Tuesday, May 13
Shadow

কৃষ্ণচূড়ার রঙে রঙিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়  ক্যাম্পাস

রাকিবুল ইসলাম, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা  : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বসন্তের শেষে এসে কৃষ্ণচূড়া ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। এই উজ্জ্বল লাল-কমলা ফুলের সমারোহ ক্যাম্পাসের পরিবেশকে আরও মনোরম ও প্রাণবন্ত করে তুলেছে। প্রতি বছরের মতো এবারও মে মাসের শুরুতে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটা শুরু হয়েছে, যা শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও দর্শনার্থীদের মনে আনন্দের জোয়ার এনেছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে থাকা বড় বড় কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো এখন ফুলে ফুলে ভরে গেছে। সকালে সূর্যের আলো যখন ফুলের পাপড়িতে পড়ে, তখন পুরো এলাকা যেন আগুনের শিখার মতো জ্বলে ওঠে। গাছের নিচে ঝরে পড়া ফুলের পাপড়ি মাটিতে একটি রঙিন গালিচা তৈরি করেছে, যা ক্যাম্পাসের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে শুরু করে শহীদ মিনার, লাইব্রেরির সামনে সর্বত্রই কৃষ্ণচূড়ার এই রঙিন উপস্থিতি ক্যাম্পাসকে একটি প্রাকৃতিক শোভা দিয়েছে।

পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আখিরুজ্জামান মন্ডল  জানান, “কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় ক্যাম্পাসে এসে মনটা ভালো হয়ে যায়। এই ফুলের রঙ আর সৌন্দর্য আমাদের পড়াশোনার ক্লান্তি দূর করে দেয়। এছাড়া, ফটোগ্রাফি ক্লাবের সদস্য অরিন বলেন, “এই কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য ধরে রাখতে আমরা প্রতিদিন ছবি তুলছি। এই ফুল ক্যাম্পাসকে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ দিয়েছে।”

কৃষ্ণচূড়া ফুল শুধু সৌন্দর্যের জন্যই নয়, পরিবেশের জন্যও উপকারী। এই গাছগুলো ক্যাম্পাসে ছায়া প্রদান করে এবং গরমের সময় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক জানান, “কৃষ্ণচূড়া গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং শহরাঞ্চলে সবুজায়নের জন্য উপযুক্ত। তবে, এই গাছের যত্ন নেওয়া এবং সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন।”

ক্যাম্পাসে কৃষ্ণচূড়ার এই রঙিন উৎসব দেখতে সবাই অবকাশ ভবনে উঠেন,সেখান থেকে  দৃষ্টিগোচর হয় পুরো সৌন্দর্য। অনেকে এ সৌন্দর্য ক্যামেরায় ধরে রাখছেন, আবার কেউ কেউ অবকাশ ভবনের পাশে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ক্যাম্পাসে আরও কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণের পরিকল্পনা করছে, যাতে ভবিষ্যতে এই সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পায়।

কৃষ্ণচূড়ার ফুল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসকে শুধু সুন্দরই করেনি, বরং এটি শিক্ষার্থীদের মনে একটি প্রাকৃতিক স্নিগ্ধতা এনেছে। এই ফুলের রঙিন উপস্থিতি ক্যাম্পাসের প্রাণচাঞ্চল্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে।

জানা যায়  জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের কৃষ্ণচূড়া গাছগুলোর অধিকাংশই কলেজ থাকাকালীন সময়ে রোপণ করা হয়। এছাড়াও একাডেমিক ভবন ও দ্বিতীয় ফটকের গাছগুলো ২০০৮ সালের পর লাগানো হয়েছে। অন্যান্য গাছগুলো কখনো শিক্ষার্থীরা আবার কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয়েছে ।

উল্লেখ্য প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্য

কৃষ্ণচূড়া ফুল বাংলাদেশের প্রকৃতির একটি অপূর্ব সৌন্দর্যের প্রতীক। এর বৈজ্ঞানিক নাম Delonix regia, এবং এটি Fabaceae পরিবারের একটি সদস্য। ইংরেজিতে এই ফুলকে “Royal Poinciana” বা “Flame Tree” বলা হয়, কারণ এর উজ্জ্বল লাল-কমলা রঙ আগুনের শিখার মতো দেখায়। এই গাছটি মূলত মাদাগাস্কারের স্থানীয়, তবে বর্তমানে এটি বিশ্বের গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপগ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ব্যাপকভাবে জন্মে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *