকা গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও মূল্যবান সামগ্রী নিরাপদ স্থানে রাখুন বা আত্মীয়ের বাসায় দিয়ে যেতে পারেন।
২. বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দীর্ঘ সময়ের জন্য ঘর ফাঁকা রেখে যাওয়ার সময় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ অবশ্যই করতে হবে। গ্যাসের মেইন লাইন বন্ধ করে দিন। ফ্রিজে কোনো পচনশীল খাবার রেখে যাবেন না। প্রয়োজনীয় নয় এমন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির প্লাগ খুলে রাখুন। ওয়াটার মোটর, গিজার, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিন।
৩. যারা শহরে থাকেন, তাদের কোরবানির পশু কেনা ও সংরক্ষণের সময় কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরি। গরমে পশুকে ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখুন এবং পানি পর্যাপ্ত দিন। পশুর চারপাশ পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখুন। সরকার নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দিন, বাসার সামনে বা খোলা জায়গায় নয়। ইউরিয়া বা অন্য রাসায়নিক দিয়ে হৃষ্টপুষ্ট করা পশু এড়িয়ে চলুন।
৪. কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিশেষ করে শহরের অবস্থা অনেক নাজুক থাকে। আমাদের সচেতনতা খুবই জরুরী। ঈদুল আযহার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক দায়িত্ব হলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। কোরবানির পরপরই মাংস আলাদা করে দ্রুত বর্জ্য নির্ধারিত স্থানে ফেলার ব্যবস্থা করুন। পলিথিন বা খোলা জায়গায় ফেলে না রেখে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বা স্থানীয় পৌরসভার নির্ধারিত ব্যাগে বর্জ্য সংগ্রহ করুন। নিজে সাফসুতরা রাখুন এবং প্রতিবেশীকেও উদ্বুদ্ধ করুন। বর্জ্য ফেলার পর জায়গাটিতে ব্লিচিং পাউডার, জীবাণুনাশক বা চুন ছিটিয়ে দিন। স্থানীয় প্রশাসনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগে অংশগ্রহণ করুন।
৫. পশু পরিবহন ও জনদুর্ভোগ এর বিষয়ের সকলের সচেতন থাকা উচিৎ। পশু আনা-নেওয়ার সময় রাস্তার পরিবেশ ও মানুষের চলাচলের বিষয়টি খেয়াল রাখুন। পশু রাস্তায় বা ফুটপাথে না বেঁধে নির্ধারিত স্থানে রাখুন।
৬. প্রতিবেশী ও গরিবদের প্রতি দায়িত্ব সকলের কাম্য। কোরবানির মূল শিক্ষা হলো আত্মত্যাগ ও সমাজসেবার মানসিকতা। তাই কেবল নিজের পরিবারের জন্য নয়, দরিদ্র প্রতিবেশী, খেটে খাওয়া মানুষদেরও অংশ দিন। বিতরণে সৌজন্য ও সম্মান বজায় রাখুন। কারও আত্মসম্মানে আঘাত লাগে এমন আচরণ এড়িয়ে চলুন।
৭. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সচেতনতা। কোরবানির পশুর ছবি বা ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশে সংযত থাকুন। এটি অনেকের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে, আবার ধর্মীয় অনুভূতিও আঘাত পেতে পারে। কোরবানির মূল উদ্দেশ্য দেখানো নয়, বরং তা পালন করা—এই উপলব্ধি গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
ঈদুল আযহা শুধু আনন্দ আর উৎসবের দিন নয়, এটি দায়িত্বশীলতা, পরিচ্ছন্নতা, সামাজিক সচেতনতা ও আত্মত্যাগের শিক্ষা দেয়। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে নিজের করণীয়গুলো যথাযথভাবে পালন করলেই আমাদের সমাজ, শহর এবং পরিবেশ হয়ে উঠবে আরও শান্তিপূর্ণ, স্বাস্থ্যকর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ।